লাল কেল্লায় গাড়ি বিস্ফোরণের পর ভয়াবহ ঝুঁকিতে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪০
ছবি: সিএএন

ভারতের রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লায় ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩ জন। সেই বিস্ফোরণে লাল কেল্লা মেট্রো গেটেও আগুন লাগে। পুড়ে যায় আশপাশে থাকা অন্তত ২২ গাড়ি। এ ঘটনার পরই দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট জারি করে প্রশাসন।

বিস্ফোরণের ঘটনাটি রাজধানীর এমন একটি স্থানে হয়েছে যা ভারতের স্বাধীনতার প্রতীক।

বিজ্ঞাপন

সতেরো শতকের এই স্মৃতিস্তম্ভটি বেশ জনপ্রিয় একটি পর্যটন স্থান। তিন কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস এই মহানগরের জন্য বিস্ফোরণের ঘটনাটি একটি বিরল ঘটনা, যা দিল্লির কেন্দ্রস্থলে ধ্বংসস্তূপের সৃষ্টি করেছে। বিস্ফোরণের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কমলা রঙা আগুনে ছেয়ে গেছে সেখানকার আকাশ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন আহতরা, আগুনে পুড়ছে গাড়ি।

বিস্ফোরণের পরপরই ভারতজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সব থেকে কাছের হাসপাতালে অন্তত ৩০ জন আহতের চিকিৎসা চলছে। দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র সঞ্জয় ত্যাগী বিবিসিকে জানিয়েছেন, হুন্দাই আই-২০ মডেলের যে গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে তিনজন ছিলেন।

ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি, তবে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে এ ঘটনার জন্য এখনো কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে দায়ী করেনি ভারত সরকার। আমেরিকার গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, মঙ্গলবার তারা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এটি ইচ্ছাকৃত ঘটনা।

এদিকে ভুটান সফরে থাকা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভয়াবহ এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দায়ীদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

রাজধানী থিম্পুতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। সংস্থাগুলো এই ষড়যন্ত্রের শিকড় পর্যন্ত যাবে। ষড়যন্ত্রকারীদের রেহাই দেওয়া হবে না। এর জন্য সব দায়ী ব্যক্তির বিচার হবে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, হামলার তদন্তের ফলাফল শিগগির জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে এবং কোনো অবস্থাতেই তাদের রেহাই দেওয়া হবে না।

উত্তর দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার রাজা বান্থিয়া সিএনএনকে বলেছেন, দিল্লি পুলিশ ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলাটি তদন্ত করছে।

অপরদিকে এ ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন ‘জইশ-ই-মোহাম্মদ’কে (জেইএম) দায়ী করেছে দিল্লি পুলিশ। সূত্র জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ অভিযানে ‘আত্মঘাতী হামলার’ দিকটি কঠোরভাবে তদন্ত করছে। সূত্র আরো বলছে, পেশায় চিকিৎসক ডাক্তার উমর মুহাম্মদ জইশ মডিউল থেকে তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে ফরিদাবাদ থেকে পালিয়ে যান। পরে দিল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটান তিনি।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, লাল কেল্লার কাছে এই বিস্ফোরণ ঘটাতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জ্বালানি তেল (এএনএফও) ব্যবহার করা হয়েছিল। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট একটি সাধারণ শিল্প বিস্ফোরক যা জ্বালানি তেলের সঙ্গে ছিদ্রযুক্ত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এর আগে লেবাননের বৈরুত এবং আমেরিকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

ঘটনার ভয়াবহ বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ হাফিজ নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটারেরও কম দূরে ছিলেন তিনি। তারপরও বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় কেঁপে ওঠে তার বাড়ি। ভূমিকম্প মনে করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তারা। মানুষজনের ছোটাছুটি, জ্বলন্ত গাড়ি আর রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ছিল মৃতদেহ।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী গাড়ির মূল মালিককে আটক করা হয়েছে। চলন্ত হুন্দাই আই-২০ গাড়ির ভেতর ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

সোমবারের বিস্ফোরণকে বিরল বলে মনে করা হলেও দিল্লিতে বিগত দশকগুলোতেও বিস্ফোরণ ঘটেছে, যেখানে বাস ডিপো এবং জনাকীর্ণ বাজারের মতো জনসমাগমের স্থানগুলোকে টার্গেট করা হয়েছিল। ২০০১ সালে ভারতের সংসদে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে এক ডজনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছিল।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত