
এলাহী নেওয়াজ খান

এ মাসে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল, যা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রথমত. ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ২৫টি রাজনীতি দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষরের ঘটনা। দ্বিতীয়ত. গত ২২ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া এবং তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা। এখানে কারাগার বলতে ঢাকা সেনানিবাসে প্রস্তুত করা সাব-জেলে পাঠানো হয়েছে।
বিশেষ করে, ১৫ সেনা কর্মকর্তার ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা এবং অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টির অপচেষ্টার পর এই হাজিরা এটাই প্রমাণ করছে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। ঠিক একইভাবে টুটাফাটা অভিযোগে এদেশে সেনা অভ্যুত্থানের ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও এতগুলো কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করার ঘটনা যেমন ঐতিহাসিক, তেমনি আইনের শাসনের প্রতি সেনা কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার পরিচয়ও বহন করছে।
এখানে উল্লেখ করতে হয়, সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় একসঙ্গে এতগুলো ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার বেসামরিক আদালতে বিচারের ঘটনা এই প্রথম। অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের হস্তক্ষেপ না থাকলে বিচারকরাও যে দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে পারেন, তা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। সামরিক বাহিনীর অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে একটি বাড়িকে আগেই সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারকরা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সাব-জেলেই পাঠিয়েছেন।
এই পটভূমিতে এটা বলা যায়, জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে, তারই একটা প্রতিফলিত হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে। সুতরাং ট্রাইব্যুনালে ১৫ সেনা কর্মকর্তার হাজিরা প্রদান এবং জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ঘটনা এমন দুটো উদ্যোগ, যা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের স্বৈরশাসনের পথকে রুদ্ধ করে দেবে। যদিও ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রের সব আইন-কানুন অমান্য করেই প্রতিষ্ঠিত হয়। তবু একদিন না একদিন বিচারের সম্মুখীন হতে হয় এই আশঙ্কা থেকে হয়তো ভবিষ্যতে কোনো শাসক আর ফ্যাসিবাদ কায়েমের স্বপ্ন দেখবে না।
এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের ঘটনা, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। সুতরাং এর গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার। কারণ এই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে আগামীতে স্বৈরাচারী শাসনমুক্ত আইনের শাসনের এক বাংলাদেশ।
অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে টানাপোড়েনের পর অবশেষে তারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নিয়ে জুলাই বিপ্লবের তরুণ তুর্কিরা ছাড়াও অনেকের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় থাকলেও এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিগত ৫৪ বছরের মধ্যে এই প্রথম বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় বড় দলসহ ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা এক মঞ্চে সমবেত হয়ে সরাসরি জনগণকে সাক্ষী রেখে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। সুতরাং স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে নিজেদের এমনভাবে দায়বদ্ধ করে ফেলেছেন, যার থেকে ভবিষ্যতে শটকে পড়া তাদের পক্ষে কঠিনই হবে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের ঘটনা সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে এই ঐতিহাসিক চুক্তির মঞ্চে জুলাই বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল এনসিপির অনুপস্থিত থাকায় সাধারণ মানুষ বেশ হতাশ হয়েছেন। কারণ এনসিপির এই তরুণ নেতারাই জুলাই সনদের মূল উদ্যোক্তা। সুতরাং তাদের অনুপস্থিতিতে যে এই চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানটি অনেকাংশে ম্লান হয়েছে, তাতে কারো সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে এটিও মনে হয়েছে, মূল উদ্যোক্তা হিসেবে এনসিপি নেতারা অনুষ্ঠানে না থেকে ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো মিস করেছেন। রাজনীতির প্রথম পাঠে থাকা এনসিপির তরুণ নেতারা এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেও প্রতিবাদ করতে পারতেন। তারা জনগণকে সাক্ষী রেখে জানিয়ে দিতে পারতেন, কী কী কারণে তারা চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছেন। সেটি করলে তাদের প্রতিবাদের ভাষা আরো জোরালো প্রতিভাত হতো। এতে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আরো বেশি করে দায়বদ্ধ হয়ে পড়ত। কিংবা এনসিপি নেতারা চুক্তি স্বাক্ষর করে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বলতে পারতেন, আসুন আমরা জনগণের সামনে এই মর্মে শপথগ্রহণ করি, যেকোনো মূল্যে এই সনদ আমরা বাস্তবায়ন করব। সেটাও একটা ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হতো।
সে যাই হোক, আগামী দিনগুলোয় এই সনদ একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণে কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে, যা আগে উল্লেখ করেছি। কারণ এই সনদ আইনে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত এটিকে একটা কাগজ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বরং এটি বলা যায়, রাজনৈতিক নেতারা একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেছেন, যার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। যদিও তারা বলেছেন, আগামীতে তারা এটার আইনি ভিত্তি দেবেন। না করলেও কারো কিছু করার থাকবে না।
এদিকে চুক্তি স্বাক্ষরের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হলো। তিনি আরো বলেছেন, এর মাধ্যমে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় পৌঁছালাম। তাই সেটা এখন আমাদের কাগজে নয়, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় যে ঐক্যের সুর বাজানো হলো, সেই সুর নিয়ে আমরা জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাব। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর এটা আমরা ভাবতে পারি যে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আস্থাশীল হওয়া যায়।
তবে এনসিপি নেতারা অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত অনেক চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রেক্ষাপটে সন্দেহের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তারা ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর তিন জোটের মধ্যে স্বাক্ষরিত রূপরেখা বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা মনে করেন, তখন বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েছিল, কিন্তু ওই রূপরেখা বাস্তবায়ন করেনি। তাই আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নাও করতে পারে বলে এনসিপি নেতাদের সন্দেহ। তারা নির্বাচনের আগে একটি গণভোটের মাধ্যমে এই চুক্তিকে আইনে রূপ দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। সেটি হয়নি বলে তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া থাকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু যেহেতু এটা তাদের ব্রেনচাইল্ড, তাই তারা এই চুক্তির সঙ্গে আছেন।
আবার অনেক বিশ্লেষক আশাবাদি, স্বাক্ষর প্রদানকারী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থেই এই সনদ বাস্তবায়ন করবে। কারণ রাজনৈতিক নেতারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে এই চুক্তিকে আইনে রূপ দিতে ব্যর্থ হলে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। এমনকি জনগণও তাদের ছাড় দেবে না। কারণ জনগণকে সাক্ষী রেখে তারা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং বাস্তবায়নেরও ঘোষণা দিয়েছেন। তাছাড়া ‘সময়ও একটি ফ্যাক্টর। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ৩৪ বছর পর জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী ঘটনাবলিকে একই নিক্তিতে মাপা ভুল হবে। কারণ এ দুই সময়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। আগামীতে যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন, সচেতন একটা জনগোষ্ঠীকে ফাঁকি দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন না করার বাহানা ধোপে টিকবে না। তবে এটাও সত্য, বহু বছর ধরে রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গের কারণে আস্থাহীনতার বিষয়টি অস্বীকার করার মতোও নয়।
তবে এ সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না যে, শুধু আইন করলেই সবকিছু ঠিকঠাকমতো হয়ে যাবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ রাজনৈতিক নেতাদের মানসিকতার ওপর নির্ভর করে দেশ কীভাবে চলবে। পৃথিবীর বহু দেশে দেখা গেছে, নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। জার্মানির হিটলার ও পর্তুগালের সালাজা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিলেন। বাংলাদেশও তার উদাহরণ শেখ হাসিনার ১৫ বছরের বিভীষিকাময় শাসন। এছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশের সংবিধানে সামরিক অভ্যুত্থানের বিধান নেই। এ ধরনের তৎপরতা অবৈধ। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। এই তো কদিন আগে মাদাগাস্কারে গণঅভ্যুত্থানের মুখে সামরিক বাহিনীই ক্ষমতা দখল করে বসেছে। সুতরাং রাজনীতিবিদদের মানসিকতাই রচনা করবে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে ব্রিটিশরা ৮৪০ বছর আগে বিশ্ববাসীকে গণতন্ত্র ও মানবতা রক্ষার যে সনদ স্বাক্ষর করেছিল, তার অনন্য দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিবিদদের একটি সনদে স্বাক্ষর করতে এক বছরেরও অধিক সময় লেগে গেল কেন? অথচ ব্রিটেনে তারা ছিল একদিকে রাজা, অন্যদিকে সামন্ত প্রভুরা। কিন্তু তারাই তাদের শ্রেণিস্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য এক অনন্যসাধারণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যার নাম হচ্ছে ‘ম্যাগনা কার্টা’। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা যারা সামন্ত পরিবার থেকে আসেননি, যাদের রয়েছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ত্যাগ প্রতীক্ষার ইতিহাস, যারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছেন নিষ্ঠুরভাবে, তারা কেন একটা গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সনদ তৈরিতে এত দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন? আর কেন এত সময় নিলেন। আর কেনই বা এটি একটি ঐতিহাসিক দলিলপত্র হিসেবে হয়ে উঠতে পারল না।
অথচ ব্রিটেনে ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দে যে ‘ম্যাগনা কার্টা’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা এখনো বিশ্বের প্রতিটি দেশের জন্য প্রযোজ্য। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এই সনদ ৬৩টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত চার হাজার শব্দের এক সমৃদ্ধ দলিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইংরেজ জাতি এবং বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র এই চুক্তির মূলনীতি অনুসরণ করে আসছে। এটিকে আধুনিক সাংবিধানিক নীতি হিসেবে গণ্য করা হয়। আমেরিকার সংবিধান ও বিল অব রাইটস রচিত হয়েছে এই সনদের মূলনীতিকে অনুসরণ করে। আরো সংক্ষেপে এই সনদের মূল কথা হচ্ছে, যেকোনো দেশের রাজাসহ দেশের সব মানুষ রাষ্ট্রের আইনের অধীন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অর্থাৎ এই আধুনিক যুগে যেকোনো দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সামরিক-বেসামরিক আমলা, পুলিশ, বিভিন্ন পেশা, শ্রেণির মানুষসহ সব জনগণ রাষ্ট্রীয় আইনের অধীন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। দেশের বিচার প্রার্থী প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। যেমন : ব্রিটেনে একটা কথা আছে, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কোনো অপরাধী ছাড়া পেয়ে গেলেও যেন কোনো অবস্থাতেই একজন নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি না পায়।
মানুষ আশা করে, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী সরকারি ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদকে আইনে রূপ দিয়ে এমন এক ব্যবস্থা সৃষ্টি করবেন, যেখানে আবার স্বৈরশাসন সৃষ্টির কোনো অবকাশ থাকবে না। আর যাতে কোনো রাজা-রানির শাসন কায়েম না হয়। সেটা না করতে পারলে ইতিহাস এই সনদ স্বাক্ষরকারী রাজনীতিবিদদের ক্ষমা করবে না।

এ মাসে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল, যা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রথমত. ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ২৫টি রাজনীতি দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষরের ঘটনা। দ্বিতীয়ত. গত ২২ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া এবং তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা। এখানে কারাগার বলতে ঢাকা সেনানিবাসে প্রস্তুত করা সাব-জেলে পাঠানো হয়েছে।
বিশেষ করে, ১৫ সেনা কর্মকর্তার ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা এবং অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টির অপচেষ্টার পর এই হাজিরা এটাই প্রমাণ করছে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। ঠিক একইভাবে টুটাফাটা অভিযোগে এদেশে সেনা অভ্যুত্থানের ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও এতগুলো কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করার ঘটনা যেমন ঐতিহাসিক, তেমনি আইনের শাসনের প্রতি সেনা কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার পরিচয়ও বহন করছে।
এখানে উল্লেখ করতে হয়, সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় একসঙ্গে এতগুলো ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার বেসামরিক আদালতে বিচারের ঘটনা এই প্রথম। অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের হস্তক্ষেপ না থাকলে বিচারকরাও যে দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে পারেন, তা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। সামরিক বাহিনীর অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে একটি বাড়িকে আগেই সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারকরা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সাব-জেলেই পাঠিয়েছেন।
এই পটভূমিতে এটা বলা যায়, জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে, তারই একটা প্রতিফলিত হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে। সুতরাং ট্রাইব্যুনালে ১৫ সেনা কর্মকর্তার হাজিরা প্রদান এবং জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ঘটনা এমন দুটো উদ্যোগ, যা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের স্বৈরশাসনের পথকে রুদ্ধ করে দেবে। যদিও ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রের সব আইন-কানুন অমান্য করেই প্রতিষ্ঠিত হয়। তবু একদিন না একদিন বিচারের সম্মুখীন হতে হয় এই আশঙ্কা থেকে হয়তো ভবিষ্যতে কোনো শাসক আর ফ্যাসিবাদ কায়েমের স্বপ্ন দেখবে না।
এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের ঘটনা, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। সুতরাং এর গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার। কারণ এই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে আগামীতে স্বৈরাচারী শাসনমুক্ত আইনের শাসনের এক বাংলাদেশ।
অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে টানাপোড়েনের পর অবশেষে তারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নিয়ে জুলাই বিপ্লবের তরুণ তুর্কিরা ছাড়াও অনেকের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় থাকলেও এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিগত ৫৪ বছরের মধ্যে এই প্রথম বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় বড় দলসহ ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা এক মঞ্চে সমবেত হয়ে সরাসরি জনগণকে সাক্ষী রেখে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। সুতরাং স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে নিজেদের এমনভাবে দায়বদ্ধ করে ফেলেছেন, যার থেকে ভবিষ্যতে শটকে পড়া তাদের পক্ষে কঠিনই হবে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের ঘটনা সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে এই ঐতিহাসিক চুক্তির মঞ্চে জুলাই বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল এনসিপির অনুপস্থিত থাকায় সাধারণ মানুষ বেশ হতাশ হয়েছেন। কারণ এনসিপির এই তরুণ নেতারাই জুলাই সনদের মূল উদ্যোক্তা। সুতরাং তাদের অনুপস্থিতিতে যে এই চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানটি অনেকাংশে ম্লান হয়েছে, তাতে কারো সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে এটিও মনে হয়েছে, মূল উদ্যোক্তা হিসেবে এনসিপি নেতারা অনুষ্ঠানে না থেকে ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো মিস করেছেন। রাজনীতির প্রথম পাঠে থাকা এনসিপির তরুণ নেতারা এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেও প্রতিবাদ করতে পারতেন। তারা জনগণকে সাক্ষী রেখে জানিয়ে দিতে পারতেন, কী কী কারণে তারা চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছেন। সেটি করলে তাদের প্রতিবাদের ভাষা আরো জোরালো প্রতিভাত হতো। এতে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আরো বেশি করে দায়বদ্ধ হয়ে পড়ত। কিংবা এনসিপি নেতারা চুক্তি স্বাক্ষর করে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বলতে পারতেন, আসুন আমরা জনগণের সামনে এই মর্মে শপথগ্রহণ করি, যেকোনো মূল্যে এই সনদ আমরা বাস্তবায়ন করব। সেটাও একটা ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হতো।
সে যাই হোক, আগামী দিনগুলোয় এই সনদ একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণে কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে, যা আগে উল্লেখ করেছি। কারণ এই সনদ আইনে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত এটিকে একটা কাগজ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বরং এটি বলা যায়, রাজনৈতিক নেতারা একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেছেন, যার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। যদিও তারা বলেছেন, আগামীতে তারা এটার আইনি ভিত্তি দেবেন। না করলেও কারো কিছু করার থাকবে না।
এদিকে চুক্তি স্বাক্ষরের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হলো। তিনি আরো বলেছেন, এর মাধ্যমে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় পৌঁছালাম। তাই সেটা এখন আমাদের কাগজে নয়, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় যে ঐক্যের সুর বাজানো হলো, সেই সুর নিয়ে আমরা জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাব। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর এটা আমরা ভাবতে পারি যে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আস্থাশীল হওয়া যায়।
তবে এনসিপি নেতারা অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত অনেক চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রেক্ষাপটে সন্দেহের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তারা ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর তিন জোটের মধ্যে স্বাক্ষরিত রূপরেখা বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা মনে করেন, তখন বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েছিল, কিন্তু ওই রূপরেখা বাস্তবায়ন করেনি। তাই আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নাও করতে পারে বলে এনসিপি নেতাদের সন্দেহ। তারা নির্বাচনের আগে একটি গণভোটের মাধ্যমে এই চুক্তিকে আইনে রূপ দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। সেটি হয়নি বলে তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া থাকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু যেহেতু এটা তাদের ব্রেনচাইল্ড, তাই তারা এই চুক্তির সঙ্গে আছেন।
আবার অনেক বিশ্লেষক আশাবাদি, স্বাক্ষর প্রদানকারী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থেই এই সনদ বাস্তবায়ন করবে। কারণ রাজনৈতিক নেতারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে এই চুক্তিকে আইনে রূপ দিতে ব্যর্থ হলে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। এমনকি জনগণও তাদের ছাড় দেবে না। কারণ জনগণকে সাক্ষী রেখে তারা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং বাস্তবায়নেরও ঘোষণা দিয়েছেন। তাছাড়া ‘সময়ও একটি ফ্যাক্টর। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ৩৪ বছর পর জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী ঘটনাবলিকে একই নিক্তিতে মাপা ভুল হবে। কারণ এ দুই সময়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। আগামীতে যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন, সচেতন একটা জনগোষ্ঠীকে ফাঁকি দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন না করার বাহানা ধোপে টিকবে না। তবে এটাও সত্য, বহু বছর ধরে রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গের কারণে আস্থাহীনতার বিষয়টি অস্বীকার করার মতোও নয়।
তবে এ সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না যে, শুধু আইন করলেই সবকিছু ঠিকঠাকমতো হয়ে যাবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ রাজনৈতিক নেতাদের মানসিকতার ওপর নির্ভর করে দেশ কীভাবে চলবে। পৃথিবীর বহু দেশে দেখা গেছে, নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। জার্মানির হিটলার ও পর্তুগালের সালাজা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিলেন। বাংলাদেশও তার উদাহরণ শেখ হাসিনার ১৫ বছরের বিভীষিকাময় শাসন। এছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশের সংবিধানে সামরিক অভ্যুত্থানের বিধান নেই। এ ধরনের তৎপরতা অবৈধ। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। এই তো কদিন আগে মাদাগাস্কারে গণঅভ্যুত্থানের মুখে সামরিক বাহিনীই ক্ষমতা দখল করে বসেছে। সুতরাং রাজনীতিবিদদের মানসিকতাই রচনা করবে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে ব্রিটিশরা ৮৪০ বছর আগে বিশ্ববাসীকে গণতন্ত্র ও মানবতা রক্ষার যে সনদ স্বাক্ষর করেছিল, তার অনন্য দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিবিদদের একটি সনদে স্বাক্ষর করতে এক বছরেরও অধিক সময় লেগে গেল কেন? অথচ ব্রিটেনে তারা ছিল একদিকে রাজা, অন্যদিকে সামন্ত প্রভুরা। কিন্তু তারাই তাদের শ্রেণিস্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য এক অনন্যসাধারণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যার নাম হচ্ছে ‘ম্যাগনা কার্টা’। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা যারা সামন্ত পরিবার থেকে আসেননি, যাদের রয়েছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ত্যাগ প্রতীক্ষার ইতিহাস, যারা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছেন নিষ্ঠুরভাবে, তারা কেন একটা গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সনদ তৈরিতে এত দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন? আর কেন এত সময় নিলেন। আর কেনই বা এটি একটি ঐতিহাসিক দলিলপত্র হিসেবে হয়ে উঠতে পারল না।
অথচ ব্রিটেনে ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দে যে ‘ম্যাগনা কার্টা’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা এখনো বিশ্বের প্রতিটি দেশের জন্য প্রযোজ্য। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এই সনদ ৬৩টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত চার হাজার শব্দের এক সমৃদ্ধ দলিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইংরেজ জাতি এবং বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র এই চুক্তির মূলনীতি অনুসরণ করে আসছে। এটিকে আধুনিক সাংবিধানিক নীতি হিসেবে গণ্য করা হয়। আমেরিকার সংবিধান ও বিল অব রাইটস রচিত হয়েছে এই সনদের মূলনীতিকে অনুসরণ করে। আরো সংক্ষেপে এই সনদের মূল কথা হচ্ছে, যেকোনো দেশের রাজাসহ দেশের সব মানুষ রাষ্ট্রের আইনের অধীন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অর্থাৎ এই আধুনিক যুগে যেকোনো দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সামরিক-বেসামরিক আমলা, পুলিশ, বিভিন্ন পেশা, শ্রেণির মানুষসহ সব জনগণ রাষ্ট্রীয় আইনের অধীন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। দেশের বিচার প্রার্থী প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। যেমন : ব্রিটেনে একটা কথা আছে, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কোনো অপরাধী ছাড়া পেয়ে গেলেও যেন কোনো অবস্থাতেই একজন নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি না পায়।
মানুষ আশা করে, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী সরকারি ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদকে আইনে রূপ দিয়ে এমন এক ব্যবস্থা সৃষ্টি করবেন, যেখানে আবার স্বৈরশাসন সৃষ্টির কোনো অবকাশ থাকবে না। আর যাতে কোনো রাজা-রানির শাসন কায়েম না হয়। সেটা না করতে পারলে ইতিহাস এই সনদ স্বাক্ষরকারী রাজনীতিবিদদের ক্ষমা করবে না।

সাধারণত কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা জানেন সময় কত বেশি মূল্যবান। একটি প্রবাদ আছেÑ‘সময় হলো সোনার মতো দামি’। অনেকেই এ কথা বিশ্বাস করেন। আর ইসলামে সময় স্বর্ণ কিংবা বিশ্বের যেকোনো মূল্যবান বস্তুর চেয়ে বেশি দামি। সময়ের মূল্য কী, ইসলাম শুধু তা-ই শেখায় না। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ইসলাম মানবজাতিকে বিশেষভাবে শেখ
৩ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংশ্লিষ্টতার পক্ষে ঢোল জোরেশোরেই বাজছে ওয়াশিংটনে। নীতিনির্ধারণী মহলে কেউ কেউ ফিসফিস করে আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে চিৎকার করে বলছেন গাজায় সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য।
৩ ঘণ্টা আগে
আস্থা সংকটে উদ্যোক্তারা, গতি নেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারেÑএই বাস্তবতা এখন দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর আগেও যখন দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন কারখানা স্থাপন, ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা প্রযুক্তি খাতে বড় উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তখন অর্থনীতির মধ্যে প্রাণচাঞ্চ
৩ ঘণ্টা আগে
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার যে প্রবণতা ১৯৭২-৭৩-এ শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত চলছে। সে সময় থেকেই এদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনৈতিক দলাদলির প্রেক্ষিতে, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়
৩ ঘণ্টা আগে