আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে ‘চরম হতাশ’ ট্রাম্প

আমার দেশ অনলাইন
রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে ‘চরম হতাশ’ ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষের প্রতি “চরম হতাশ” বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট। প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধ শেষ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন পরিকল্পনা দিয়েছে, সেটিতে ওয়াশিংটন এখনো ইউক্রেনকে বড় ধরনের ভূখণ্ডগত ছাড় দিতে চাপ দিচ্ছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ।

বিজ্ঞাপন

লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট এ যুদ্ধের উভয় পক্ষ নিয়েই অত্যন্ত হতাশ। তিনি আর কোনো আলোচনা চান না—তিনি চান পদক্ষেপ, এবং দ্রুত এই যুদ্ধের সমাপ্তি।”

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মূল অবস্থান তেমন পরিবর্তিত হয়নি। গত মাসে ওয়াশিংটন কিয়েভ ও মস্কোকে ২৮ দফার একটি পরিকল্পনা পাঠিয়েছিল, যা রাশিয়ার স্বার্থরক্ষায় বেশি সহায়ক বলে মনে করেছে ইউক্রেন।

জেলেনস্কির দাবি—ওয়াশিংটন এখনো ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছাড়তে বলছে। মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডনেতস্ক অঞ্চলের অংশবিশেষ থেকে কেবল ইউক্রেনের সেনাই সরে যাবে, আর সেখানে দুই সেনাবাহিনীর মাঝে একটি ‘অসামরিকীকৃত মুক্ত অর্থনৈতিক এলাকা’ তৈরি করা হবে।

মার্কিন প্রস্তাবে দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়া তার বর্তমান অবস্থান ধরে রাখবে। তবে দেশের উত্তরে যেসব অঞ্চল রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে দখল ঘোষণা করেনি, সেসব জায়গা থেকে কিছু সেনা সরাতে সম্মত হবে মস্কো।

মূল ২৮ দফা মার্কিন প্রস্তাব সংশোধন করে ইউক্রেন নিজস্ব ২০ দফার একটি পাল্টা পরিকল্পনা এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছে, যার পূর্ণ বিবরণ এখনো প্রকাশ হয়নি।

জেলেনস্কি বলেন, “দুইটি মূল বিষয়ে আমাদের মতভেদ—ডনেতস্কের ভূখণ্ড এবং জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র। এসব বিষয়ে আলোচনা চলবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “তারা (মার্কিন পক্ষ) মনে করছে ইউক্রেনই ডনেতস্ক অঞ্চল ছাড়বে, আর রাশিয়ান বাহিনী সেখানে ঢুকবে না—যা তারা এখন ‘মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ বলে ডাকছে।”

জেলেনস্কি আবারো বলেন, সংবিধান ও নৈতিকতার ভিত্তিতে তিনি কোনো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ছাড়তে পারেন না। তিনি বলেন, “ইউক্রেনের জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে—নির্বাচন বা গণভোটের মাধ্যমে।”

অমীমাংসিত প্রশ্ন

ডনেতস্কে একতরফাভাবে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের ধারণা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। “অন্য পক্ষ কেন সমান দূরত্বে পিছিয়ে যাবে না?” প্রশ্ন তুলেন জেলেনস্কি।

মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাশিয়া খারকিভ, সুমি ও দ্নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে দখল করা এলাকা ছাড়বে—যেগুলোকে মস্কো কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত বলে দাবি করেনি। তবে ২০২২ সালে রাশিয়া ডনেতস্ক, খেরসন, লুহানস্ক ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চল নিজেদের অংশ ঘোষণা করেছিল, যদিও পুরোটা এখনো দখলে নেই।

ডনেতস্কের প্রায় পাঁচভাগের একভাগ এখনো ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে এএফপির আইএসডব্লিউ ডেটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে।

পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের বহু এলাকা যুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে; লাখো মানুষ ঘরছাড়া এবং হাজার হাজার প্রাণহানি ঘটেছে।

রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ডনেতস্কে অগ্রগতি দাবি করছে। বৃহস্পতিবার তারা সিভেরস্ক শহর দখলের দাবি করে, যদিও ইউক্রেনীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এটি ইউক্রেন, তার জনগণ এবং ইউরো-অ্যাটলান্টিক নিরাপত্তার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।”

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লাইয়েন বৃহস্পতিবার জানান, “আগামী সপ্তাহ হবে নির্ণায়ক,” কারণ “টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত শান্তি” প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় বড় অগ্রগতি প্রয়োজন। তিনি বলেন, কোনো শান্তিচুক্তিই যেন ভবিষ্যৎ যুদ্ধের বীজ না বপন করে।

ট্রাম্প ইউরোপকে আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে প্রায় সরিয়ে রেখেছেন, বরং তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং সম্প্রতি জামাতা জ্যারেড কুশনারের মাধ্যমে মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলেনস্কির মতে, চুক্তির কাঠামো ক্রিসমাসের আগেই প্রস্তুত করতে চায় ওয়াশিংটন, যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক সময়সীমা নেই।

এদিকে কিয়েভে বৃহস্পতিবার দ্বৈত বিস্ফোরণে এক সেনাসদস্য নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। শহরের প্রসিকিউটর অফিস এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে সন্দেহ করছে।

সূত্র: এএফপি

এসআর

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন