যুদ্ধবিরতির এক বছর পূর্তির দিনেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে নতুন অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবারের এই অভিযানে লিতানি নদীর উত্তরে আল-মাহমুদিয়া ও আল-জারমা এলাকায় ধারাবাহিক হামলার খবর দিয়েছে লেবাননের রাষ্ট্রীয় জাতীয় সংবাদ সংস্থা।
গত বছরের ২৭ নভেম্বর ঘোষিত যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য ছিল দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের সংঘাত প্রশমিত করা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইসরাইল হিজবুল্লাহর ঘাঁটি, সদস্য ও অবকাঠামোকে টার্গেট করে একাধিক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, হিজবুল্লাহকে অস্ত্র উৎপাদন ও মজুদ থেকে বিরত রাখতেই এসব আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের হামলার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনা, অস্ত্রভাণ্ডার ও লঞ্চ সাইট ধ্বংস করা হয়েছে। বাহিনী জানায়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য তারা যেকোনো হুমকি দূর করতে কাজ অব্যাহত রাখবে।
ইসরাইলের দাবি, যুদ্ধবিরতির পর থেকে তারা প্রায় ১ হাজার ২০০টি হামলায় হিজবুল্লাহ, হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর ৩৭০ জনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে এবং হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী, হিজবুল্লাহকে ইসরাইল সীমান্ত থেকে অন্তত ৩০ কিলোমিটার দূরে, লিতানি নদীর উত্তরে অবস্থান নিতে ছিল এবং দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক স্থাপনা অপসারণ করতে হতো। লেবানন সরকার অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনাবাহিনী বছরের মধ্যে ওই এলাকায় হিজবুল্লাহর অবকাঠামো অপসারণের কাজ করছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম পরিস্থিতিকে ‘একতরফা যুদ্ধের ধারাবাহিকতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী অস্ত্র জব্দ, টানেল পরিদর্শন এবং সশস্ত্র প্রদর্শন ঠেকানোর কাজ করছে। তিনি জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারী জিনাইন হেনিস-প্লাসচার্টকে জানান, যুদ্ধবিরতির এক বছর পরেও পরিস্থিতি অনিশ্চয়তায় রয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিল জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে তারা নিয়মিতভাবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চালাচ্ছে এবং গত এক বছরে যুদ্ধবিরতির ১০ হাজারেরও বেশি লঙ্ঘন নথিবদ্ধ করেছে, যা সীমান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
সপ্তাহের শুরুতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকলে লেবাননে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। এরই মধ্যে রোববার বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে এক হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহর সিনিয়র কমান্ডার হাইথাম আলী তাবাতাবাই—যুদ্ধবিরতির পর এ ধরনের সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের হতাহতের ঘটনা এটি।
এসআর

