রকীবুল হক
দাওয়াতি কাজ শেষে সৈয়দপুর থেকে একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান মুফতি যুবায়ের আহমদ। বিমান থেকে নামতেই ঘোষণা দেওয়া হয় নিচে দেখা করতে। এরই মধ্যে সেখানে হাজির হয় পুলিশ। ছবি দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হয়েই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দর থানায়। কিছুক্ষণ পর সেখানে হাজির হন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একদল সদস্য। একটি গাড়িতে তুলে তাকে নেওয়া হয় সিটিটিসি কার্যালয়ে।
সেখানে তিন দিন গুম করে রাখা হয় তাকে। পরিবারের খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে নেওয়া হয় তিন দিনের রিমান্ডে। কোনো অপরাধের প্রমাণ না মিললেও তাকে জেলে কাটাতে হয় ছয় মাস। এ সময় তার শিশু সন্তান হাতে এক টাকা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত বাবার মুক্তির জন্য। পুলিশ দেখলেই বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানাত সে।
বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এভাবেই নির্যাতনের শিকার হন ঢাকার মুগদায় অবস্থিত ইসলামী দাওয়াহ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মুফতি যুবায়ের আহমদ। তাকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের সঙ্গে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। শুধু নিজে নন, তার প্রতিষ্ঠানের আরও বেশ কয়েকজন ছাত্র-শিক্ষক একইভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।
আমার দেশকে মুফতি যুবায়ের আহমদ বলেন, আমি মূলত অমুসলিমদের মধ্যে দাওয়াতি কাজ করি। দেশের সাংবিধানিক অধিকারের পাশাপাশি ইসলামের নির্দেশনা এবং শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ অনুযায়ীই এ কাজ করি। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মুসলমান থেকে খ্রিষ্টান হয়ে যাচ্ছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি ইসলামী দাওয়াহ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে। এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের দাওয়াতি কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর এই কাজ করতে গিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে নানা রকম বাধাবিঘ্ন আসে। জঙ্গি হিসেবে জেলে পাঠানোরও হুমকি দেওয়া হতো। হিন্দুরাই এই ফোন বেশি দিত বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, দাওয়াতে তাবলিগের মতো বিভিন্ন এলাকায় আমরা যাই। দেশের বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম এই কাজে অংশগ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে আমাদের তিনটি জামাত যায় দিনাজপুরের তিনটি মসজিদে। আমি ১৭ তারিখে সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য এক দিন আগে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানার আনন্দবাজার এলাকার একটি গ্রামে যাই। মুসলমানদের ওই গ্রামে চারটি গির্জা হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে একটি গির্জার প্রধান আজগর আলী নামে এক ব্যক্তি মুসলমান থেকে খ্রিষ্টান হয়েছেন। একসময় তিনি মসজিদের ইমাম ছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনি খ্রিষ্টানই আছেন।
যুবায়ের আহমদ বলেন, ওই ব্যক্তি খ্রিষ্টধর্ম প্রচারও করেন। তবে আমাদের দাওয়াতের প্রভাবে দুটি গির্জা বন্ধ হয়েছে, কয়েকজন মুসলমান হিসেবে ফিরেও এসেছেন। ওই খ্রিষ্টান প্রচারককে দাওয়াত দিতেই সেখানে যাই আমরা। সেদিন লালমনিরহাট হয়ে রংপুর এসে জানতে পারি রাতেই আমাদের তিনটি জামাত থেকে ৪২ জনকে ধরে নিয়ে আসেন সিটিটিসির সদস্যরা। স্থানীয়ভাবে তিনটি মামলা দিয়ে কয়েকজনকে সেখানে রাখেন আর সাতজনকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনার কারণে আমি আর সেখানে না গিয়ে আগে থেকেই কাটা টিকিটে সৈয়দপুর থেকে বিমানে ঢাকায় আসি।
মুফতি যুবায়ের বলেন, মাগরিবের আগে বিমান ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরই ভেতর থেকে ঘোষণা দিয়ে নিচে পুলিশের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। বিমানের গেটে আসতেই সেখানে অপেক্ষমাণ পুলিশ সদস্যরা আমার ছবি দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হন। তারা আমাকে ধরে নিয়ে যান বিমানবন্দর থানায়। এ সময় তার পকেটে থাকা মোবাইল নিয়ে নেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিতে পারেনÑ এ ধারণায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে যান তিনি। বিমানবন্দর থানায় ওসির সঙ্গে কথা বললে তিনি আটকের কোনো কারণ জানাতে পারেননি। বললেনÑ ওপরের নির্দেশ। ওই থানায় মাগরিবের নামাজ পড়ার পর আমি দেখতে পাই, সিটিটিসির একটি গাড়ি সেখানে আসে। এ সময় বিমানবন্দর থানা-পুলিশ আমাকে এন্ট্রি করতে চাইলেও সিটিটিসির লোকরা তাতে বাধা দেন। তারা তাদের গাড়িতে তুলে হ্যান্ডকাফ পরান।
মুফতি যুবায়ের জানান, ওপরের নির্দেশের কথা বলে তাকে নেওয়া হয় সিটিটিসি কার্যালয়ে। সেখানে প্রথম দিনে একা একটি রুমে রাখা হয়। রাতের বেলা সেখানে নামাজের সুযোগ চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। যে রুমে রাখা হয়েছিল, তা পাক-পবিত্র বলেও মনে হয়নি। তারপরও সেখানে নামাজ পড়েন তিনি।
তিনি বলেন, সেখানে দিনাজপুর থেকে আটক করে আনা সেই দাওয়াতি কর্মীদেরও রাখা হয়েছিল। তাদের দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দুই গ্রুপে ভাগ করে দুটি থানায় মামলা দেওয়া হয়। তবে মুফতি যুবায়েরকে তিন দিন পর্যন্ত গুম করে রাখা হয়েছিল। কোনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এ সময় তাকে বারবার ডেকে নানা হুমকি-ধমকি, গালাগাল করা হয়। শফিক নামের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদার তেরেসা যদি জান্নাতে না যায়, তাহলে সেই জান্নাত আমার দরকার নেই’। তাকে বারবার প্রেশার দিচ্ছিল যে, কেন আপনি অমুসলিমদের দাওয়াত দেন, আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত কি না ইত্যাদি।
এদিকে তিন দিন গুমের কারণে ২০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিবার। এ বিষয়ে তার স্ত্রী তুরাগ থানা ও বিমানবন্দর থানায় জিডি করতে গেলেও তা নেয়নি পুলিশ। এ ছাড়া ডিবি কার্যালয়ে গিয়েও তার কোনো সন্ধান পাননি তারা। এই সংবাদ সম্মেলনের দিনই মুফতি যুবায়েরকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক বছর আগে গাবতলীতে জঙ্গি কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট একটি বৈঠকের নামে সাজানো ঘটনায় জড়ানো হয় তাকে। দারুস সালাম থানায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। একই মামলায় তার প্রতিষ্ঠানের আরও তিনজনকে জড়ানো হয়। বাকি চারজনের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় খিলগাঁও থানায় মামলা। মুফতি যুবায়েরকে আনসার আল ইসলামের লিডার, প্রচারক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ এর সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। সেই মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ সময় তাকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতন করা হয়। ভয়ভীতিও দেখান ও খারাপ আচরণ করেন তারা। অথচ তাদের কোনো কাজ গোপন নয়, সবকিছু প্রকাশ্যে হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, কোনো অপরাধ ছাড়াই গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তারা বলেনÑ ওপরের নির্দেশ। আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি আমার অপরাধ কী? এটাই আমার দুঃখের বিষয়। বিনা অপরাধে ছয় মাস জেলে কাটাতে হয়েছে আমাকে।
মুফতি যুবায়ের আহমদ বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। দাওয়াহ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ করি। একসময় হেফাজতে ইসলামের থানাপর্যায়ের সহসভাপতি ছিলাম। এখনো হেফাজতের কর্মকাণ্ডে সমর্থন আছে, তবে কোনো পদে নেই।
তিনি বলেন, তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারের শতাব্দী ভবনে। তাকে আদালতে আনা-নেওয়ার জন্য হিন্দু পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হতো। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাকেও ইসলামের দাওয়াত দিতেন তিনি।
জেলে থাকা অবস্থায় তার পরিবার চরম অসহায় অবস্থায় ছিল। পাঁচ বছরের ছোট ছেলে হাতে এক টাকা নিয়ে রাস্তায় ঘুরত আর বলত, এই টাকা পুলিশকে দিয়ে তার বাবাকে ছাড়িয়ে আনবে। পুলিশ দেখলেই বাবাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলত সে। এই কথা পরে শুনে খুব কষ্ট পান তিনি। তবে তার মায়ের সান্ত্বনায় শক্ত থাকতেন তিনি। তাকে আল্লাহর রাস্তায় ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ধৈর্যধারণের জন্য পরামর্শ দিতেন তার মা। এ সময় অর্থনৈতিকভাবে বড় ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলে থাকায় আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। জামিন নিতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।
তিনি জানান, জামিনের জন্য বারবার আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেওয়া হতো। বেশ কয়েকবার ঘোরানোর পর জামিন দেওয়া হয়। জামিনে মুক্তির পরও সিটিটিসিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তার খোঁজখবর নেওয়া হতো। তার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইত। এ সময় বেশ আতঙ্ক নিয়েই দাওয়াতি কাজ চালান তিনি। কোথাও প্রোগ্রামে গেলে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি থাকত। বিভিন্ন সময় তার প্রতিষ্ঠানেও পুলিশ ও গোয়েন্দাদের আনাগোনা থাকত বলেও তিনি জানান।
তিনি জানান, বিগত সরকারের সময় আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থিদের জঙ্গি বানানোর তৎপরতায় ব্যস্ত থাকত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁদ পেতে জঙ্গি নাটকে জড়াত তারা। জেলে থাকা অবস্থায় এ ধরনের অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার। তাদের অভিযোগÑ প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন নামে কথাবার্তা চালাতে থাকে। একপর্যায়ে চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়। দেখা করার কথা বলেই আটক করে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অনেকে জঙ্গি কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানে না অথচ তাদের নাটক সাজিয়ে জঙ্গি বানানো হয়েছে।
দাওয়াতি কাজ শেষে সৈয়দপুর থেকে একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান মুফতি যুবায়ের আহমদ। বিমান থেকে নামতেই ঘোষণা দেওয়া হয় নিচে দেখা করতে। এরই মধ্যে সেখানে হাজির হয় পুলিশ। ছবি দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হয়েই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দর থানায়। কিছুক্ষণ পর সেখানে হাজির হন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একদল সদস্য। একটি গাড়িতে তুলে তাকে নেওয়া হয় সিটিটিসি কার্যালয়ে।
সেখানে তিন দিন গুম করে রাখা হয় তাকে। পরিবারের খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে নেওয়া হয় তিন দিনের রিমান্ডে। কোনো অপরাধের প্রমাণ না মিললেও তাকে জেলে কাটাতে হয় ছয় মাস। এ সময় তার শিশু সন্তান হাতে এক টাকা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত বাবার মুক্তির জন্য। পুলিশ দেখলেই বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানাত সে।
বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এভাবেই নির্যাতনের শিকার হন ঢাকার মুগদায় অবস্থিত ইসলামী দাওয়াহ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মুফতি যুবায়ের আহমদ। তাকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের সঙ্গে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। শুধু নিজে নন, তার প্রতিষ্ঠানের আরও বেশ কয়েকজন ছাত্র-শিক্ষক একইভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।
আমার দেশকে মুফতি যুবায়ের আহমদ বলেন, আমি মূলত অমুসলিমদের মধ্যে দাওয়াতি কাজ করি। দেশের সাংবিধানিক অধিকারের পাশাপাশি ইসলামের নির্দেশনা এবং শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ অনুযায়ীই এ কাজ করি। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মুসলমান থেকে খ্রিষ্টান হয়ে যাচ্ছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি ইসলামী দাওয়াহ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে। এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের দাওয়াতি কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর এই কাজ করতে গিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে নানা রকম বাধাবিঘ্ন আসে। জঙ্গি হিসেবে জেলে পাঠানোরও হুমকি দেওয়া হতো। হিন্দুরাই এই ফোন বেশি দিত বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, দাওয়াতে তাবলিগের মতো বিভিন্ন এলাকায় আমরা যাই। দেশের বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম এই কাজে অংশগ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে আমাদের তিনটি জামাত যায় দিনাজপুরের তিনটি মসজিদে। আমি ১৭ তারিখে সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য এক দিন আগে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানার আনন্দবাজার এলাকার একটি গ্রামে যাই। মুসলমানদের ওই গ্রামে চারটি গির্জা হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে একটি গির্জার প্রধান আজগর আলী নামে এক ব্যক্তি মুসলমান থেকে খ্রিষ্টান হয়েছেন। একসময় তিনি মসজিদের ইমাম ছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনি খ্রিষ্টানই আছেন।
যুবায়ের আহমদ বলেন, ওই ব্যক্তি খ্রিষ্টধর্ম প্রচারও করেন। তবে আমাদের দাওয়াতের প্রভাবে দুটি গির্জা বন্ধ হয়েছে, কয়েকজন মুসলমান হিসেবে ফিরেও এসেছেন। ওই খ্রিষ্টান প্রচারককে দাওয়াত দিতেই সেখানে যাই আমরা। সেদিন লালমনিরহাট হয়ে রংপুর এসে জানতে পারি রাতেই আমাদের তিনটি জামাত থেকে ৪২ জনকে ধরে নিয়ে আসেন সিটিটিসির সদস্যরা। স্থানীয়ভাবে তিনটি মামলা দিয়ে কয়েকজনকে সেখানে রাখেন আর সাতজনকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনার কারণে আমি আর সেখানে না গিয়ে আগে থেকেই কাটা টিকিটে সৈয়দপুর থেকে বিমানে ঢাকায় আসি।
মুফতি যুবায়ের বলেন, মাগরিবের আগে বিমান ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরই ভেতর থেকে ঘোষণা দিয়ে নিচে পুলিশের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। বিমানের গেটে আসতেই সেখানে অপেক্ষমাণ পুলিশ সদস্যরা আমার ছবি দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হন। তারা আমাকে ধরে নিয়ে যান বিমানবন্দর থানায়। এ সময় তার পকেটে থাকা মোবাইল নিয়ে নেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিতে পারেনÑ এ ধারণায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে যান তিনি। বিমানবন্দর থানায় ওসির সঙ্গে কথা বললে তিনি আটকের কোনো কারণ জানাতে পারেননি। বললেনÑ ওপরের নির্দেশ। ওই থানায় মাগরিবের নামাজ পড়ার পর আমি দেখতে পাই, সিটিটিসির একটি গাড়ি সেখানে আসে। এ সময় বিমানবন্দর থানা-পুলিশ আমাকে এন্ট্রি করতে চাইলেও সিটিটিসির লোকরা তাতে বাধা দেন। তারা তাদের গাড়িতে তুলে হ্যান্ডকাফ পরান।
মুফতি যুবায়ের জানান, ওপরের নির্দেশের কথা বলে তাকে নেওয়া হয় সিটিটিসি কার্যালয়ে। সেখানে প্রথম দিনে একা একটি রুমে রাখা হয়। রাতের বেলা সেখানে নামাজের সুযোগ চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। যে রুমে রাখা হয়েছিল, তা পাক-পবিত্র বলেও মনে হয়নি। তারপরও সেখানে নামাজ পড়েন তিনি।
তিনি বলেন, সেখানে দিনাজপুর থেকে আটক করে আনা সেই দাওয়াতি কর্মীদেরও রাখা হয়েছিল। তাদের দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দুই গ্রুপে ভাগ করে দুটি থানায় মামলা দেওয়া হয়। তবে মুফতি যুবায়েরকে তিন দিন পর্যন্ত গুম করে রাখা হয়েছিল। কোনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এ সময় তাকে বারবার ডেকে নানা হুমকি-ধমকি, গালাগাল করা হয়। শফিক নামের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদার তেরেসা যদি জান্নাতে না যায়, তাহলে সেই জান্নাত আমার দরকার নেই’। তাকে বারবার প্রেশার দিচ্ছিল যে, কেন আপনি অমুসলিমদের দাওয়াত দেন, আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত কি না ইত্যাদি।
এদিকে তিন দিন গুমের কারণে ২০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিবার। এ বিষয়ে তার স্ত্রী তুরাগ থানা ও বিমানবন্দর থানায় জিডি করতে গেলেও তা নেয়নি পুলিশ। এ ছাড়া ডিবি কার্যালয়ে গিয়েও তার কোনো সন্ধান পাননি তারা। এই সংবাদ সম্মেলনের দিনই মুফতি যুবায়েরকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক বছর আগে গাবতলীতে জঙ্গি কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট একটি বৈঠকের নামে সাজানো ঘটনায় জড়ানো হয় তাকে। দারুস সালাম থানায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। একই মামলায় তার প্রতিষ্ঠানের আরও তিনজনকে জড়ানো হয়। বাকি চারজনের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় খিলগাঁও থানায় মামলা। মুফতি যুবায়েরকে আনসার আল ইসলামের লিডার, প্রচারক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ এর সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। সেই মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ সময় তাকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতন করা হয়। ভয়ভীতিও দেখান ও খারাপ আচরণ করেন তারা। অথচ তাদের কোনো কাজ গোপন নয়, সবকিছু প্রকাশ্যে হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, কোনো অপরাধ ছাড়াই গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তারা বলেনÑ ওপরের নির্দেশ। আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি আমার অপরাধ কী? এটাই আমার দুঃখের বিষয়। বিনা অপরাধে ছয় মাস জেলে কাটাতে হয়েছে আমাকে।
মুফতি যুবায়ের আহমদ বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। দাওয়াহ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ করি। একসময় হেফাজতে ইসলামের থানাপর্যায়ের সহসভাপতি ছিলাম। এখনো হেফাজতের কর্মকাণ্ডে সমর্থন আছে, তবে কোনো পদে নেই।
তিনি বলেন, তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারের শতাব্দী ভবনে। তাকে আদালতে আনা-নেওয়ার জন্য হিন্দু পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হতো। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাকেও ইসলামের দাওয়াত দিতেন তিনি।
জেলে থাকা অবস্থায় তার পরিবার চরম অসহায় অবস্থায় ছিল। পাঁচ বছরের ছোট ছেলে হাতে এক টাকা নিয়ে রাস্তায় ঘুরত আর বলত, এই টাকা পুলিশকে দিয়ে তার বাবাকে ছাড়িয়ে আনবে। পুলিশ দেখলেই বাবাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলত সে। এই কথা পরে শুনে খুব কষ্ট পান তিনি। তবে তার মায়ের সান্ত্বনায় শক্ত থাকতেন তিনি। তাকে আল্লাহর রাস্তায় ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ধৈর্যধারণের জন্য পরামর্শ দিতেন তার মা। এ সময় অর্থনৈতিকভাবে বড় ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলে থাকায় আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। জামিন নিতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।
তিনি জানান, জামিনের জন্য বারবার আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেওয়া হতো। বেশ কয়েকবার ঘোরানোর পর জামিন দেওয়া হয়। জামিনে মুক্তির পরও সিটিটিসিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তার খোঁজখবর নেওয়া হতো। তার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইত। এ সময় বেশ আতঙ্ক নিয়েই দাওয়াতি কাজ চালান তিনি। কোথাও প্রোগ্রামে গেলে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি থাকত। বিভিন্ন সময় তার প্রতিষ্ঠানেও পুলিশ ও গোয়েন্দাদের আনাগোনা থাকত বলেও তিনি জানান।
তিনি জানান, বিগত সরকারের সময় আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থিদের জঙ্গি বানানোর তৎপরতায় ব্যস্ত থাকত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁদ পেতে জঙ্গি নাটকে জড়াত তারা। জেলে থাকা অবস্থায় এ ধরনের অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার। তাদের অভিযোগÑ প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন নামে কথাবার্তা চালাতে থাকে। একপর্যায়ে চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়। দেখা করার কথা বলেই আটক করে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অনেকে জঙ্গি কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানে না অথচ তাদের নাটক সাজিয়ে জঙ্গি বানানো হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৪ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
১ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
১ দিন আগে