ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ‘মধ্যস্থতার’ কৃতিত্ব ট্রাম্পের দাবি, দিল্লিতে অস্বস্তি

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫, ১৭: ৫২
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৪
ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন সফরের সময় তোলা ছবি। ছবি: বিবিসি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মে মাসে সংঘর্ষ থামার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো থামেনি রাজনৈতিক উত্তাপ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার এই সংঘাত থামানোর কৃতিত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, আর ভারতের তরফ থেকে তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে—ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

গত ১০ মে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এক মাস ধরে চলা উত্তেজনার পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। ট্রাম্পের দাবি, এই যুদ্ধবিরতি তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল। তিনি বলেন, ‘আমি একটা যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছি। পাকিস্তানকে আমি ভালোবাসি, মোদি একজন অসাধারণ মানুষ। আমাদের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হতে চলেছে।’

এই মন্তব্য তিনি করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, একই দিন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে তার বৈঠকের আগে।

ট্রাম্পের এসব মন্তব্য নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি স্পষ্ট করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, এই সংঘাতের পুরো সময়জুড়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কোনো মার্কিন মধ্যস্থতার প্রশ্নই ওঠে না।’

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার ট্রাম্পের দাবি খণ্ডন করেছে। তাদের ভাষ্য, ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনার বিষয়ে দুই নেতা আলোচনা করলেও যুদ্ধবিরতির পেছনে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এমন দাবি হয়তো আংশিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় ট্রাম্পের কোনো মধ্যস্থতা ছিল না—মোদি তা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। তবুও ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছি।’ এটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অস্বস্তিকর অবস্থান তৈরি করছে।’

ভারতের সাবেক কূটনীতিক রাজীব ডোগরাও এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এমন মন্তব্যে ভারতের মধ্যে স্বস্তি নেই। কিন্তু বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত না করাই হবে কৌশলী সিদ্ধান্ত। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই।’

আসিম মুনিরের আমন্ত্রণ: বার্তা কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানানো নিজেই একটি ‘সিগন্যাল’। এমন পদক্ষেপ সাধারণত কূটনৈতিক প্রোটোকলে সচরাচর দেখা যায় না। ইরান পরিস্থিতি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং চীন ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

মানব রচনা ইন্সটিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ-এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উপমন্যু বসু। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কিছুটা বদলেছে। এর পেছনে চীনের প্রভাব মোকাবিলার ভূরাজনৈতিক হিসাব কাজ করতে পারে।’

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যস্থতা দাবি নিয়ে ট্রাম্প ও মোদির মন্তব্যে পারস্পরিক অমিল থাকলেও, তা ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্বে বড় কোনো ফাটল ধরাবে না।

উপমন্যু বসুর মতে, ‘ভারত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, আর আমেরিকা ভারতের মতো অংশীদারকে হারাতে চাইবে না। কাজেই এই ঘটনাটি কূটনৈতিক অস্বস্তি সৃষ্টি করলেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে না।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মধ্যস্থতার’ দাবিকে ঘিরে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়লেও, তা এখনো পর্যন্ত রাজনৈতিক সীমার মধ্যেই রয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে কৌশলীভাবে বারবার অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। আর মার্কিন প্রশাসনও হয়তো বিষয়টিকে বড় করে না দেখিয়ে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার পথেই এগোবে—বিশেষত চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূরাজনীতির মধ্যে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ধরে রাখার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখেই।

সূত্র: বিবিসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত