আসামের গৃহবধূকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশ করলো বিএসএফ

বিশেষ প্রতিনিধি, কলকাতা
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫, ২২: ৪৮
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ২২: ৫৯

গত সপ্তাহেই আসামের মরিগাঁও জেলার একজন প্রাক্তন সরকারি শিক্ষককে পুলিশ ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে জোর করে তাড়িয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ফেলে দেয়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও রোববার অসমের গোলাঘাট জেলায় বসবাসকারী ৫০ বছর বয়সী গৃহবধূ রহিমা বেগমকেও অফিসারদের ভুলের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়।

ওই গৃহবধূ দুই দিন ধরে ধানক্ষেতে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাংলাদেশ তাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না, ভারতও তাকে বিতাড়িত করে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, 'রোববার ভোর ৪টার দিকে পুলিশ আমাদের বাড়িতে আসে এবং আমাকে থানায় যেতে বলে। সেখান থেকে আমাদের এসপি অফিসে নিয়ে আঙুলের ছাপ নেয়। রাতে কোনও তথ্য ছাড়াই আমাদের গাড়িতে করে কোথাও নিয়ে যায়। আমি জানি না সেই জায়গাটি কোথায় ছিল।'

তিনি অভিযোগ করেন যে, রাতে তাকে অন্যদের সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাংলাদেশি টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও ফিরে আসতে নিষেধ করা হয়। কর্দমাক্ত ও জলমগ্ন ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটি গ্রামে পৌঁছান যেখানে স্থানীয়রা তাকে তাড়িয়ে দেয় এবং সীমান্তে মোতায়েন নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে মারধর করে।

রহিমা বলেন, 'আমরা সারাদিন ধানক্ষেতে কাটিয়েছি, নোংরা জল পান করেছি, কারণ আমরা অন্য কোথাও যেতে পারিনি। এর দুদিন পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের ডেকে পাঠায়, বাংলাদেশি মুদ্রা ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং আমাকে কোকরাঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে গোলাঘাটে নিয়ে আসা হয়।'

রহিমার স্বামী মালেক আলী বলেন, 'আমাদের দুই সন্তান সেই রাতে তাদের মাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছে, কিন্তু আমাদের বলা হয়নি যে তিনি কোথায় আছেন।'

আসামে ঘোষিত বিদেশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হলে এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। রহিমা বেগমও তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। তবে, তার আইনজীবী স্পষ্ট করে বলেছেন যে ফরেন ট্রাইব্যুনাল (FT) ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তার পরিবার ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের আগে ভারতে এসেছিল।

এটি আসামে নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য কাট-অফ ডেট। এছাড়াও তার আইনজীবী বলেন, 'নথিতে একটি নম্বরে ভুলের কারণে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল, যা পরে FRRO দ্বারা যাচাই করা হয়েছিল। তদন্তে যদি আরও একটু যত্ন নেওয়া হত, তাহলে এই সব ঘটত না। শুধুমাত্র একটি নম্বর মিলিয়ে একজন ব্যক্তিকে দেশের বাইরে পাঠানোর কথা ভাবা একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভুল।'

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, রাজ্য সরকার ঘোষিত বিদেশীদের সীমান্তের ওপারে পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর করছে। কিন্তু রহিমা বেগমের ঘটনা এখন এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত