সরদার আনিছ
বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের নিয়োগে অনিয়ম, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি এবং পিএইচডি গবেষণায় জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তবে বিআরআইসিএম কর্তৃপক্ষের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে স্বপদে বহাল রয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ২৮ অক্টোবর রিটটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। আর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ের ওপর নির্ভর করছে তার ভবিষ্যৎ।
এ প্রসঙ্গে বিসিএসআইআরের মহাপরিচালক অনুপম বড়ুয়া রোববার আমার দেশকে বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ায় পরিচালনা বোর্ড প্রাথমিকভাবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে রিট করে কর্তৃপক্ষের আদেশ স্থগিত করে স্বপদে এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। আগামী ২৮ অক্টোবর রিটটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও মালা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলে কেটে দেওয়া হয়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন এবং প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকার পরও প্রতারণার মাধ্যমে বিআরআইসিএমে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মালা খানের বিরুদ্ধে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিআরআইসিএমের ১৩তম পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। পরে ১৫তম সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আলোকেই মালা খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বছরের ২৫ মে বিআরআইসিএমের এক অফিস আদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার সুবাদে যোগ্যতায় ঘাটতি থাকার পরও বিসিএসআইআরের আওতাধীন ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (ডিআরআইসিএম) চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে ২০২২ সালে নিয়োগ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সায়েন্স ল্যাব শাখার সভাপতি মালা খান।
নাম ও পদবি প্রকাশ না করার শর্তে বিসিএসআইআর ও বিআরআইসিএমের একাধিক কর্মকর্তা আমার দেশ প্রতিবেদককে জানান, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উত্থান ঘটে মালা খানের। আওয়ামী আমলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুটি জাতীয় পত্রিকায় ডিআরআইসিএমের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শূন্যপদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে বিসিএসআইআরের অফিস আদেশের মাধ্যমে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটি ডিআরআইসিএমে প্রথম শ্রেণির নিয়োগের জন্য আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে প্রাপ্ত দুটি আবেদনে বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না হওয়ায় তা বাতিলের জন্য সুপারিশ করে।
বিজ্ঞপ্তির চাহিদা ও শর্ত মোতাবেক প্রথম শ্রেণির বিজ্ঞান গবেষণামূলক চাকরির ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকায় যাচাই-বাছাই কমিটি মালা খানের আবেদন বাতিলের সুপারিশ করে। ওই সময় তার প্রথম শ্রেণির বিজ্ঞান গবেষণামূলক চাকরির অভিজ্ঞতা ছিল আট বছর সাত মাস (বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ছয় বছর ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দুই বছর সাত মাস)। আবেদনপত্রে প্রদর্শিত প্লাজমা প্লাস, এপ্লিকেশন ও রিসার্চ ল্যাবরেটরিজে অ্যাসিস্ট্যান্ট ল্যাবরেটরি ম্যানেজার পদে তার চাকরির অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ, এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং চাকরিতে যোগদানের সময় হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রার্থী কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত থাকায় শুধু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সনদে প্রাপ্ত চাকরি এবং এর অভিজ্ঞতা চাকরি-সংক্রান্ত নিয়মাবলি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ নেই।
পরে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করেও প্রভাবশালীদের চাপে মালা খানের বাতিল করা আবেদনটি গ্রহণ করে তাকে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
পরবর্তীতে ইয়াফেস ওসমানের নির্দেশে তিনি বিসিএসআইআর বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে চিফ সাইন্টিফিক অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। তবে বিসিএসআইআর বিজ্ঞানী সংঘ মালা খানের নিয়োগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে, যা এখনো চলমান।
জানা যায়, তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলমকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে মালা খান তার নিয়োগের বিরুদ্ধে চলমান মামলাটি স্থগিত রাখতে সক্ষম হন।
এ ছাড়া মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদন করেনি। ওই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মালা খান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভর্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের দাবি করলেও প্রতিষ্ঠানটির এ ডিগ্রি দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানকারী সংস্থার অনুমোদিত নয়।
এছাড়া মালা খান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত সেন্টারের মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের কোনো এখতিয়ার নেই।
এছাড়াও ইউজিসি ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রির বৈধতাবিষয়ক স্পষ্টীকরণ চিঠিতে পুনরায় তার ডিগ্রিটি অবৈধ বলে ঘোষণা করে। একইসঙ্গে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা-১ হতে জারি করা চিঠির মাধ্যমে মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রিটি অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালা খানের পিএইচডি সুপারভাইজর ড. এসএম ইমামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের একজন অধ্যাপক। মালা খানের পিএইচডি চলাকালে বিসিএসআইআরের পূর্ণকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য অনুযায়ী, তিনি আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন না, যা মালা খান তার পিএইচডি থিসিজে অসত্যভাবে উপস্থাপন করেন।
মালা খানের পিএইচডি কো-সুপারভাইজর ছিলেন তার স্বামী কেএম মোস্তফা আনোয়ার, যার রসায়নে কোনো স্বীকৃত ডিগ্রি নেই। পিএইচডি থিসিসটি ২০০৮-০৯ সালে সম্পাদিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি স্পেশাল এলোকেশন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকাশিত ফলাফলের হুবহু নকল, যা পিএইচডি ডিগ্রির থিসিস পেপার হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এছাড়াও তার থিসিস পেপারটিতে একটি ইউরোপিয়ান (ক্রোয়েশিয়া) দেশের মেট্রোলজি হস কেমিস্ট্রি কান্ট্রি রিপোর্টের তথ্য হুবহু কপি-পেস্ট করা হয়।
ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি ও জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া মালা খান পরবর্তীতে বিআরআইসিএমের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তৎকালীন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সহযোগিতায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও দুদক এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়।
এছাড়া নিজের অফিসের ভেতরে বিশেষভাবে তৈরি গোপন কক্ষের জন্য আলোচনায় আসেন মালা খান। তার অফিসের আলোচিত গোপন কক্ষ আসলে গোপন ছিল না। এ বিষয়ে ওই অফিসের সবাই জানতেন।
বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের নিয়োগে অনিয়ম, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি এবং পিএইচডি গবেষণায় জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তবে বিআরআইসিএম কর্তৃপক্ষের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে স্বপদে বহাল রয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ২৮ অক্টোবর রিটটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। আর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ের ওপর নির্ভর করছে তার ভবিষ্যৎ।
এ প্রসঙ্গে বিসিএসআইআরের মহাপরিচালক অনুপম বড়ুয়া রোববার আমার দেশকে বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ায় পরিচালনা বোর্ড প্রাথমিকভাবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে রিট করে কর্তৃপক্ষের আদেশ স্থগিত করে স্বপদে এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। আগামী ২৮ অক্টোবর রিটটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও মালা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলে কেটে দেওয়া হয়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন এবং প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকার পরও প্রতারণার মাধ্যমে বিআরআইসিএমে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মালা খানের বিরুদ্ধে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিআরআইসিএমের ১৩তম পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। পরে ১৫তম সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আলোকেই মালা খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বছরের ২৫ মে বিআরআইসিএমের এক অফিস আদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার সুবাদে যোগ্যতায় ঘাটতি থাকার পরও বিসিএসআইআরের আওতাধীন ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (ডিআরআইসিএম) চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে ২০২২ সালে নিয়োগ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সায়েন্স ল্যাব শাখার সভাপতি মালা খান।
নাম ও পদবি প্রকাশ না করার শর্তে বিসিএসআইআর ও বিআরআইসিএমের একাধিক কর্মকর্তা আমার দেশ প্রতিবেদককে জানান, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উত্থান ঘটে মালা খানের। আওয়ামী আমলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুটি জাতীয় পত্রিকায় ডিআরআইসিএমের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শূন্যপদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে বিসিএসআইআরের অফিস আদেশের মাধ্যমে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটি ডিআরআইসিএমে প্রথম শ্রেণির নিয়োগের জন্য আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে প্রাপ্ত দুটি আবেদনে বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না হওয়ায় তা বাতিলের জন্য সুপারিশ করে।
বিজ্ঞপ্তির চাহিদা ও শর্ত মোতাবেক প্রথম শ্রেণির বিজ্ঞান গবেষণামূলক চাকরির ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকায় যাচাই-বাছাই কমিটি মালা খানের আবেদন বাতিলের সুপারিশ করে। ওই সময় তার প্রথম শ্রেণির বিজ্ঞান গবেষণামূলক চাকরির অভিজ্ঞতা ছিল আট বছর সাত মাস (বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ছয় বছর ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দুই বছর সাত মাস)। আবেদনপত্রে প্রদর্শিত প্লাজমা প্লাস, এপ্লিকেশন ও রিসার্চ ল্যাবরেটরিজে অ্যাসিস্ট্যান্ট ল্যাবরেটরি ম্যানেজার পদে তার চাকরির অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ, এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং চাকরিতে যোগদানের সময় হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রার্থী কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত থাকায় শুধু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সনদে প্রাপ্ত চাকরি এবং এর অভিজ্ঞতা চাকরি-সংক্রান্ত নিয়মাবলি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ নেই।
পরে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করেও প্রভাবশালীদের চাপে মালা খানের বাতিল করা আবেদনটি গ্রহণ করে তাকে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
পরবর্তীতে ইয়াফেস ওসমানের নির্দেশে তিনি বিসিএসআইআর বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে চিফ সাইন্টিফিক অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। তবে বিসিএসআইআর বিজ্ঞানী সংঘ মালা খানের নিয়োগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে, যা এখনো চলমান।
জানা যায়, তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলমকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে মালা খান তার নিয়োগের বিরুদ্ধে চলমান মামলাটি স্থগিত রাখতে সক্ষম হন।
এ ছাড়া মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদন করেনি। ওই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মালা খান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভর্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের দাবি করলেও প্রতিষ্ঠানটির এ ডিগ্রি দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানকারী সংস্থার অনুমোদিত নয়।
এছাড়া মালা খান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত সেন্টারের মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের কোনো এখতিয়ার নেই।
এছাড়াও ইউজিসি ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রির বৈধতাবিষয়ক স্পষ্টীকরণ চিঠিতে পুনরায় তার ডিগ্রিটি অবৈধ বলে ঘোষণা করে। একইসঙ্গে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা-১ হতে জারি করা চিঠির মাধ্যমে মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রিটি অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালা খানের পিএইচডি সুপারভাইজর ড. এসএম ইমামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের একজন অধ্যাপক। মালা খানের পিএইচডি চলাকালে বিসিএসআইআরের পূর্ণকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য অনুযায়ী, তিনি আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন না, যা মালা খান তার পিএইচডি থিসিজে অসত্যভাবে উপস্থাপন করেন।
মালা খানের পিএইচডি কো-সুপারভাইজর ছিলেন তার স্বামী কেএম মোস্তফা আনোয়ার, যার রসায়নে কোনো স্বীকৃত ডিগ্রি নেই। পিএইচডি থিসিসটি ২০০৮-০৯ সালে সম্পাদিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি স্পেশাল এলোকেশন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকাশিত ফলাফলের হুবহু নকল, যা পিএইচডি ডিগ্রির থিসিস পেপার হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এছাড়াও তার থিসিস পেপারটিতে একটি ইউরোপিয়ান (ক্রোয়েশিয়া) দেশের মেট্রোলজি হস কেমিস্ট্রি কান্ট্রি রিপোর্টের তথ্য হুবহু কপি-পেস্ট করা হয়।
ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি ও জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া মালা খান পরবর্তীতে বিআরআইসিএমের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তৎকালীন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সহযোগিতায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও দুদক এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়।
এছাড়া নিজের অফিসের ভেতরে বিশেষভাবে তৈরি গোপন কক্ষের জন্য আলোচনায় আসেন মালা খান। তার অফিসের আলোচিত গোপন কক্ষ আসলে গোপন ছিল না। এ বিষয়ে ওই অফিসের সবাই জানতেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১৪ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
১ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
১ দিন আগে