সন্দ্বীপ চ্যানেলে ৪ কোম্পানিকে বালু তোলার অনুমতি

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ২৪

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আপত্তি উপেক্ষা করে সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার জন্য চারটি কোম্পানিকে ইজারা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইজারা নিয়েই অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু ইজারা পাওয়ার কাগজ দেখিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকার হাতবদলও হয়েছে। এর সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি বড় বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িয়ে পড়েছে। এসব সিন্ডিকেটের পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু থেকে বঙ্গপোসাগরের কুতুবদিয়া পর্যন্ত পোর্ট লিমিট হিসেবে চিহ্নিত। এর বাইরে মিরসরাই ইকোনমিক জোনের কাজ শুরু হলে ২০১৯ সালে বিপরীত দিকে মিরসরাই পর্যন্ত কাগজকলমে পোর্ট লিমিট বেড়ে যায়। কিন্তু এ এলাকার মালিকানা অথবা রক্ষণাবেক্ষণে কখনোই কাজ করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। বহু বছর ধরেই কাট্টলী থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে বিআইডব্লিউটিএ।

২০২০ সালে সীতাকুণ্ড উপকূলে মিরসরাই-রাশমনি নদীবন্দর ও সবশেষ অন্তর্বর্তী সরকার সন্দ্বীপ সীমানায় সন্দ্বীপ উপকূলীয় বন্দর ঘোষণা করে। বন্দর দুটি রক্ষণাবেক্ষণে বিআইডব্লিউটিএকে কনজারভেটর বা সংরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গেজেটও প্রকাশ করে। সরকারের গেজেট অনুযায়ী কাট্টলীর রাসমণি ঘাট থেকে মিরসরাই ইকোনমিক জোন ও অন্য পাশে সন্দ্বীপ উপকূলীয় নদীবন্দরের সীমানার পুরোটা বিআইডব্লিউটিএর নৌপথ হিসেবে স্বীকৃত।

আওয়ামী লীগ আমলে কোনো নিয়মকানুন না মেনে মিরসরাই পর্যন্ত পোর্ট লিমিট বাড়ানো হলেও বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়টির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। এ সীমানার মধ্যে একটি নদীবন্দর এবং একটি উপকূলীয় বন্দর ছাড়াও সীতাকুণ্ড উপকূলের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকা জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। পাশাপাশি সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডের মধ্যে যাত্রী ও মালামাল পারাপারের জন্য পাঁচটি ঘাটও রয়েছে, যেগুলো জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে পরিচালনা করে। ২০১৯ সালে খাতাকলমে পোর্ট লিমিট বাড়লেও পুরো এলাকায় সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখনো কাজের ভাগবাঁটোয়ারা হয়নি।

সম্প্রতি সলিমপুর থেকে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত এলাকাকে চারটি ব্লকে ভাগ করে এক বছরের জন্য ড্রেজিং করার টেন্ডার আহ্বান করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই টেন্ডার স্থগিত করতে দফায় দফায় চিঠি দেয় বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের আপত্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রাখে। ১ নম্বর ব্লকে ড্রেজিংয়ের কাজ পায় রাইজিং নামে একটি কোম্পানি, ২ নম্বর ব্লকে ডিপ ডিঘার্স, ৩ নম্বর ব্লকে কনস্টা এইচএলআই এবং ৪ নম্বর ব্লকে এমআরআই নামে চারটি প্রতিষ্ঠান বাগিয়ে নেয় বালু কাটার অনুমতি। এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হলেও এখনো কোনো সুফল পায়নি বিআইডব্লিউটিএ।

সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের একটি বালু সিন্ডিকেট প্রথমে জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লিউটিএতে ওই এলাকার বালু কাটার অনুমোদন চেয়ে ধরনা দিয়েও পায়নি। সবশেষ তারা বন্দরের কাঁধে চড়ে অনুমোদন নিয়ে বালু কাটার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা জানান, সিন্ডিকেটটি প্রথমে তাদের কাছে ড্রেজিং করার অনুমতির জন্য আসে। চট্টগ্রাম-সীতাকুণ্ড অংশ থেকে সিন্ডিকেটটি বালু তোলার পরিকল্পনা করছে। এলাকাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ওই এলাকার বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে জাহাজভাঙা শিল্প। এছাড়া চট্টগ্রামের সঙ্গে সন্দ্বীপের কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের পথও এটি। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বালু কাটার অনুমতি দিলে চারটি কোম্পানির অসংখ্য বাল্কহেড এ নৌপথে অবস্থান করবে। বালুবোঝাই বাল্কহেড পানির সঙ্গে মিশে থাকায় জাহাজভাঙা শিল্পের স্ক্র্যাপ জাহাজ বিচিং কার্যক্রমসহ পুরো নৌপথটি ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠবে।

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, কাট্টলী থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত রুটটি বহু বছর ধরেই বিআইডব্লিউটিএ পরিচালনা করে। এ রুটের বয়া, বিকনÑসবই বিআইডব্লিউটিএ পরিচালনা করে। সম্প্রতি সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপের দুই পাড়ে দুটি নদীবন্দর ঘোষণার পর পুরো এলাকার মালিকানা আরো বেশি স্বীকৃত হয়। বন্দরের পোর্ট লিমিট মিরসরাই পর্যন্ত বাড়ালেও এ রুটে তাদের কোনো জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। আপাতত এখানে তাদের কোনো কাজও নেই। সরকারও তাদের কাজ ভাগ করে দেয়নি। কিন্তু হঠাৎ কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই বন্দর কর্তৃপক্ষ ড্রেজিংয়ের জন্য যে টেন্ডার আহ্বান করে, তাতে বিস্মিত হতে হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে প্রথমে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পরে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানানো হয় বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, মিরসরাই পর্যন্ত পোর্ট লিমিটি বৃদ্ধি করা মানে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পুরো এলাকা বন্দরের আওতায় চলে এসেছে। বন্দরের অভ্যন্তরীণ এলাকার নাব্য ধরে রাখতে ড্রেজিং করাটা নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ। ওই কাজের ধারাবাহিকতায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়। বিআইডব্লিউটিএ তাদের আপত্তির কথা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত