দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় টানা কয়েকদিনের ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ২৫০-এর বেশি ছাড়িয়েছে বলে শুক্রবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে একটি ক্রান্তীয় ঝড়ের প্রভাবে তিন দেশের বিশাল এলাকাজুড়ে সৃষ্ট বন্যায় বহু মানুষ ঘরবাড়িতে আটকে পড়েছেন। অনেক এলাকা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। পশ্চিম সুমাত্রায় বন্যা ও ভূমিধসে এ সপ্তাহে অন্তত ১১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, আরও প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ।
৫৩ বছর বয়সী মিসনিয়াতি জানান, ভোরের নামাজ শেষে ফেরার পথে হঠাৎই তিনি রাস্তায় পানি দেখতে পান। তিনি বলেন, “দৌড়ে বাড়িতে ফিরে স্বামীকে জানাতে চেয়েছিলাম, তখন পানির স্তর কোমর পর্যন্ত। বাড়িতে পৌঁছে দেখি পানি বুক সমান। সারারাত ঘুমাইনি, শুধু পানি দেখেছি।”
এছাড়া আচেহ প্রদেশে বন্যার পানি নামলেও গাড়ির জানালার কাছ পর্যন্ত কাদা জমে আছে। অনেক ট্রাক ও যানবাহন আটকে পড়েছে।
দক্ষিণ থাইল্যান্ডে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। হাট ইয়াই এলাকায় উদ্ধার নৌকার জন্য অপেক্ষা করে অনেকে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে অন্তত ১৪৫ জন মারা গেছে বলে সরকারি মুখপাত্র সিরিপং আঙকাসাকুলকিয়াত জানিয়েছেন।
সংকলানাগারিন্দ হাসপাতালের মর্গে জায়গা না থাকায় লাশ সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটেড ট্রাক ব্যবহার করতে হচ্ছে। হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, “মর্গ পূর্ণ হয়ে গেছে, আরও ট্রাক দরকার।”
বন্যা মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে স্থানীয় দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় পেরলিস প্রদেশে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা মৌসুমি বৃষ্টি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধস ডেকে আনে। তবে এবারের পরিস্থিতিতে ক্রান্তীয় ঝড় আরও গুরুতর হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এই মৃত্যুহার অন্যতম সর্বোচ্চ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা, ঝড়ের স্থায়িত্ব ও শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উষ্ণ আবহাওয়া বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা আরও প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করে।
মালয়েশিয়ার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল স্টাডিজের জলবায়ু উপদেষ্টা রেনার্ড সিয়াও বলেন, “বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্ক করেছিলেন যে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চরম আবহাওয়া আরও ঘন হবে—আমরা ঠিক সেটাই দেখছি।”
এসআর

