
আবু সুফিয়ান

বাংলাদেশের শিপিং খাতে এক অদৃশ্য নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে, যা ব্যবসার আড়ালে আন্তর্জাতিক কূটনীতি, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই নেটওয়ার্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেড। সংস্থাটি ইসরাইলের অন্যতম বৃহৎ শিপিং কোম্পানি জেডআইএম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক কনটেইনার পরিবহনে ট্রাইডেন্ট এখন পরিচিত নাম। নথিপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে জেডআইএমের সব আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এই কোম্পানির মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। ট্রাইডেন্টের নেতৃত্বে আছেন ফারুবার আনোয়ার। তিনি বাংলাদেশের শিপিং খাতের অন্যতম এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। একসময় বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) কোষাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি এবং বর্তমানে এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ সদস্য। তার কোম্পানি বাংলাদেশের বন্দরের সঙ্গে ইসরাইলি নেটওয়ার্কের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনে ট্রাইডেন্টের ঢাকা অফিসে জেডআইএম লেখা একটি কেক কাটা হয়। কেকটির চারদিকে ব্যবহার করা হয় ইসরাইলি পতাকার রং ও প্রতীক।
বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ফলে দেশটির কোনো কোম্পানি বাংলাদেশে বাণিজ্য পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিতও নয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জেডআইএমের ওয়েবসাইটেই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রাইডেন্টের নাম ও এর কর্মকর্তাদের ছবি ও পদবি প্রকাশ করা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের ভেতরে ইসরাইলের অঘোষিত বাণিজ্যিক উপস্থিতি রয়েছে।
জেডআইএমের ওয়েবসাইটের অর্গানাইজেশনাল চার্টে বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রাইডেন্টের আটজনের নাম ও ছবি রয়েছে। এতে ফারুবার আনোয়ারকে ট্রাইডেন্ট শিপিং বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো যারা রয়েছেন- সিএফও আবু জাফর, পোর্ট ক্যাপ্টেইন আলী ইউসুফ, কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার আসাদ খান, জিএম-সেলস গৌতম চন্দ্র দাস, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (ইমপোর্ট অ্যান্ড ক্লেইমস) হোসেন দেলোয়ার, আইটি ম্যানেজার উজ্জ্বল কুমার ও এইচআর ম্যানেজার ওয়ার্দা সাইয়েদা।
তাদের মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে গেছেন সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (ইমপোর্ট অ্যান্ড ক্লেইমস) দেলোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশের বন্দরে ইসরাইলি গোপন বলয়
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১২ এপ্রিল ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সম্পর্কিত খবর ট্রাইডেন্টের ঢাকা অফিস থেকে সরাসরি জেডআইএমের হাইফা সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। জেডআইএমের আঞ্চলিক প্রতিনিধি দোতান সারকে পাঠানো সেই ই-মেইলের কপি আমার দেশ-এর সংগ্রহে রয়েছে।
জেডআইএমের আঞ্চলিক প্রতিনিধিকে সেই মেইলটি করেছিলেন ট্রাইডেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুবার আনোয়ার । মেইলে দোতান সারকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করা হয়। মেইলে লেখা হয়, গতকাল (১২ এপ্রিল) ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে বিশাল এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এক লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ইসরাইলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে স্লোগান দেন। সম্প্রতি এমন আরো কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খোঁজ রাখার পরামর্শও দেওয়া হয় মেইলে। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয় নিয়েও তথ্য দেওয়া হয়।
ফারুবারকে মেইলের জবাবও দেন দোতান সার। মেইলে যুক্ত রাখা হয় বিবেক শর্মা নামের আরেক ব্যক্তিকে। ইউনাইডেট আরব আমিরাত প্রবাসী ক্যাপ্টেন বিবেক শর্মার লিংকড ইন প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি শারাফ শিপিং এজেন্সির জেনারেল ম্যানেজার। ১৯৭৫ সালে ইব্রাহিম শারাফ ও শারাফউদ্দিন শারাফ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শারাফ শিপিং এজেন্সি মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম শিপিং হাউস হিসেবে পরিচিত। মেইলের কার্বন কপিতে (সিসি) আরিফ সিদ্দিকী সাইফুল ও আবু জাফরকে রাখা হয়।
সূত্র বলছে, ট্রাইডেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন দোতান সার। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি কৌশলগত বন্দরের সিদ্ধান্ত সমন্বয় করেন। এই যোগাযোগের ধরন শুধু ‘এজেন্ট-প্রিন্সিপাল’ সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এতে তথ্য আদান-প্রদান, বিশেষ কিছু পণ্যবাহী রুট নির্ধারণ এবং কনটেইনার স্ক্যানিং সংক্রান্ত নির্দেশনাও অন্তর্ভুক্ত।
ট্রাইডেন্টের সঙ্গে জেডআইএমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে দোতান সারকে মেইল করা হলেও জবাব মেলেনি।
এদিকে ইসরাইলি বিতর্কিত জেডআইএমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন ট্রাইডেন্টের সাবেক এক কর্মকর্তা। ট্রাইডেন্টের সাবেক সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘জেডআইএমের সঙ্গে ট্রাইডেন্টের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক থাকলে তা আমার জানা থাকার কথা। কারণ আমি দীর্ঘ ২২ বছর এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি।’
ট্রাইডেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুবার এবং পোর্ট ক্যাপ্টেইন আলী ইউসুফকে ২১ অক্টোবর হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও জবাব মেলেনি। আলী ইউসুফকে ২২ অক্টোবর ফোন করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেন। আমার দেশ প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কয়েকবার ‘হ্যালো’ বলার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তাকে আবার মেসেজ দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। ফারুবারকে মেইল করার পরও মেলেনি জবাব।
ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন সম্পর্কে যা জানা গেল
ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেড বাংলাদেশে একটি প্রসিদ্ধ কনটেইনার শিপিং কোম্পানি, যা আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন এবং লজিস্টিকস সেবা দেয়। সংস্থাটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং লিংকডইনে কোম্পানির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি হংকংভিত্তিক গোল্ড স্টার লাইন লিমিটেড এবং স্থানীয় বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়। কোম্পানিটি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সেবা প্রদানকারী প্রধান শিপিং লাইনগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে, যেমন গোল্ড স্টার লাইন লিমিটেড (ফার ইস্ট, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ ও আফ্রিকা), সেথ শিপিং লিমিটেড (ইউরোপ ও আমেরিকা) এবং লরেল ন্যাভিগেশন লিমিটেড (মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়া)।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে কোম্পানির অফিস রয়েছে, যেখানে কাস্টমার সার্ভিস, কনটেইনার বুকিং এবং অন্যান্য লজিস্টিকস সেবা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মার্চে বাংলাদেশের মার্সেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট (এমএমডি) ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেডকে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করেছিল।
ইসরাইলি জেডআইএমের শিপিং সাম্রাজ্য নিয়ে বিতর্ক
জেডআইএম ১৯৪৫ সালে ইসরাইলে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই কোম্পানি পরবর্তী সময়ে বেসরকারি মালিকানায় যায় এবং এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার শিপিং ব্র্যান্ড। কোম্পানিটি ১০০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের ২ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। এটির প্রধান কার্যালয় হাইফায়, যা ইসরাইলের একটি সামরিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বহুবার উল্লেখ করেছেন, জেডআইএম শুধু বাণিজ্যিক নয়; রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক সংযোগেও ভূমিকা রাখে।
২০২৩ সালে মালয়েশিয়া ঘোষণা দেয়, তারা আর ইসরাইলি পতাকাবাহী কোনো জাহাজকে তাদের বন্দরে ঢুকতে দেবে না। ২০২৫ সালে জেডআইএমের একটি জাহাজে আগুন লাগা এবং কনটেইনার পড়ে যাওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আবারও প্রশ্ন ওঠে- জেডআইএমের কার্যক্রমে কি নিরাপত্তার ঘাটতি আছে, নাকি আরো গভীর কিছু চলছে?
জেডআইএম নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। বিশ্বের বহু দেশ, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলো এর কার্যক্রমকে সন্দেহের চোখে দেখে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দমননীতি, গাজায় অবরোধ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের পর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কুয়েত তাদের বন্দর জেডআইএমের জন্য বন্ধ করে দেয়।
জেডআইএম তখন তার ক্লায়েন্টদের সতর্কবার্তা পাঠায়, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শিপিং সেবা বিলম্বিত বা বিঘ্নিত হতে পারে।’ এই সতর্কবার্তাই প্রমাণ করে, তাদের ব্যবসা শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের শিপিং ডেটা অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখানে কোন পণ্য কোন দেশে যাচ্ছে, কারা রপ্তানি করছে, কারা আমদানি করছে এসব তথ্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মূল্যবান। ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো ইসরাইলি কোম্পানি বাংলাদেশের বন্দরে কার্যক্রম চালায়, তবে তা শুধু কূটনৈতিক নয় রাষ্ট্রীয় নীতিরও পরিপন্থি।
বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংস্থা ট্রাইডেন্ট জেডআইএমের সংযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

বাংলাদেশের শিপিং খাতে এক অদৃশ্য নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে, যা ব্যবসার আড়ালে আন্তর্জাতিক কূটনীতি, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই নেটওয়ার্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেড। সংস্থাটি ইসরাইলের অন্যতম বৃহৎ শিপিং কোম্পানি জেডআইএম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক কনটেইনার পরিবহনে ট্রাইডেন্ট এখন পরিচিত নাম। নথিপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে জেডআইএমের সব আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এই কোম্পানির মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। ট্রাইডেন্টের নেতৃত্বে আছেন ফারুবার আনোয়ার। তিনি বাংলাদেশের শিপিং খাতের অন্যতম এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। একসময় বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) কোষাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি এবং বর্তমানে এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ সদস্য। তার কোম্পানি বাংলাদেশের বন্দরের সঙ্গে ইসরাইলি নেটওয়ার্কের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনে ট্রাইডেন্টের ঢাকা অফিসে জেডআইএম লেখা একটি কেক কাটা হয়। কেকটির চারদিকে ব্যবহার করা হয় ইসরাইলি পতাকার রং ও প্রতীক।
বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ফলে দেশটির কোনো কোম্পানি বাংলাদেশে বাণিজ্য পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিতও নয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জেডআইএমের ওয়েবসাইটেই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রাইডেন্টের নাম ও এর কর্মকর্তাদের ছবি ও পদবি প্রকাশ করা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের ভেতরে ইসরাইলের অঘোষিত বাণিজ্যিক উপস্থিতি রয়েছে।
জেডআইএমের ওয়েবসাইটের অর্গানাইজেশনাল চার্টে বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রাইডেন্টের আটজনের নাম ও ছবি রয়েছে। এতে ফারুবার আনোয়ারকে ট্রাইডেন্ট শিপিং বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো যারা রয়েছেন- সিএফও আবু জাফর, পোর্ট ক্যাপ্টেইন আলী ইউসুফ, কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার আসাদ খান, জিএম-সেলস গৌতম চন্দ্র দাস, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (ইমপোর্ট অ্যান্ড ক্লেইমস) হোসেন দেলোয়ার, আইটি ম্যানেজার উজ্জ্বল কুমার ও এইচআর ম্যানেজার ওয়ার্দা সাইয়েদা।
তাদের মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে গেছেন সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (ইমপোর্ট অ্যান্ড ক্লেইমস) দেলোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশের বন্দরে ইসরাইলি গোপন বলয়
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১২ এপ্রিল ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সম্পর্কিত খবর ট্রাইডেন্টের ঢাকা অফিস থেকে সরাসরি জেডআইএমের হাইফা সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। জেডআইএমের আঞ্চলিক প্রতিনিধি দোতান সারকে পাঠানো সেই ই-মেইলের কপি আমার দেশ-এর সংগ্রহে রয়েছে।
জেডআইএমের আঞ্চলিক প্রতিনিধিকে সেই মেইলটি করেছিলেন ট্রাইডেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুবার আনোয়ার । মেইলে দোতান সারকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করা হয়। মেইলে লেখা হয়, গতকাল (১২ এপ্রিল) ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে বিশাল এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এক লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ইসরাইলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে স্লোগান দেন। সম্প্রতি এমন আরো কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খোঁজ রাখার পরামর্শও দেওয়া হয় মেইলে। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয় নিয়েও তথ্য দেওয়া হয়।
ফারুবারকে মেইলের জবাবও দেন দোতান সার। মেইলে যুক্ত রাখা হয় বিবেক শর্মা নামের আরেক ব্যক্তিকে। ইউনাইডেট আরব আমিরাত প্রবাসী ক্যাপ্টেন বিবেক শর্মার লিংকড ইন প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি শারাফ শিপিং এজেন্সির জেনারেল ম্যানেজার। ১৯৭৫ সালে ইব্রাহিম শারাফ ও শারাফউদ্দিন শারাফ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শারাফ শিপিং এজেন্সি মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম শিপিং হাউস হিসেবে পরিচিত। মেইলের কার্বন কপিতে (সিসি) আরিফ সিদ্দিকী সাইফুল ও আবু জাফরকে রাখা হয়।
সূত্র বলছে, ট্রাইডেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন দোতান সার। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি কৌশলগত বন্দরের সিদ্ধান্ত সমন্বয় করেন। এই যোগাযোগের ধরন শুধু ‘এজেন্ট-প্রিন্সিপাল’ সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এতে তথ্য আদান-প্রদান, বিশেষ কিছু পণ্যবাহী রুট নির্ধারণ এবং কনটেইনার স্ক্যানিং সংক্রান্ত নির্দেশনাও অন্তর্ভুক্ত।
ট্রাইডেন্টের সঙ্গে জেডআইএমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে দোতান সারকে মেইল করা হলেও জবাব মেলেনি।
এদিকে ইসরাইলি বিতর্কিত জেডআইএমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন ট্রাইডেন্টের সাবেক এক কর্মকর্তা। ট্রাইডেন্টের সাবেক সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘জেডআইএমের সঙ্গে ট্রাইডেন্টের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক থাকলে তা আমার জানা থাকার কথা। কারণ আমি দীর্ঘ ২২ বছর এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি।’
ট্রাইডেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুবার এবং পোর্ট ক্যাপ্টেইন আলী ইউসুফকে ২১ অক্টোবর হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও জবাব মেলেনি। আলী ইউসুফকে ২২ অক্টোবর ফোন করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেন। আমার দেশ প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কয়েকবার ‘হ্যালো’ বলার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তাকে আবার মেসেজ দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। ফারুবারকে মেইল করার পরও মেলেনি জবাব।
ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন সম্পর্কে যা জানা গেল
ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেড বাংলাদেশে একটি প্রসিদ্ধ কনটেইনার শিপিং কোম্পানি, যা আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন এবং লজিস্টিকস সেবা দেয়। সংস্থাটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং লিংকডইনে কোম্পানির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি হংকংভিত্তিক গোল্ড স্টার লাইন লিমিটেড এবং স্থানীয় বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়। কোম্পানিটি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সেবা প্রদানকারী প্রধান শিপিং লাইনগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে, যেমন গোল্ড স্টার লাইন লিমিটেড (ফার ইস্ট, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ ও আফ্রিকা), সেথ শিপিং লিমিটেড (ইউরোপ ও আমেরিকা) এবং লরেল ন্যাভিগেশন লিমিটেড (মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়া)।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে কোম্পানির অফিস রয়েছে, যেখানে কাস্টমার সার্ভিস, কনটেইনার বুকিং এবং অন্যান্য লজিস্টিকস সেবা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মার্চে বাংলাদেশের মার্সেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট (এমএমডি) ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেডকে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করেছিল।
ইসরাইলি জেডআইএমের শিপিং সাম্রাজ্য নিয়ে বিতর্ক
জেডআইএম ১৯৪৫ সালে ইসরাইলে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই কোম্পানি পরবর্তী সময়ে বেসরকারি মালিকানায় যায় এবং এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার শিপিং ব্র্যান্ড। কোম্পানিটি ১০০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের ২ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। এটির প্রধান কার্যালয় হাইফায়, যা ইসরাইলের একটি সামরিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বহুবার উল্লেখ করেছেন, জেডআইএম শুধু বাণিজ্যিক নয়; রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক সংযোগেও ভূমিকা রাখে।
২০২৩ সালে মালয়েশিয়া ঘোষণা দেয়, তারা আর ইসরাইলি পতাকাবাহী কোনো জাহাজকে তাদের বন্দরে ঢুকতে দেবে না। ২০২৫ সালে জেডআইএমের একটি জাহাজে আগুন লাগা এবং কনটেইনার পড়ে যাওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আবারও প্রশ্ন ওঠে- জেডআইএমের কার্যক্রমে কি নিরাপত্তার ঘাটতি আছে, নাকি আরো গভীর কিছু চলছে?
জেডআইএম নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। বিশ্বের বহু দেশ, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলো এর কার্যক্রমকে সন্দেহের চোখে দেখে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দমননীতি, গাজায় অবরোধ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের পর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কুয়েত তাদের বন্দর জেডআইএমের জন্য বন্ধ করে দেয়।
জেডআইএম তখন তার ক্লায়েন্টদের সতর্কবার্তা পাঠায়, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শিপিং সেবা বিলম্বিত বা বিঘ্নিত হতে পারে।’ এই সতর্কবার্তাই প্রমাণ করে, তাদের ব্যবসা শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের শিপিং ডেটা অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখানে কোন পণ্য কোন দেশে যাচ্ছে, কারা রপ্তানি করছে, কারা আমদানি করছে এসব তথ্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মূল্যবান। ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো ইসরাইলি কোম্পানি বাংলাদেশের বন্দরে কার্যক্রম চালায়, তবে তা শুধু কূটনৈতিক নয় রাষ্ট্রীয় নীতিরও পরিপন্থি।
বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংস্থা ট্রাইডেন্ট জেডআইএমের সংযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস সড়ক ও সেতুর টোল এক সময় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও নেতাদের অবৈধ আয়ের লোভনীয় খাত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আধুনিক টোল ব্যবস্থাপনার নামে তারা সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লুটে নেন দীর্ঘ সময় ধরে। এখনো অনেক ক্ষেত্রে তাদের সেই লুটপাট অব্যাহত আছে।
১ দিন আগে
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কর্মরত থাকা অবস্থায় এতসংখ্যক সেনা অফিসারকে সিভিল আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হলো।
১ দিন আগে
শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৮টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেন পতিত সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। এর মধ্যে ৩১টি গাড়ি ছাড় করার আগেই পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। এর পরপরই ভেঙে দেওয়া হয় সংসদ।
১ দিন আগে
এলজিইডির বাস্তবায়নাধীন সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন-২ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০২২ সালের মার্চে। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট এক হাজার ৮২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটির মেয়াদ শুরু হয় ওই বছরের জুলাই থেকে।
১ দিন আগে