ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসের একটি আলোকোজ্জ্বল সড়কে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও হাসিতে মেতে উঠেছেন ১৮ বছর বয়সী অ্যাথলেট মারিয়া আব্রু। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কা ভুলে থাকতেই বাইরে সময় কাটাচ্ছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে অভ্যস্ত হয়ে পড়া ভেনেজুয়েলার মানুষ উদ্বেগ থেকে মুক্ত থাকতে নানা রকম মানসিক কৌশল রপ্ত করেছে। মারিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আর ভাবতে চান না। তার ভাষায়, “যা হওয়ার হবে, আমরা তো দিন এনে দিন খাই।”
গত কয়েক মাস ধরে অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে দেশটির মানুষের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। মাদক পাচারের অভিযোগে জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকার জব্দের ঘটনাও ঘটছে। এসব পদক্ষেপে ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দাবি করেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এসব তৎপরতা চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, যেকোনো সময় আকাশপথে হামলা বা সামরিক আগ্রাসন শুরু হতে পারে। ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর গ্রেপ্তারের ভয় থাকায় এসব বিষয় নিয়ে মানুষ এখন প্রকাশ্যে কথা বলতেও সতর্ক।
জনগণের ‘সুখী থাকার অধিকার’ রক্ষার কথা বলে মাদুরো গত অক্টোবর থেকেই বড়দিনের উৎসব শুরুর ঘোষণা দেন। তিনি নিয়মিতই দেশবাসীকে উৎসবে মেতে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তাকে নাচতেও দেখা যাচ্ছে।
কারাকাসের ঐতিহাসিক ‘পাসিও লস প্রসেরেস’ এলাকা এখন আলোয় ঝলমল করছে। সেখানে মানুষ ছবি তুলছে, পরিবার নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। তবে এই উৎসবের আড়ালে দেশের বড় অংশ প্রতিদিন তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে অন্ধকারে ডুবে থাকে।
শপিংমলগুলোতেও ভিড় দেখা গেলেও লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির কারণে অধিকাংশ মানুষের কেনার সামর্থ্য নেই। ফলে কেনাকাটার চেয়ে জানালা দিয়ে পণ্য দেখা আর ঘোরাঘুরিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে আনন্দ।
মনোবিজ্ঞানী ইয়োরেলিস অ্যাকোস্তা জানান, দীর্ঘ সংকট মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। অনিদ্রা, উদ্বেগ ও হতাশার কারণে অনেকেই বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াকেই বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
এদিকে একটি বেসবল স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দর্শকরা। ৫২ বছর বয়সী দোকানদার মাগদা অ্যাকোস্তা বলেন, “দেশের অবস্থা ভালো নয়, কিন্তু এখানে এলে কিছুক্ষণের জন্য সব ভুলে থাকা যায়।”
রাজনীতি থেকেও পুরোপুরি মুক্ত নন দর্শকরা। ৬৬ বছর বয়সী লুইস এনরিক আলবারান মার্কিন পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ভেনেজুয়েলার সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অধিকার নেই। অন্যদিকে ৩৮ বছর বয়সী কার্লেইমি গঞ্জালেজ বলেন, সবকিছু তিনি ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন—সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই যা হওয়ার হবে।
এসআর
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

