ইলিয়াস হোসেন
আমেরিকা ও ইসরাইলের দানবীয় সামরিক শক্তিকে ভয় করেনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দুই আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে অসমসাহসে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার সুফল পেল তেহরান। মাত্র ১২ দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হলো তেল আবিব ও তার ঘনিষ্ঠতম মিত্র ওয়াশিংটন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।
ইহুদিবাদী দখলদার ইসরাইল ১২ দিন আগে বিনা উসকানিতেই ইরানের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায়। গত ১২ জুনের ওই হামলার পর প্রত্যাঘাত শুরু করে তেহরান। এর মধ্যেই ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমপর্ণের আহ্বান জানান ট্রাম্প। তবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য ইরানকে দুই সপ্তাহ সময়ও দেন। অবশ্য ওয়াদা ভঙ্গ করে দুদিনের মাথায় তিনি ইরানে সামরিক তাণ্ডব চালান।
তবে আত্মসমর্পণ করা তো দূরের কথা, ইসলামি প্রজাতন্ত্র হামলার কঠোর জবাব দেয়। শুধু ইসরাইলেই হামলা চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি ইরান; বরং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা চালায় দেশটি। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ‘চিরস্থায়ী’ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক দিনে ইসরাইলে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে বিশ্বকে হতবাক করে দেয় ইরান। ইসরাইলে সারি সারি ভবনের ধ্বংসস্তূপ তাদের অসহায়ত্বই তুলে ধরে। এ যুদ্ধে ইসরাইলে প্রাণহানিও ঘটেছে বহু মানুষের। একজন ইরানি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এ যুদ্ধে ইরান নিজেকে জয়ী বলে দাবি করতেই পারে।
মঙ্গলবার সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর।’ পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করতে ইসরাইল ও ইরানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘দয়া করে এটি লঙ্ঘন করবেন না।’
এর আগে ইসরাইলে রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এতে চারজন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হয়। এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন ভবনসহ অনেক স্থাপনা। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সামাজিকমাধ্যমে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া শুরু হবে মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়) এবং তা ২৪ ঘণ্টায় ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে। প্রথমে ইরান সব সামরিক অভিযান বন্ধ করবে। ১২ ঘণ্টা পর ইসরাইলও একই পথে হাঁটবে।
আমেরিকার গোপন বোমারু বিমান ইরানের ওপর হামলা চালানোর মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ট্রাম্প সোমবার রাতে এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি যুদ্ধবিরতি সীমাহীন। (যুদ্ধ) চিরতরে চলে যাবে। ইসরাইল ও ইরান আর কখনো একে অপরের দিকে গুলি চালাবে না।’
গতকাল যুদ্ধবিরতির পরও হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি নেতানিয়াহুকে ফোন করে হামলা বন্ধ রাখার আহ্বান জানান। অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যকে আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের ‘কবরস্থান’ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ইসরাইলের হামলায় গত ১২ দিনে ইরানে ৬১০ জন নিহত এবং চার হাজার ৭৪৬ জন আহত হন বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইলের আগ্রাসনের জন্য ‘শাস্তি’ দিতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। গতকাল ভোরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে ইরানের সব নাগরিকের পক্ষ থেকে দেশটির শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য ইহুদিবাদী সরকারকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার জন্য সামরিক অভিযান ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত’ অব্যাহত ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, সব ইরানিকে নিয়ে আমি আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, যারা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমাদের প্রিয় দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত থাকে এবং যারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুর যে কোনো আক্রমণের জবাব দেয়।
এদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতির কথা জানিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইল সরকারের দাবি, ইরানে চালানো হামলায় লক্ষ্য অর্জিত হওয়ায় তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল ‘ইরানের সামরিক নেতৃত্বের ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে এবং ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তত কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।’
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনী তেহরানের কেন্দ্রস্থলে সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে মারাত্মক হামলা চালিয়ে আধাসামরিক বাহিনীর শত শত সদস্যকে নির্মূল করেছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়। বিবৃতিতে প্রতিরক্ষায় সহায়তা ও ইরানের পারমাণবিক হুমকি নির্মূলে অংশ নেওয়ার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানায় ইসরাইল। এতে দাবি করা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই এ যুদ্ধবিরতি।
যুদ্ধে কি তবে ইরানই জিতল
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার জবাবে গত সোমবার রাতে কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সেনারা। এর আগে সোমবার সকালে আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের বিষয়ে আলোচনা করতে জরুরি বৈঠক করে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। আমেরিকা গত শনিবার ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। এর আগে ১৩ জুন ইরানের ওপর হামলা শুরু করে ইসরাইল। জবাবে ইরানও ইসরাইলে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। যুদ্ধ পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজন ইরানি কর্মকর্তা জানান, মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা জানান, তবে খামেনি আরো নির্দেশ দিয়েছিলেনÑহামলাগুলো যেন নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে আমেরিকার সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো যায়।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিকে হামলার জন্য বেছে নেয় দুটি কারণে। আইআরজিসির দুই সদস্যের মতে, যেহেতু এটি এ অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, তাদের ধারণা ছিল ঘাঁটিটি গত শনিবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় আমেরিকান বি-২ হামলার সমন্বয়ে জড়িত ছিল।
যেহেতু এটি ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারে অবস্থিত, তাই ইরানি কর্মকর্তারা চেষ্টা করেছিলেন ক্ষয়ক্ষতি যতটা কম রাখা যায়। এজন্যই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরান মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আগাম বার্তা পাঠাতে শুরু করে যে, হামলা আসন্ন। কাতার তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং আমেরিকাকে সতর্ক করা হয়। মার্কিন স্থাপনায় হামলা করে ইরান নিজ দেশের জনসাধারণের পাশাপাশি সারা বিশ্বকে বার্তা দেয় যে, তারা আমেরিকার হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা আইআরজিসির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ওই হামলার পরই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে জানান, ইসরাইল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
এরপর আরেকটি পোস্টে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর।’ পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করতে ইসরাইল ও ইরানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক পরিচালক আলি ভায়েজ বলেছেন, প্রতিটি পক্ষই এখন জয় দাবি করতে পারে। তিনি বলেন, আমেরিকা বলতে পারে তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দিয়েছে, ইসরাইল বলতে পারে তারা আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে আর ইরান বলতে পারে তারা অনেক শক্তিশালী সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের হটিয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগীরাও বিস্মিত
সোমবার হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হঠাৎ করে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। এতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল কাতার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ভূমিকা পালন করেন। ওই ঘোষণায় ট্রাম্পের নিজস্ব প্রশাসনের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাও অবাক হন।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কমানোর জন্য গত দুই মাস ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির কাজে ট্রাম্পকে সাহায্য করেন বলে ওই কর্মকর্তা জানান। এই তিন ব্যক্তি ইরানিদের কাছে ‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ’ চ্যানেলে বার্তা পৌঁছান বলে ওই কর্মকর্তা জানান। ইরানের কাছ থেকে আর কোনো আক্রমণের শিকার না হওয়ার শর্তে ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
ট্রাম্প ‘মিনতি’ করেছিলেন
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল আইআরআইএনএন জানায়, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ‘সফল’ হামলার পর এ যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানের হামলার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য ‘মিনতি’ করেছিলেন এবং বিবৃতিটি উপস্থাপক পড়ে শোনান। বিবৃতিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসি এবং সেনাবাহিনীর প্রশংসা করা হয় এবং ইরানিদের প্রতিরোধকে সম্মানও জানানো হয়।
কমছে তেলের দাম
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তেলের দাম ক্রমাগত কমছে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার-আদর্শ ব্রেন্টের দাম আরো ৪ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬৮ ডলারের কাছাকাছি নেমেছে, যা সোমবারের ট্রেডিং সেশনে ৭ শতাংশ কমারই ধারাবাহিকতা। তেলের দাম এখন ১২ জুন থেকেও কম, যেদিন ইসরাইল প্রথম ইরানে আক্রমণ শুরু করেছিল। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সূচকও ঊর্ধ্বমুখী।
ট্রাম্পের ইরান হামলায় সমর্থন নেই বেশিরভাগ মার্কিনির
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান হামলায় সমর্থন নেই বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিকের। গত রোববার ইরানের তিন পরমাণু স্থাপনায় আমেরিকার বিমান হামলার জেরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের করা এক জরিপে এমনটাই উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা যায়, ইরানে ট্রাম্পের বিমান হামলার বিরোধিতা করেন ৫৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক। অন্যদিকে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন দেন ৪৪ শতাংশ নাগরিক।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি ১০ জনের ছয়জন ইরানে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ইরানি হুমকির বিষয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন।
জরিপে দেখা যায়, ডেমোক্রেট দলের সমর্থকরা ট্রাম্পের ইরানে সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের বেশিরভাগ সদস্য এর পক্ষে সমর্থন দেন। তবে দলটির তরুণ সমর্থক ও রিপাবলিকানঘেঁষা স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পক্ষগুলো ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে সন্দেহ প্রকাশ করে।
স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশ এবং ডেমোক্রেটদলীয় ৮৮ শতাংশ সমর্থক ইরানে হামলায় ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। অপরদিকে রিপাবলিকানদলীয় ৮২ শতাংশ সমর্থক ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সমর্থন দেন।
ইসরাইলের ওপর অসন্তোষ ট্রাম্পের
ইসরাইল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মধ্যেই ইরানে হামলা চালায় ইসরাইল। এর জেরে ইসরাইলের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগে ন্যাটোর এক সম্মেলনে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর ইরানে বোমা হামলার কারণে তিনি ইসরাইলের ওপর বিশেষভাবে অসন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, ‘যখন আমি বলেছি তোমাদের হাতে পর্যবেক্ষণের জন্য ১২ ঘণ্টা সময় রয়েছে, তখন তোমরা প্রথম ঘণ্টায় গিয়েই সব বোমা ফেলে আসতে পারো না।’
ইসরাইল ও ইরান উভয় দেশই যুদ্ধবিরতি ‘লঙ্ঘন করেছে’ মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘এ দুটি দেশ জানেই না তারা কী জঘন্য কাজ করছে।’
এর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ইংরেজি বড় অক্ষরে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইসরাইল, বোমাবর্ষণ কোরো না। যদি তুমি তা করো তবে তা হবে ভয়াবহ লঙ্ঘন। এখনই তোমাদের পাইলটদের ফিরিয়ে নাও।’
আমেরিকা ও ইসরাইলের দানবীয় সামরিক শক্তিকে ভয় করেনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দুই আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে অসমসাহসে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার সুফল পেল তেহরান। মাত্র ১২ দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হলো তেল আবিব ও তার ঘনিষ্ঠতম মিত্র ওয়াশিংটন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।
ইহুদিবাদী দখলদার ইসরাইল ১২ দিন আগে বিনা উসকানিতেই ইরানের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায়। গত ১২ জুনের ওই হামলার পর প্রত্যাঘাত শুরু করে তেহরান। এর মধ্যেই ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমপর্ণের আহ্বান জানান ট্রাম্প। তবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য ইরানকে দুই সপ্তাহ সময়ও দেন। অবশ্য ওয়াদা ভঙ্গ করে দুদিনের মাথায় তিনি ইরানে সামরিক তাণ্ডব চালান।
তবে আত্মসমর্পণ করা তো দূরের কথা, ইসলামি প্রজাতন্ত্র হামলার কঠোর জবাব দেয়। শুধু ইসরাইলেই হামলা চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি ইরান; বরং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা চালায় দেশটি। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ‘চিরস্থায়ী’ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক দিনে ইসরাইলে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে বিশ্বকে হতবাক করে দেয় ইরান। ইসরাইলে সারি সারি ভবনের ধ্বংসস্তূপ তাদের অসহায়ত্বই তুলে ধরে। এ যুদ্ধে ইসরাইলে প্রাণহানিও ঘটেছে বহু মানুষের। একজন ইরানি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এ যুদ্ধে ইরান নিজেকে জয়ী বলে দাবি করতেই পারে।
মঙ্গলবার সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর।’ পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করতে ইসরাইল ও ইরানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘দয়া করে এটি লঙ্ঘন করবেন না।’
এর আগে ইসরাইলে রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এতে চারজন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হয়। এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন ভবনসহ অনেক স্থাপনা। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সামাজিকমাধ্যমে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া শুরু হবে মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়) এবং তা ২৪ ঘণ্টায় ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে। প্রথমে ইরান সব সামরিক অভিযান বন্ধ করবে। ১২ ঘণ্টা পর ইসরাইলও একই পথে হাঁটবে।
আমেরিকার গোপন বোমারু বিমান ইরানের ওপর হামলা চালানোর মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ট্রাম্প সোমবার রাতে এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি যুদ্ধবিরতি সীমাহীন। (যুদ্ধ) চিরতরে চলে যাবে। ইসরাইল ও ইরান আর কখনো একে অপরের দিকে গুলি চালাবে না।’
গতকাল যুদ্ধবিরতির পরও হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি নেতানিয়াহুকে ফোন করে হামলা বন্ধ রাখার আহ্বান জানান। অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যকে আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের ‘কবরস্থান’ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ইসরাইলের হামলায় গত ১২ দিনে ইরানে ৬১০ জন নিহত এবং চার হাজার ৭৪৬ জন আহত হন বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইলের আগ্রাসনের জন্য ‘শাস্তি’ দিতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। গতকাল ভোরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে ইরানের সব নাগরিকের পক্ষ থেকে দেশটির শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য ইহুদিবাদী সরকারকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার জন্য সামরিক অভিযান ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত’ অব্যাহত ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, সব ইরানিকে নিয়ে আমি আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, যারা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমাদের প্রিয় দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত থাকে এবং যারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুর যে কোনো আক্রমণের জবাব দেয়।
এদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতির কথা জানিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইল সরকারের দাবি, ইরানে চালানো হামলায় লক্ষ্য অর্জিত হওয়ায় তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল ‘ইরানের সামরিক নেতৃত্বের ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে এবং ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তত কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।’
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনী তেহরানের কেন্দ্রস্থলে সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে মারাত্মক হামলা চালিয়ে আধাসামরিক বাহিনীর শত শত সদস্যকে নির্মূল করেছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়। বিবৃতিতে প্রতিরক্ষায় সহায়তা ও ইরানের পারমাণবিক হুমকি নির্মূলে অংশ নেওয়ার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানায় ইসরাইল। এতে দাবি করা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই এ যুদ্ধবিরতি।
যুদ্ধে কি তবে ইরানই জিতল
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার জবাবে গত সোমবার রাতে কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সেনারা। এর আগে সোমবার সকালে আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের বিষয়ে আলোচনা করতে জরুরি বৈঠক করে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। আমেরিকা গত শনিবার ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। এর আগে ১৩ জুন ইরানের ওপর হামলা শুরু করে ইসরাইল। জবাবে ইরানও ইসরাইলে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। যুদ্ধ পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজন ইরানি কর্মকর্তা জানান, মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা জানান, তবে খামেনি আরো নির্দেশ দিয়েছিলেনÑহামলাগুলো যেন নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে আমেরিকার সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো যায়।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিকে হামলার জন্য বেছে নেয় দুটি কারণে। আইআরজিসির দুই সদস্যের মতে, যেহেতু এটি এ অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, তাদের ধারণা ছিল ঘাঁটিটি গত শনিবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় আমেরিকান বি-২ হামলার সমন্বয়ে জড়িত ছিল।
যেহেতু এটি ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারে অবস্থিত, তাই ইরানি কর্মকর্তারা চেষ্টা করেছিলেন ক্ষয়ক্ষতি যতটা কম রাখা যায়। এজন্যই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরান মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আগাম বার্তা পাঠাতে শুরু করে যে, হামলা আসন্ন। কাতার তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং আমেরিকাকে সতর্ক করা হয়। মার্কিন স্থাপনায় হামলা করে ইরান নিজ দেশের জনসাধারণের পাশাপাশি সারা বিশ্বকে বার্তা দেয় যে, তারা আমেরিকার হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা আইআরজিসির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ওই হামলার পরই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে জানান, ইসরাইল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
এরপর আরেকটি পোস্টে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর।’ পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করতে ইসরাইল ও ইরানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক পরিচালক আলি ভায়েজ বলেছেন, প্রতিটি পক্ষই এখন জয় দাবি করতে পারে। তিনি বলেন, আমেরিকা বলতে পারে তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দিয়েছে, ইসরাইল বলতে পারে তারা আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে আর ইরান বলতে পারে তারা অনেক শক্তিশালী সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের হটিয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগীরাও বিস্মিত
সোমবার হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হঠাৎ করে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। এতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল কাতার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ভূমিকা পালন করেন। ওই ঘোষণায় ট্রাম্পের নিজস্ব প্রশাসনের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাও অবাক হন।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কমানোর জন্য গত দুই মাস ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির কাজে ট্রাম্পকে সাহায্য করেন বলে ওই কর্মকর্তা জানান। এই তিন ব্যক্তি ইরানিদের কাছে ‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ’ চ্যানেলে বার্তা পৌঁছান বলে ওই কর্মকর্তা জানান। ইরানের কাছ থেকে আর কোনো আক্রমণের শিকার না হওয়ার শর্তে ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
ট্রাম্প ‘মিনতি’ করেছিলেন
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল আইআরআইএনএন জানায়, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ‘সফল’ হামলার পর এ যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানের হামলার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য ‘মিনতি’ করেছিলেন এবং বিবৃতিটি উপস্থাপক পড়ে শোনান। বিবৃতিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসি এবং সেনাবাহিনীর প্রশংসা করা হয় এবং ইরানিদের প্রতিরোধকে সম্মানও জানানো হয়।
কমছে তেলের দাম
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তেলের দাম ক্রমাগত কমছে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার-আদর্শ ব্রেন্টের দাম আরো ৪ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬৮ ডলারের কাছাকাছি নেমেছে, যা সোমবারের ট্রেডিং সেশনে ৭ শতাংশ কমারই ধারাবাহিকতা। তেলের দাম এখন ১২ জুন থেকেও কম, যেদিন ইসরাইল প্রথম ইরানে আক্রমণ শুরু করেছিল। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সূচকও ঊর্ধ্বমুখী।
ট্রাম্পের ইরান হামলায় সমর্থন নেই বেশিরভাগ মার্কিনির
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান হামলায় সমর্থন নেই বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিকের। গত রোববার ইরানের তিন পরমাণু স্থাপনায় আমেরিকার বিমান হামলার জেরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের করা এক জরিপে এমনটাই উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা যায়, ইরানে ট্রাম্পের বিমান হামলার বিরোধিতা করেন ৫৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক। অন্যদিকে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন দেন ৪৪ শতাংশ নাগরিক।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি ১০ জনের ছয়জন ইরানে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ইরানি হুমকির বিষয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন।
জরিপে দেখা যায়, ডেমোক্রেট দলের সমর্থকরা ট্রাম্পের ইরানে সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের বেশিরভাগ সদস্য এর পক্ষে সমর্থন দেন। তবে দলটির তরুণ সমর্থক ও রিপাবলিকানঘেঁষা স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পক্ষগুলো ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে সন্দেহ প্রকাশ করে।
স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশ এবং ডেমোক্রেটদলীয় ৮৮ শতাংশ সমর্থক ইরানে হামলায় ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। অপরদিকে রিপাবলিকানদলীয় ৮২ শতাংশ সমর্থক ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সমর্থন দেন।
ইসরাইলের ওপর অসন্তোষ ট্রাম্পের
ইসরাইল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মধ্যেই ইরানে হামলা চালায় ইসরাইল। এর জেরে ইসরাইলের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগে ন্যাটোর এক সম্মেলনে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর ইরানে বোমা হামলার কারণে তিনি ইসরাইলের ওপর বিশেষভাবে অসন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, ‘যখন আমি বলেছি তোমাদের হাতে পর্যবেক্ষণের জন্য ১২ ঘণ্টা সময় রয়েছে, তখন তোমরা প্রথম ঘণ্টায় গিয়েই সব বোমা ফেলে আসতে পারো না।’
ইসরাইল ও ইরান উভয় দেশই যুদ্ধবিরতি ‘লঙ্ঘন করেছে’ মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘এ দুটি দেশ জানেই না তারা কী জঘন্য কাজ করছে।’
এর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ইংরেজি বড় অক্ষরে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইসরাইল, বোমাবর্ষণ কোরো না। যদি তুমি তা করো তবে তা হবে ভয়াবহ লঙ্ঘন। এখনই তোমাদের পাইলটদের ফিরিয়ে নাও।’
উগান্ডা পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ১২টার দিকে কাম্পালা-গুলু হাইওয়েতে বিপরীত দিকে আসা দুটি বাস মুখোমুখি হয়ে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে গেলে একটি বাস উল্টে যায়। আর এ সময় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে অন্যান্য যানবাহনগুলোও উল্টে গেলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
১৫ মিনিট আগেআফগানিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটে ২০২১ সালে। দুই দশক ধরে চলা, এই যুদ্ধের কারণে বৈরী সম্পর্ক রয়েছে দেশ দুটির মধ্যে, তবে এমন সম্পর্ক থেকে উত্তরণ চায় ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নই এখন তাদের লক্ষ্য।
২ ঘণ্টা আগেভারতের উত্তর প্রদেশের একটি শিল্পনগরী এলাকা কানপুর। গত ৪ সেপ্টেম্বর কানপুরের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা সৈয়দ নগরে ঈদে মিলাদুন্নবি উদ্যাপন উপলক্ষে সন্ধ্যায় একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।
৩ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি বায়ু দূষণ কমানোর জন্য রাজধানীতে পেট্রোলচালিত মোটরবাইকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভিয়েতনাম প্রশাসন। যা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে, পরিকল্পিত এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের বাজার হারাবে বলে আশঙ্কা করছে জাপান সরকার এবং দেশের কিছু শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা।
৩ ঘণ্টা আগে