যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে ওয়াশিংটনে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) এবং রুয়ান্ডা শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
চুক্তির আগে কঙ্গোর খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনী এবং রুয়ান্ডার সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হয়েছিল। কঙ্গো সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, বিদ্রোহীরা শান্তি প্রক্রিয়া ভঙ্গের চেষ্টা করছে, তবে এম২৩ দাবি করছে, প্রথম হামলা সেনাবাহিনীই চালিয়েছে। বছরের শুরুতে পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ এলাকা দখল করার পর সংঘর্ষে হাজারো মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ওয়াশিংটনের ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ইনস্টিটিউট অব পিস’-এ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, এটি আফ্রিকা ও বিশ্বের জন্য “একটি মহান দিন।” তিনি দুই নেতার ওপর আস্থা প্রকাশ করেন এবং আশা করেন চুক্তির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তারা জনগণের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবেন।
দুই দেশের নেতা—ডিআর কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে—সরাসরি চুক্তিতে সই করেছেন। অনুষ্ঠানে কেনিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি, টোগোর নেতারা এবং উগান্ডার ভাইস প্রেসিডেন্ট, পাশাপাশি কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও উপস্থিত ছিলেন। কাগামে ট্রাম্পকে ‘নিরপেক্ষ’ নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, শিসেকেদি ‘গভীর কৃতজ্ঞতা ও আশাবাদ’ প্রকাশ করেছেন।
এম২৩-এর প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না; তারা কাতারের মধ্যস্থতায় কঙ্গো সরকারের সঙ্গে আলাদা আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার পর খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলো” কঙ্গো ও রুয়ান্ডায় কাজ করবে, যা অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করবে।
রুয়ান্ডা দীর্ঘদিন ধরে এম২৩-কে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করছে, যদিও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুয়ান্ডার সেনারা এম২৩-এর সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। বিদ্রোহীরা ২০১২ সালে পুনর্গঠন করে এবং এবার গোমার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমঝোতা স্থায়ী শান্তি আনবে কি না তা অনিশ্চিত। দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক ব্রাম ভেরেলস্ট জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি এবং এম২৩ ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে। তবে দুই দেশের নেতারা জনসম্মুখে প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তাদের ওপর জবাবদিহি বাড়তে পারে।
সূত্র: বিবিসি নিউজ
এসআর

