চট্টগ্রাম থেকে জুলাইয়ে শুরু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট

কবিতা
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ১১: ৫৮

ট্রান্সশিপমেন্ট সংকট পেরিয়ে আকাশপথে পণ্য পরিবহনে বিজয়ের পথে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্স। আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই এখান থেকে ফ্লাইট শুরু হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিমানবন্দরটি দেশের পূর্ব-পশ্চিমের নিজস্ব এয়ার কার্গো হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। সেই লক্ষ্যে কার্গো ভিলেজের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। কার্গো হ্যান্ডলিং খরচ কমাতে বিদ্যমান ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। এখান থেকে প্রতিদিন ৪০০ টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কার্গো ফ্লাইটের প্রস্তুতি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখান থেকে চীন, ইউরোপ, আমেরিকায় গার্মেন্টসামগ্রীর পাশাপাশি তুরস্ক, উজবেকিস্তান, জার্মানিতে কাঁচা শাকসবজি পাঠানো হবে। এজন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরগুলোর ল্যান্ডিং, পার্কিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ কমানোর জোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি ঢাকার বিদ্যমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আরো গতিশীল করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সক্ষমতা।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত হঠাৎ করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশ রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দ্রুততার সঙ্গে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো চালুর পর এখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকেও কার্গোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

জানা গেছে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বহির্বিশ্বে সরাসরি গার্মেন্ট পণ্য পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে চীন, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে সরাসরি পাঠানো যাবে। সেভাবেই সক্ষম করে তোলা হচ্ছে। এ বিমানবন্দরে ২৭০ টন ধারণক্ষমতার একটি কার্গো স্টেশন প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি আধুনিক স্ক্যানিং এবং একটি ওজন মাপার যন্ত্র সচল করা হয়েছে। আরো দুটি এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন স্ক্যানার (ইডিএস) বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সাপোর্ট সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

শাহ আমানতে সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছে, এখানে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, কার্গো উইং মেশিন কেনা এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি জার্মানির এয়ারপোর্ট কনসাল্টিং পার্টনার জিএমবিএইচ কর্তৃক বিমানবন্দরের জন্য একটি আধুনিক মহাপরিকল্পনাও প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামে চার শতাধিক পোশাক কারখানা ও ইপিজেডগুলো এতদিন আকাশপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। ফলে রপ্তানির জন্য পণ্য ঢাকা বিমানবন্দরে পাঠাতে হতো।

উল্লেখ্য, এক সময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে থাই, এয়ার এশিয়া, সিল্ক এয়ার, কুয়েত এয়ার, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইনসের কার্গো ফ্লাইট চলাচল করত। সবশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত দুটি কার্গো ফ্লাইট চালু ছিল। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না পাওয়ায় ওই বছর ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে যাত্রী ফ্লাইটে সীমিত আকারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। এ তিন বিমানবন্দর পূর্ণভাবে চালুর পর দেশের সব কার্গোই সামলানো সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, বছর চারেক আগে করোনা মহামারির সময় ঢাকার পাশাপাশি ভারত দিয়ে কার্গো পাঠানো হতো বাংলাদেশ থেকে। তখন রপ্তানিকারকদের যুক্তি ছিলÑ ঢাকা এয়ারপোর্ট দিয়ে চাহিদা মোতাবেক কার্গো পাঠানোর সক্ষমতা ছিল না, আবার ব্যয়ও বেশি। সে তুলনায় ঢাকা থেকে সড়ক পথে বেনাপোল হয়ে কলকাতা ও দিল্লি এয়ারপোর্ট দিয়ে সারা দুনিয়ায় কার্গো পাঠানো বেশ লাভজনক ও সুবিধাজনক। বার বার ব্যবসায়ীরা দাবি জানালেও সে সময় বেবিচক উচ্চ হারের চার্জ কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু ভারত হঠাৎ তাদের স্থলবন্দর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ ঘোষণা করায় বিকল্প পথে কার্গো পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয় সরকার। তারই অংশ হিসেবে মাত্র দুই মাসের মাথায় সিলেট এয়ারপোর্ট দিয়ে কার্গো পাঠানো শুরু করে। তারপর এখন চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টকেও কার্গোর জন্য পূর্ণ প্রস্তুত করা হচ্ছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল কবীর ভুইঞা আমার দেশকে বলেন, ‘শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্গো শেডে ২৫০ টন আমদানি এবং ২০ টন রপ্তানি পণ্যের ধারণক্ষমতা এখনই আছে। বিমানবন্দরের কার্গো স্টেশনটি অনেকটাই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। সম্প্রতি নতুন করে সংস্কার কাজ হয়েছে। এখন সপ্তাহে বড় দুটি কার্গো ফ্লাইট এলেও তার পণ্য হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে স্টেশন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই শাহ আমানত দিয়ে কার্গো চলাচল শুরু করবে। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে।’

বেবিচকের চেয়ারম্যান আরো জানান, কার্গো হ্যান্ডলিং খরচ কমাতে বিদ্যমান ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই নতুন হারে চার্জ ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে শাহজালালের কার্গো ভিলেজ দৈনিক ৩০০ টন হ্যান্ডলিং সক্ষমতার জন্য পরিকল্পিত হলেও বাস্তবে সেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ টন পর্যন্ত কার্গো পরিচালনা করা হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত জনবল নিয়োগসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে।

দেশের কার্গো ফ্রেইটের সভাপতি কবীর আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ভারতের নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রথমে আমরা হতাশ হয়ে পড়লেও, এখন তা আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। একইভাবে কার্গোতেও চাহিদা মেটানোর জন্য পূর্ণ সক্ষম করে তোলা হচ্ছে দেশের তিন বিমানবন্দরকে (ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম)। এ জন্য প্রথমেই চালু করা হয়েছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তিনি বলেন, শাহ আমানত থেকে যদি সরাসরি ইউরোপ বা আমেরিকায় আকাশপথে পণ্য পরিবহন সম্ভব হয় তাতে কার্গো পরিবহনে গতি যেমন বাড়বে, তেমনি সময় ও অর্থ দুটিই সাশ্রয় হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত