আই লাভ মুহাম্মদ বলায় ভারতে মুসলিমদের ওপর দমন-নিপীড়ন

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৪০

ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি শিল্পনগরী এলাকা কানপুর। গত ৪ সেপ্টেম্বর কানপুরের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা সৈয়দ নগরে ঈদে মিলাদুন্নবি উদ্‌যাপন উপলক্ষে সন্ধ্যায় একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।

‘আলোকসজ্জা করা সেই সাইনবোর্ডে লেখা ছিল: ‘আই লাভ মুহাম্মদ’। অর্থাৎ আমি মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.)-কে ভালোবাসি। আর ভালোবাসার প্রতীক হিসেব সেখানে লাল রঙের একটি হার্ট চিহ্নও আঁকা ছিল।

বিজ্ঞাপন

বিগত বছরগুলোর মতোই কানপুরের সৈয়দ নগরের শ্রমজীবী বাসিন্দারা বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মতোই উদ্‌যাপন করছিলেন ঈদে মিলাদুন্নবি। আর এবারই প্রথমবারের মতো তারা সাজসজ্জার অংশ হিসেবে ওই সাইনবোর্ডটি টাঙান।

সেদিন রাতে সৈয়দ নগরে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ শব্দগুলো সাইনবোর্ডে জ্বলে ওঠার পর পরই কিছু হিন্দু পুরুষ এসে এর বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেন। পুলিশ ডাকা হয় এবং কয়েক ঘণ্টা বিশৃঙ্খলার পর সেই রাতেই সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়।

ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ করা হয়। বিদ্বেষপূর্ণ কাজের অভিযোগে সৈয়দ নগরের ৯ জন মুসলিম পুরুষ ও অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। যদিও মামলায় এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

সৈয়দ নগরের বাসিন্দা মোহিত বাজপেয়ী তিনি শ্রী রামনবমী সমিতি নামক একটি হিন্দু দলের সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমি মুহাম্মদকে ভালোবাসি’ লেখাটির প্রতি তাদের কোনো আপত্তি নেই, তবে হিন্দু উৎসবের জন্য নির্ধারিত স্থানে সাইনবোর্ডটি স্থাপনের কারণেই তারা এই আপত্তি তুলেছেন।

তবে সৈয়দ নগরের মুসলিম বাসিন্দারা বলেন, সাইনবোর্ডটি এমন এক উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয়েছিল, যেখানে তারা প্রতিবছরই ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উদ্‌যাপনের জন্য জড়ো হন।

সৈয়দ নগরের ২৮ বছর বয়সী এক বাসিন্দা বলেন, ‘সাজসজ্জার জন্য আমাদের কাছে সরকারি অনুমতি ছিল। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকের ধর্ম পালনের অধিকার আছে।’পুলিশ তার বিরুদ্ধেও একটি মামলা করেছে। তিনি সরকারে ভয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।

কানপুরের ঘটনার কয়েক দিন পরে উত্তর প্রদেশের আরেক শহর বেরেলিতে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে।

মুসলিম গোষ্ঠী ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের (আইএমসি) প্রধান ও বেরলভি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আহমেদ রেজা খানের উত্তরসূরি মাওলানা তৌকির রেজা খান গত ২১ সেপ্টেম্বর বেরেলি ও কানপুরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন এবং পরের শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে একটি মাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান তিনি।

২৬ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর হাজার হাজার মুসলিম বেরেলির একটি প্রখ্যাত মাজারের আশপাশে জড়ো হন। তাদের হাতে ছিল ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা পোস্টার। এ সময় তারা কানপুরে পুলিশি ভূমিকার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

সমাবেশের অনুমতি ছিল না বলে অভিযোগ করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে এবং তৌকির রেজা খানসহ অনেক মুসলিমকে গ্রেপ্তার করে। শহরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তারের আগে তৌকির রেজা খান ভিডিও বার্তায় বলেন, ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমনের লক্ষ্যেই এ অভিযান আর ধর্মীয় অনুভূতি দমনের এই চেষ্টা ভালো ফল বয়ে আনবে না।’

মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) বলেছে, ভারতের বিভিন্ন স্থানে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ সংক্রান্ত প্রচারণাকে কেন্দ্র করে অন্তত ২২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

এপিসিআরের সাধারণ সম্পাদক নাদিম খান আল–জাজিরাকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ নবী (সা.)–এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে লেখা স্লোগানকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে এবং এটিকে উসকানিমূলক হিসেবে বর্ণনা করছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন আইনিপ্রক্রিয়া না মেনে মামলা দায়ের এবং অভিযুক্তদের সম্পত্তি উচ্ছেদ করছে। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর গুরুতর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে।’

সূত্র: আল জাজিরা

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

দেশে মুক্তি পাচ্ছে জাপানি অ্যানিমে সিরিজ, শিশুদের দেখা নিষেধ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত