কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অক্টোবরে চালু হচ্ছে

কবিতা
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১০: ১৫
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি এখনো। বাকি রয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ। তবে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আশা করছে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলে সমুদ্রঘেরা কক্সবাজার বিমানবন্দর গড়ে উঠবে আঞ্চলিক পর্যটনের হাব হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলোকে ইতোমধ্যে ফ্লাইট চালুর জন্য চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনকেও (আইকাও) চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিমানবন্দরের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও আপাতত বর্তমান নাম ব্যবহার করে চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সমুদ্রের ভেতরে রানওয়ের কাজ ৯৭ ভাগ শেষ হয়েছে। বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে ৯৫ ভাগ। সমুদ্রে দুই হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ লাইট স্থাপনসহ মেইনটেন্যান্স স্টিল ব্রিজ নির্মাণকাজের ৮৫ ভাগ শেষ হয়েছে। রানওয়ের চারপাশে নিরাপত্তা সীমানা প্রাচীর ও নিরাপত্তা টহল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে ৩২ ভাগ। রানওয়ের চারপাশে ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণকাজের ৬২ ভাগ শেষ হয়েছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিয়মানুযায়ী কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করতে আইকাওর কিছু গাইডলাইন মানতে হয়। বাংলাদেশ সরকার সেই গাইডলাইন মেনেই কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করেছে। এ-বিষয়ক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য গত ৭ আগস্ট আইকাও কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বেবিচক।

এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল মেয়াদ ধরে কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে যুক্ত হয় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার নতুন ধাপ। দক্ষিণ এশিয়ায় কক্সবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। সাগরপাড়ের এই বিমানবন্দরকে পর্যটক ছাড়াও যে কোনো ফ্লাইটের রি-ফুয়েলিংয়ের জন্য টেকনিক্যাল ল্যান্ডিংয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্র (হাব) হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে সরকার। বিমানবন্দরের বর্তমান ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে মহেশখালী চ্যানেলের দিকে আরো এক হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারিত করে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করা হয়। এক হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ের এক হাজার ৩০০ ফুটই থাকবে সাগরে।

দেশে এই প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ভেতরে ব্লক তৈরি করে রানওয়ে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা আমার দেশকে জানান, বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে বেবিচক কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বেবিচক চেয়ারম্যান আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন একাধিকবার।

২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ

বেবিচক সূত্র জানায়, বিমানবন্দরটির টার্মিনাল ভবনের সব কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্যাসেঞ্জার অ্যারাইভাল ও ডিপারচার লাউঞ্জ, ডিপারচার কনভেয়ার বেল্ট এবং ইমিগ্রেশন কাউন্টারের কাজ এখনো শেষ হয়নি। যদিও রানওয়ে প্রস্তুত আছে। এসব কাজ করতে দুই মাসের বেশি লাগার কথা নয়। কিন্তু যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা কঠিন হবে। কাজ শেষ হলেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের চলাচল শুরু করা যাবে। বাকি কাজ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে বলেছে বেবিচক।

এয়ারলাইনসগুলোকে চিঠি

গত ১১ আগস্ট বেবিচকের বোর্ড সদস্য (এটিএম) গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. নুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেশের দুই শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইনস বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে তারা কোন ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে এবং কোন গন্তব্যে চালু করবে—তা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকেও একই চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষগুলো এখনো চিঠির জবাব দেয়নি বেবিচককে।

নানা সমস্যা বিমানবন্দরে

বেবিচক কর্মকর্তারা আমার দেশকে জানান, প্রকল্প নিয়ে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিমানবন্দরের বড় বাধা তিন হাজার ৩০০ পরিবার। তাদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। এখনো চার দশমিক ৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি। কক্সবাজার বিমানবন্দর হয়ে গড়ে ২৫-৩০টি যাত্রীবাহী ও ৬ থেকে ১০টি কার্গো বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ করছে। যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা সামলানোর নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বেবিচকের সদস্য (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মাহবুব খান আমার দেশকে বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার কাজ জোরেশোরে চলছে। বাকি কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্‌। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুর আগে আইকাও কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। তাদের আমরা চিঠি দিয়েছি। আইকাওর মাধ্যমে এরোনটিক্যাল ইনফরমেশন রেগুলেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (এআইআরএসি) প্রকাশ করতে হয় আর এটি ৫৬ দিনের মধ্যেই প্রকাশ করতে হয়।

৭ আগস্ট আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সার্ভিসের অফিসগুলোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বেবিচক থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বিদেশি বিভিন্ন বিমান সংস্থাকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তবে উদ্বোধনী ফ্লাইট কোন এয়ারলাইনস করবে, প্রথম ফ্লাইট কোন রুটে পরিচালনা করা হবে—সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

গত ১৭ আগস্ট কক্সবাজার বিমানবন্দর পরিদর্শনে যান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক। সেখান থেকে ফিরে তিনি জানান, আমি বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল ও সাগরের বুকে নির্মিত রানওয়ের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছি। কাজের অগ্রগতি দেখে মনে হয়েছে আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, ফ্লাইটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারে চলাচলের দূরত্ব মাত্র ৪৫ মিনিটের। এ অবস্থায় কক্সবাজার নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক কোন রুটে কি পরিমাণ যাত্রী মিলবে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে কাজ করছে এয়ারলাইনসগুলো।

এ বিষয়ে বেসরকারি ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে শীতকালীন সময়সূচি চালু হয়ে যায়। আমরা ফিজিবিলিটি সার্ভে করে এগোব, যাতে ফ্লাইট পরিচালনা করে ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যায়। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এবিএম রওশন কবীর আমার দেশকে বলেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বেবিচক থেকে বিমানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার থেকে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে বিমান।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত