ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দুর্নীতির মামলা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার পর দেশজুড়ে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষমা আবেদনের জবাবে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগ তিনটি জটিল সম্ভাবনার মুখোমুখি হয়েছেন। যে পথই তিনি বেছে নিন, কারও না কারও অসন্তোষ অবশ্যম্ভাবী।
রোববার নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে চলমান দুর্নীতির মামলাগুলোর জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চান। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু ইসরাইলি আইনে দোষ স্বীকার ছাড়া ক্ষমা দেওয়ার সুযোগ নেই—যা এই আবেদনের অনুমোদনকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
এদিকে দেশটি কার্যত নির্বাচনী বছরে প্রবেশ করেছে; আগামী অক্টোবরে ভোট হওয়ার কথা, যদি আগাম নির্বাচন না ডাকা হয়।
ইসরাইল হায়োমের বিশিষ্ট বিশ্লেষক বিনি আশকেনাজি বলেন, “নেতানিয়াহুর ক্ষমা প্রার্থনা রাজনৈতিকভাবে হিসাব করা পদক্ষেপ। তিনি জানেন, অনুমোদনের সম্ভাবনা কম, তবে এতে জনআলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হারেদিমের খসড়া-ছাড় আইন থেকে সরে ক্ষমা প্রসঙ্গে চলে আসবে—যা রাজনৈতিকভাবে তাকে সাহায্য করবে।”
প্রথম সম্ভাবনা: আবেদন প্রত্যাখ্যান
আশকেনাজির মতে, সবচেয়ে দ্রুত সমাধান হলো ক্ষমা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা। বিরোধী দলগুলোর অবস্থান পরিষ্কার—দোষ স্বীকার ও রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া ক্ষমা নয়।
এতে বিরোধীরা সন্তুষ্ট হলেও লিকুদ জোট ও মিত্র দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হবে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা: আবেদন মঞ্জুর করা
ক্ষমা অনুমোদন করা হলে নেতানিয়াহুর দল ও মিত্ররা খুশি হবে। এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ১২ নভেম্বর হার্জগকে চিঠি পাঠিয়ে ক্ষমা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন, যা ইসরাইলি বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, অনুমোদিত হলে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগীয় সংস্কারবিরোধী আন্দোলনের চেয়েও বড় বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে।
তৃতীয় সম্ভাবনা: “শর্তসাপেক্ষ ক্ষমা”
ইসরাইল হায়োমের আরেক বিশ্লেষক এলিয়ানর কফম্যান বলেন, হার্জগের কাছে তৃতীয় একটি পরিস্থিতি উপলব্ধ থাকতে পারে - একটি সমঝোতায় পৌঁছানো। হার্জগ শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা মঞ্জুর করতে পারেন। যেমন—নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর; ৭ অক্টোবর (২০২৩) হামলার ওপর সরকারি তদন্ত; বিতর্কিত বিচার ও গণমাধ্যম সংস্কার বিল প্রত্যাহার।
ইসরাইলি সরকারি সম্প্রচারক কানের তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের দপ্তর মনে করে যে শর্ত ছাড়া ক্ষমা মিলবে না। সম্ভাব্য শর্তের মধ্যে নেতানিয়াহুর পদত্যাগ—অস্থায়ী হলেও—এবং বিচার সংস্কার স্থগিত করার বিষয় থাকতে পারে। তবে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন না।
নেতানিয়াহু-সমর্থিত চ্যানেল ১৪ দাবি করেছে, হার্জগ হয়তো দোষ স্বীকার না করিয়েই ক্ষমা দিতে রাজি হতে পারেন—তবে আবেদনের ভাষায় কিছু পরিবর্তন চাইতে পারেন।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি দুই মাসও লাগতে পারে।
নেতানিয়াহুর যেসব মামলা রয়েছে
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলছে তিনটি মূল দুর্নীতি মামলা—১০০০, ২০০০ ও ৪০০০:
কেস ১০০০: ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিলাসদ্রব্য গ্রহণের বিনিময়ে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ।
কেস ২০০০: ইয়েদিওথ আহরোনথ পত্রিকার প্রকাশকের সঙ্গে সুবিধাজনক কভারেজ পাওয়ার জন্য কথিত সমঝোতা।
কেস ৪০০০: সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ—ওয়ালা নিউজ ও বেজেক মালিক শাউল এলোভিচকে নিয়ন্ত্রক সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে ইতিবাচক কভারেজ আদায়।
এছাড়া গাজায় ব্যাপক বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, যেখানে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৭০,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে—যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
তথ্যসূত্র: আনাদলু এজেন্সি
এসআর

