শুধু টাকা-পয়সা, মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত থাকছে না ছিনতাইকারীরা। রাজধানীতে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। ভীতিকর বিষয় হচ্ছে তাদের বেপরোয়া হামলা। নির্বিচারে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হচ্ছে। হামলায় মারা যাচ্ছেন অনেকে। পথচারী এবং রিকশার যাত্রীরাই শিকার হচ্ছেন বেশি।
ডিএমপি’র সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেল ২০২৪ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার হয় ১৫ ছিনতাকারী। সেপ্টেম্বরে ২৩, অক্টোবরে ৯১ ও নভেম্বরে ১৪৮ জন। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে গ্রেপ্তার করা হয় ৫৬৪ ছিনতাইকারীকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলেছেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা কমে আসছে। খুব দ্রুতই আরও কমে যাবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা অপ্রতুল হলেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপি।
ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক আমার দেশকে বলেন, গত আগস্ট থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার। আগস্ট মাসে ১৫ জন গ্রেপ্তার হলেও ডিসেম্বরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬৪ জনে। ছিনতাই কমাতে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হচ্ছে রাজধানীর হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, শাহ্ আলী, মিরপুর, লালবাগ এলাকায়।
এদিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. ওমর ফারুক আমার দেশকে বলেন ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি এবং মুক্তিপণ এই চারটি অপরাধ মোটামুটি একই সূত্রে গাথা। এ ধরনের অপরাধ রোধে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রতিটি থানাভিত্তিক পুলিশের পেট্রোলিং বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
মাদকের সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে
এসব অপরাধের সঙ্গে মাদকের সুনিবিড় সম্পর্ক থাকায় মাদকের বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সম্মিলিত সামাজিক পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান বলেন, বেকারত্ব, হতাশা, মাদক, এই তিনটি বিষয়ে উন্নতি করা জরুরি। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পুলিশের নৈতিক মনোবল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
২০২৫ সালের প্রথম দিন যাত্রাবাড়ী এলাকায় হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন রাজন। ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিতে চায়। দিতে রাজি না হলে ছিনতাইকারীরা বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাবি শিক্ষার্থী এনামুল হক রবি আসাদগেট এলাকায় মূল রাস্তায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন।
চাপাতি দিয়ে মাথাসহ সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা সব কেড়ে নেয়। অস্ত্রের আঘাতে মাথা ও হাতে ২৪টি সেলাই লেগেছে তার। গত ২৪ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে মতিঝিল এলাকায় ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হন সাংবাদিক মাইনুল হাসান সোহেল।
এ ছাড়া গত ১৬ ডিসেম্বর আসাদগেট এলাকার ছিনতাইয়ের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যানজটের মধ্যে তিন যুবক চাপাতি হাতে বীরদর্পে ঘোরাফেরা করছে। কিছুক্ষণ পর তাদের একজন একটি প্রাইভেটকারের খোলা জানালা দিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।
ওই ভিডিওতে দেখা যাওয়া যুবক কারা, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর বলেন, এই বিষয়টি জানা নেই। তিনি জানান, ডিএমপি’র প্রতিটি থানা এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার থেকে সকাল পর্যন্ত পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এর সুফলও পাচ্ছেন রাজধানীবাসী।
এদিকে ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি দ্রুত দৃশ্যমান না হলে ‘আগেই ভালো ছিলাম’ বয়ান প্রতিষ্ঠিত করা সহজ হয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এমবি

