যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ভেনেজুয়েলার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। সোমবার মস্কো জানায়, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর তৎপরতা ও তেলবাহী ট্যাংকার আটকানোর ঘটনায় ভেনেজুয়েলার প্রতি রাশিয়ার রয়েছে “পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি”।
এই ঘোষণাটি আসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগের দিন, যেখানে ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে বাড়তে থাকা সংকট নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিলের মধ্যে এক টেলিফোন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করা হয়। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যারিবীয় সাগরে ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক নৌপরিবহন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করতে পারে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি রাশিয়া তার পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি পুনর্ব্যক্ত করছে।”
গত সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে এমন সব নৌযানে হামলা চালাচ্ছে, যেগুলোকে তারা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করছে—যদিও এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি। এসব অভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে জেলেও ছিলেন বলে পরিবার ও সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর দাবি।
এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্ত “নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেলবাহী জাহাজের” ওপর কার্যত অবরোধ ঘোষণা করেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার তেল বিক্রির অর্থ ব্যবহার করছে “মাদক সন্ত্রাস, মানবপাচার, হত্যা ও অপহরণে”। তিনি আরও দাবি করেন, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের “সব তেল নিয়ে নিয়েছে” এবং বলেন, “আমরা তা ফেরত চাই।”
অন্যদিকে, কারাকাস এই পদক্ষেপকে “আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা” আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। রুশ বিবৃতিতে জানানো হয়, লাভরভ ও গিল জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একসঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন, যাতে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি রক্ষা করা যায়। রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে যে “আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন” করছে—জাহাজে হামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অবৈধ জলদস্যুতা—তা নিয়ে তিনি লাভরভের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, লাভরভ এসব “শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ডের” মুখে ভেনেজুয়েলার প্রতি রাশিয়ার পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রাশিয়ার এই অবস্থানকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো উত্তেজনা নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন নয়, কারণ “ইউক্রেন যুদ্ধেই তাদের হাত ভরা।”
এদিকে প্রেসিডেন্ট মাদুরো জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশে পাঠানো এক চিঠিতে সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তেল অবরোধ বৈশ্বিক জ্বালানি ও তেল সরবরাহে প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: আল আরাবিয়া
এসআর
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

