কাতারের ‘উপহার’ নিয়ে ট্রাম্প কি তোপের মুখে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ০৯: ৪০
আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, ০৯: ৪৯
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে বিলাসবহুল একটি বিমান গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করায় আমেরিকার রাজনৈতিক বিভক্তির দুই প্রান্তের মানুষ একত্র হয়েছেন—তবে ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন । খবর বিবিসি।

ট্রাম্পের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা বহু মানুষই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান উপহার হিসেবে গ্রহণ করা কতটা গ্রহণযোগ্য। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও বিমানটি ভবিষ্যতে ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরির অংশ হতে পারে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যেও এ বিষয়ে নিজের পক্ষে অনেককে যুক্ত করতে পেরেছেন তিনি, যেটাকে তার জন্য বড় অর্জন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে হোয়াইট হাউসের জন্য অস্বস্তির বিষয় হলো, বিপক্ষেও বড় ঐক্য তৈরি হয়েছে।

কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে বিলাসবহুল বিমান নেয়ার ইঙ্গিত দেয়ার পর ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকেই ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। এমনকি চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার আগেই এ নিয়ে সমালোচনা করছেন তার অনেক কট্টর সমর্থকও।

প্রভাবশালী ইনফ্লুয়েন্সাররা (যারা বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত গঠন করেন) এই পদক্ষেপকে ‘ঘুস’, দুর্নীতি কিংবা উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করছেন, যেখানে অতীতে ট্রাম্প নিজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছেন বহুবার।

কাতারের রাজপরিবার ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিলাসবহুল বিমান, বোয়িং ৭৪৭-৮ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগকে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে, যা প্রেসিডেন্টের বিমান ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ বহরের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

বর্তমানে এই বহরে ১৯৯০ সাল থেকে ব্যবহৃত দুটি ৭৪৭-২০০ জেট এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ছোট এবং অপেক্ষাকৃত গোপনীয় ৭৫৭ বিমানও রয়েছে।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, নতুন বিমানটি-সংস্কার ও আপগ্রেড করতে বছরের পর বছর সময় লাগতে পারে এবং লাখ লাখ ডলার খরচ হতে পারে। তাই ট্র্রাম্পের মেয়াদ শেষে তা প্রেসিডেন্টের সংরক্ষণাগারে স্থানান্তর করা হবে। এ খবরটি সামনে আসতেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

রক্ষণশীল ডেইলি ওয়্যারের বক্তা বেন সাপিরো তার পডকাস্টে বলেন, ‘আমি মনে করি, বিষয়টি ‘ন্যক্কারজনক’। কাতার কেবল নিজেদের মনের খুশির জন্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিমানটি দিচ্ছে না, দ্বিপাক্ষিক উপায়ে নিজেদের পকেটে অর্থ ঢোকানোর চেষ্টাও রয়েছে তাদের।’

তিনি এবং অন্য অনেকে, কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পেছনে অর্থ ঢালার পুরোনো অভিযোগ তুলে ধরেন এবং কাতারিদের ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদের বৃহৎ সমর্থক’ বলেও অভিহিত করেছেন, যেসব অভিযোগ দেশটি অস্বীকার করে আসছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রভাবশালী আলোচক লরা লুমার, যিনি কিনা হোয়াইট হাউজের অপেক্ষাকৃত কম অনুগত শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন করছেন, তিনিও এই পদক্ষেপের সমালোচনা করার জন্য ট্রাম্পপন্থি বার্তাগুলির উন্মুক্ত প্রবাহকে দায়ী করেছেন।

প্রেসিডেন্টকে এখনো সমর্থন করার কথা বললেও বিমান চুক্তিকে তিনি ‘একটি দাগ’ হিসেবেই উল্লেখ করছেন। তিনি সশস্ত্র ইসলামপন্থি জঙ্গিদের দ্বারা পূর্ণ একটি বিমানের কার্টুন পোস্ট করেছেন যেটিকে ‘ট্রোজান হর্স’ বলে বোঝানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন দিনের মধ্যেপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক সফরের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার (১৩ মে) সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর এটি। সফরের প্রথম পর্যায়ে তিনি কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত