রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বেড়েছে রপ্তানি

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ০৮: ৩৩

জুলাই বিপ্লবের পর নানা সংকট ও অস্থিরতার মধ্যে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে পোশাক, ফার্নিচার, কাগজ ও কাগজ পণ্য, ইলেক্ট্রিক পণ্য, জাহাজ, গুঁড়া মসলা ও চাসহ ৩২ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। এই সময়ে ৪৪ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। জুলাই বিপ্লবের পর রপ্তানি ও আমদানিকারক দেশসহ সবার মধ্যে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। এর ফলে পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে নাগাদ পোশাকসহ প্রধান ৩২ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। এ বছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার কোটি ডলার। জুলাই-মে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। একই সময়ের কৌশলগত লক্ষ্য ৪ হাজার ৫৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের চেয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য খাতের রপ্তানি ছিল ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, আর প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশ ছিল নিট ও ওভেন পোশাক। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ওভেন পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। মোট রপ্তানিতে বড় অংশজুড়ে থাকার জন্য এই দুই পণ্যের প্রবৃদ্ধির মাধ্যমেই মোট রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশ।

এ ছাড়া হোমটেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিও মোট রপ্তানিতে ভূমিকা রেখেছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হওয়া পণ্যের মধ্যে আছে চামড়াজাত জুতা, ইলেক্ট্রিক পণ্য ও চামড়াবহির্ভূত জুতা।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটি গত দুই বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে ৭৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি উৎস থেকে।

তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) দেশটির পোশাক আমদানির প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এই চার মাসে বিশ্ববাজার থেকে ২৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থমূল্য বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি পোশাক আমদানি করেছে ভিয়েতনাম থেকে। এর পরই রয়েছে যথাক্রমে চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান। অর্থমূল্য বিবেচনায় চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎস হলেও আমদানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশ থেকে।

জানুয়ারি-এপ্রিল নাগাদ বাংলাদেশ থেকে ২৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হিসাবে ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেশি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

রপ্তানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিগত বছরগুলোতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছিল। আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। জুলাই বিপ্লবের ফলে কিছুটা অস্থিরতা থাকলেও পরবর্তী সময়ে পুরোনো ব্যবসায়ীরা তাদের ক্যাপাসিটি বাড়িয়েছেন এবং আরো বেশকিছু নতুন ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করেছেন ফলে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।

মহিউদ্দিন রুবেল আরো বলেন, ‘আমাদের ৭০ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির ক্যাপাসিটি রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার সার্বিকভাবে সহাযোগিতা করলে এবং সামনে রাজনৈতিক সরকার আসলে এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরো অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পলিসি ও প্ল্যানিং বিভাগের পরিচালক আবু মোখলেছ আলমগীর বলেন, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে দেশে কিছুটা অস্থিরতা থাকলেও পরবর্তী স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় সবার মধ্যে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন, আবার অনেক নতুন ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করেছেন। আগের কোনো অর্ডার বাতিল হয়নি সঠিক সময়েই তা সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে পোশাকসহ বাংলাদেশি আরো অনেক পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত