রূপনগরে আগুনে মৃত্যু

ঢামেকে পোড়া লাশের গন্ধ, স্বজনদের দীর্ঘ অপেক্ষা

মাহমুদা ডলি
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪: ১৪

পোড়া লাশের গন্ধ আর লাশ খুঁজে না পাওয়া স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বাতাস। রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় এয়ার ফ্যাশন ও রূপনগর কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের লাশ পেতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ঢামেকের মর্গের সামনে অবস্থান করছেন স্বজনরা। কারো ছেলে, কারো মেয়ে, আবার কারো ভাই বা বন্ধু- সবারই একটাই আকুতি, প্রিয়জনের লাশটি যেন ফিরে পাওয়া যায়।

মর্গের সামনে অসংখ্য মানুষ হাতে এনেছে প্রিয়জনের ছবি, পোশাক কিংবা জন্মদাগের বিবরণ। কেউ কেউ লাশ মোড়ানো ব্যাগের পলিথিন সরিয়ে নিজের স্বজনকে খুঁজছেন। কোন পোড়া লাশ আসলেই দৌড়ে যাচ্ছেন স্বজনরা, দাবি তুলছেন এটা তাদের স্বজনের লাশ! একেকটি লাশের পরিচয় নিয়ে চলছে দুই-তিন পরিবারের দাবি-দাওয়া। এ কারণেই ডিএনএ শনাক্ত ছাড়া কোনো লাশ হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সূত্রে জানা গেছে, নিহত ১৬ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন মাহিরা আক্তার (১৪), নার্গিস আক্তার (১৮), নুরে আলম (২৩), সানোয়ার হোসেন (২২), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৯) ও রবিউল ইসলাম রবিন (১৯)। বিষয়টি নিশ্চিত করে রূপনগর থানার এসআই মোখলেছুর রহমান বলেন, ছয়জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

ফরেনসিক বিভাগ জানিয়েছে, লাশ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সব দাবিদারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করবে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব। মৃতদের স্বজনদের আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার সময় মালিবাগ ল্যাবে যেতে বলা হয়েছে।

রূপনগর থানার উপপরিদর্শক মোখলেছুর বলেন, বাকি ১০ লাশের ময়নাতদন্ত বৃহস্পতিবার পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, ডিএনএর মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে মিরপুরের শিয়ালবাড়ির রাসায়নিক গুদাম ও সংলগ্ন পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের তথ্য মতে, এ ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। দগ্ধ ও ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনজন। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেক শ্রমিক।

এসব ব্যাপারে ডিএমপির রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. লস্কর বলেন, মেডিকেলে থাকা ১৬ লাশের মধ্যে ১০ জনের লাশ শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। তাদের দেওয়া নিহতদের গায়ে থাকা জামা-কাপড় ও অন্যান্য আলামতের ভিত্তিতে লাশগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। তবে প্রতিটি লাশ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ১৬ লাশের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের মর্গে রয়েছে সাতটি। বাকি ৯টি লাশ রয়েছে ঢামেকের মূল মর্গে।

লাশ ও নিখোঁজদের সন্ধান চেয়ে ঢামেকে স্বজনদের ভিড়

সরজমিনে গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাবা, চাচা, বড় ভাই, নিকট আত্মীয় দাবি করে অনেকেই স্বজনের লাশ খুঁজতে আসছেন। কেউ আবার লাশ শনাক্তে রাতভর অপেক্ষায় রয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেলের মর্গে তিন সন্তানের মা মুক্তাকে খুঁজতে শরীয়তপুর থেকে ভাই আব্দুল দেওয়ান এসেছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাই মৃতের তালিকায় তার নাম লিখিয়েছি। যদি মৃতদের মধ্যেও তার খোঁজ পেতাম, তাহলে অন্তত নিশ্চয়তা পেতাম, লাশটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারতাম।

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ির অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। তাদের সন্ধান চেয়ে হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছে হতাহতের স্বজনরা।

হতাহতের তালিকায় রয়েছেন কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুরের তিলকান্দি গ্রামের মুরগি ব্যবসায়ীর নজরুল ইসলামের ছেলে রবিন মিয়া (১৯)। তিনি মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় থাকতেন। রবিনের বড় ভাই তাইজুল ইসলাম বলেন, গতকাল থেকে রবিনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রবিন জীবিত আছে নাকি মারা গেছে আমরা জানতে পারিনি।’

বরগুনার উপজেলার আমতলী গ্রামের মৃত মোহাম্মদ ফারুকের মেয়ে মাহিরা আক্তার ভাবনা (১৪)। সে ছিল দুই বোনের মধ্যে ছোট। তার খোঁজে ঢামেকে এসেছেন বড় বোন সানজিদা ও মামা শফিকুল ইসলাম।

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর শিসপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে সানোয়ার (২২)। তিনি ওই পোশাক কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন। তার মুখ ও বাঁ হাতের একটি আঙুল বেশি। তা দেখে লাশ শনাক্ত করেন বাবা মিজানুর রহমান। নেত্রকোনার মদন উপজেলার কদমশিড়ি গ্রামের কৃষক সনু মিয়ার মেয়ে মুনা আক্তার (১৭)। সে শিয়ালবাড়ি এলাকায় থাকত। তার দাবিতে ভাবি ববিতা খাতুন মর্গের সামনে ভিড় করছেন।

বরগুনা সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বন্দরগাছি ইসলামপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে খালিদ হাসান (২৯)। তার খোঁজে এসেছেন মামা হুমায়ন কবির। ভোলা লালমোহন উপজেলার দক্ষিণ বেদিরিয়া গ্রামের ওয়াজিউল্লাহ মেয়ে নার্গিস আক্তার (১৮)। তিনি পোশাক শ্রমিক। তার খোঁজে এসেছেন তার বাবা। লালমনিরহাট হাতিবান্ধা উপজেলার পশ্চিম নওদাবাদ গ্রামের রিকশাচালক আব্দুল মান্নানের মেয়ে মৌসুমি আক্তারের খোঁজ মিলছে না। হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছেন আব্দুল মান্নান। বরগুনার আমতলী উপজেলার তারিকাঠি গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল মামুনের (৩৯) স্ত্রী ইশরাত জাহান হাতের আংটি দেখে লাশ শনাক্ত করেন। ঢামেকে এখন এ রকম স্বজন খুঁজে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা অনেক।

ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ নিহত ১৬ জনের লাশ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে। এখন স্বজনদের কাছ থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। সব পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত