দুদিনের সফরে ভারতে এসেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছান তিনি। সেখানে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দেন তিনি। রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার জন্য দিল্লির ওপর আমেরিকার ক্রমাগত চাপের মধ্যেই এ সফরে আসেন পুতিন।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ভারতে এসেছেন এই রুশ নেতা। এ সফরে সঙ্গে আছেন তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভসহ একটি প্রতিনিধিদল। তার এ সফরে মূলত তেল ও অস্ত্র বিক্রির ওপরই আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি সম্পর্ক জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্কারোপের পর ভারত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন জোরদার করার জন্য সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপ নিয়েছে।
মূলত শুক্রবার থেকে শুরু হবে দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক। তবে ভারতে পৌঁছানোর আগেই মস্কোর পার্লামেন্টে ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের সামরিক বাহিনী একে অপরকে লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দেবে। অর্থাৎ এক দেশের বাহিনী অপর দেশে গিয়ে সামরিক পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে।
সফর শুরুর ঠিক আগেই পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে রাশিয়া কতটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, তা নির্ভর করছে ভারত কতটা এগিয়ে আসতে চায় তার ওপর। এ সফরে রাশিয়ার উন্নত এস-৪০০ বিমান কেনার বিষয়টি ‘এজেন্ডায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান’ পাবে। ভারতের কাছে বর্তমানে তিনটি এস-৪০০ বিমান রয়েছে। ২০১৮ সালে করা চুক্তি অনুযায়ী আরো দুটি বিমান সরবরাহ স্থগিত রয়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণেই এ স্থগিতাদেশ।
ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কো রাশিয়ার ‘এসইউ-৫৭’ যুদ্ধবিমানের সহ-উৎপাদনের প্রস্তাবও দিতে পারে। কারণ, ভারত বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারকদের মধ্যে একটি দেশ। ঐতিহাসিকভাবে তাদের অস্ত্র সরবরাহের অন্যতম প্রধান দেশ রাশিয়া। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দিল্লি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করেছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, রাশিয়া থেকে ভারতের অস্ত্র আমদানি ২০০৯-১৩ সালে ৭৬ শতাংশ থেকে কমে ২০১৯-২৩ সালে ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া রাশিয়ার জ্বালানি তেলের প্রধান ক্রেতাও ভারত। এ কারণে ভারতের ওপর নেমেছে ট্রাম্পের শুল্কের খড়্গ। তাই রাশিয়ার শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রোসনেফ্ট এবং লুকোয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার চাপে দিল্লি সম্প্রতি অপরিশোধিত তেল আমদানি কমিয়ে দিয়েছে।
মোদি সরকারের আশঙ্কা, রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে জ্বালানি বা প্রতিরক্ষা চুক্তি ট্রাম্পকে আরো বিরক্ত করতে পারে। ফলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যদিও পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নয়। তিনি বলেন, তাদের উদ্বেগের বিষয় হলো, তারা কীভাবে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বজায় রাখবে তা নিয়ে। মঙ্গলবার স্পুটনিক ইন্ডিয়া আয়োজিত ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের জন্য এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নন্দন উন্নিকৃষ্ণান এএফপিকে বলেছেন, আমেরিকার চাপের মুখে জ্বালানি কেনা কিছুটা কমতে পারে। তবে মিস্কো-দিল্লির সম্পর্কের সামগ্রিক দিক বজায় থাকবে।
দিল্লি মস্কোর ওপর ওষুধ, অটোমোবাইলস এবং পরিষেবা খাতসহ তার গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোর জন্য বাজার অ্যাক্সেস সম্প্রসারণের জন্য চাপ দিচ্ছে।

