আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু

আমার দেশ অনলাইন

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু

দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাসে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ব্যাপক ধ্বংস ও বাস্তুচ্যুতির মধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রম আংশিকভাবে পুনরায় শুরু হয়েছে, যা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি ক্যাম্পাসে আশার ক্ষীণ আলো জ্বালিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর গাজা সিটির এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আবার চালু হলেও বাস্তবতা অত্যন্ত কঠিন। বর্তমানে ক্যাম্পাসের ভেতরেই প্রায় ৫০০ বাস্তুচ্যুত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। একসময়ের শ্রেণিকক্ষ ও লেকচার হলগুলো এখন তাঁবু ও অস্থায়ী বসবাসের স্থানে পরিণত হয়েছে, যা গাজায় গৃহহীনতা ও শিক্ষাব্যবস্থার বিপর্যয়ের যুগপৎ চিত্র তুলে ধরে।

ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেওয়া আত্তা সিয়াম বলেন, “জাবালিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর আমাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না বলেই এখানে এসেছি। কিন্তু এটি শিক্ষার জায়গা, আশ্রয়কেন্দ্র নয়—এটি আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার স্থান।”

এই প্রতিকূল পরিবেশেও ক্লাস আংশিকভাবে শুরু হওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে, যদিও বর্তমান পরিস্থিতি কার্যকর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খুব কমই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকার ৯৫ শতাংশেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

প্রথম বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থী ইয়োমনা আলবাবা বলেন,“আমি একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুসজ্জিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। এখানে সেই পরিবেশ নেই। তবুও আমার আশা আছে, কারণ আমরা সবকিছু নতুন করে গড়ে তুলছি।”

মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা গাজার শিক্ষা ব্যবস্থার এই পদ্ধতিগত ধ্বংসকে ‘স্কলাস্টিকাইড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। গাজাভিত্তিক আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, ৭ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী টানা দুই শিক্ষাবর্ষ ধরে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দখলদার ইসরাইলের হামলায় গাজায় ৪৯৪টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৭টি একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আল মেজানের জানুয়ারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী, ৭৬০ জন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী এবং ১৫০ জন শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

অধ্যাপক ড. আদেল আওয়াদাল্লাহ জানান, বিদ্যুৎ সংকট, সরঞ্জামের অভাব এবং অনুপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশের মধ্যেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সীমিত সম্পদ দিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, খোলা দেয়াল প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে ঢেকে অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মোটর ধার করতে হয়েছে।

বর্তমানে মাত্র চারটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে, যার ওপর নির্ভর করেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ২০২৪ সালের এপ্রিলে সতর্ক করে বলেন, এই ধ্বংসযজ্ঞ ফিলিস্তিনি সমাজের ভিত্তি ভেঙে দেওয়ার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হতে পারে।

তাদের ভাষায়,“যখন স্কুল ধ্বংস হয়, তখন আশা ও স্বপ্নও ধ্বংস হয়।”

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন