চীনে এসসিও সম্মেলনে যোগ দিলেন পুতিন ও মোদি

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ২৯
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৩৬

চীনের তিয়ানজিন শহরে শুরু হয়েছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন। অংশ নিয়েছেন রাশিয়া ও ভারতের রাষ্ট্রনেতাসহ ইউরেশিয়ার ২০টির বেশি দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর আমন্ত্রণে আয়োজিত এই সম্মেলন চলবে সোমবার পর্যন্ত।

চীনের উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী তিয়ানজিনে আয়োজিত এই সম্মেলন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসসিও সম্মেলনের ঠিক কয়েকদিন পর বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হবে এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ।

বিজ্ঞাপন

এসসিও’র পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ। এছাড়া আরও ১৬টি দেশ পর্যবেক্ষক ও সংলাপ সহযোগী হিসেবে এতে যুক্ত।

রোববার তিয়ানজিনে পৌঁছান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তার সঙ্গে ছিলেন দেশটির শীর্ষ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শনিবার পৌঁছান, যা ২০১৮ সালের পর তার প্রথম চীন সফর।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, সি চিন পিং-এর সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন মোদি। পাশাপাশি পুতিনও সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিলিত হবেন। আলোচনায় থাকবে ইউক্রেন সংঘাত ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি।

চীন ও রাশিয়া এসসিও-কে প্রায়ই ন্যাটোর বিকল্প হিসেবে তুলে ধরে থাকে। বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেইজিং ও মস্কো এসসিও-এর মতো প্ল্যাটফর্মকে নিজেদের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যবহার করছে।

চীনের একাধিক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এসসিও এখন পশ্চিমা-বহির্ভূত দেশগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় জোট হয়ে উঠছে। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডিলান লো মনে করেন, চীন দীর্ঘদিন ধরে এই জোটকে একটি "পশ্চিমাবিরোধী ক্ষমতাধর জোট" হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

শনিবার সিনহুয়াতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, এসসিও আজকের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। এটি ইউরেশিয়ায় সংহতি ও বহুমুখী শক্তি ভিত্তিক একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মধ্যেই চীন ও রাশিয়া এসসিও-কে নিজেদের কৌশলগত স্বার্থে ব্যবহার করছে। চীন এটিকে সার্বভৌমত্ব, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গঠিত একটি বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা হিসেবে তুলে ধরছে।

রাশিয়া বর্তমানে ভারতকেও নিজেদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আরও ঘনিষ্ঠ করতে চাইছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক উত্তেজনার সুযোগ নিচ্ছে মস্কো। উল্লেখযোগ্য যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে।

উল্লেখ্য, চীন ও ভারতের মধ্যে ২০২০ সালে সীমান্তে এক প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে মোদী ও সি-এর সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে কিছুটা বরফ গলতে শুরু করে।

চীনের বৃহৎ কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত এই সম্মেলনে ইরান, তুরস্ক, কম্বোডিয়া, কিরগিজস্তানসহ একাধিক দেশের শীর্ষ নেতারা অংশ নিয়েছেন। এসসিও-কে ঘিরে এই বৃহৎ উপস্থিতি চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাবেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত