সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কোটি টাকার এক্স-রে ফিল্ম ও রি-এজেন্ট কেনা নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডারের শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও একটি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছে এতে অংশ নেওয়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর এমএসআর (কেমিক্যাল/রি-এজেন্ট) সরবরাহের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দরপত্রের অন্যতম শর্ত ছিল—উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অথরাইজেশন লেটার বাধ্যতামূলক, অটো-বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার ও অন্যান্য যন্ত্রের ক্ষেত্রে ক্লোজড সিস্টেমের কারণে মেশিন সরবরাহকারী কোম্পানির কর্তৃক উৎপাদিত-সরবরাহ করা ফিল্ম/রি-এজেন্ট মালামাল সরবরাহ করতে হবে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, এসব শর্ত পূরণে অক্ষম প্রতিষ্ঠানকে নিম্নমানের ফিল্ম/রি-এজেন্ট সরবরাহের জন্য নির্বাচন করার উদ্যোগ চলছে।
হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মাহবুবুল আলম এ ব্যাপারে আমার দেশকে বলেন, টেন্ডারে ছয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেডি গ্রাফিক্স ট্রেডিং লিমিটেড চতুর্থ স্থানে আছে। সরকারের আর্থিক সাশ্রয় বিবেচনায় একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানের চিঠিও আমরা পেয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ক্রয় কমিটি নেবে।
তিনি আরো জানান, ফিল্ম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কিছুটা ছাড় দেওয়া হলে সরকারের কয়েক লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। তবে আমরা এখনো কার্যাদেশ দিইনি। টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ ওঠায় ফাইলটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে, তাদের পরামর্শ ও অনুমোদন নিয়েই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
টেন্ডারে অংশ নেওয়া অংশগ্রহণকারী ছয়টি প্রতিষ্ঠান হলো—এমএস মেডিকন সার্জিক্যাল, সাহিদা ট্রেডার্স, জাকিয়া এন্টারপ্রাইজ, বিএমএফ এন্টারপ্রাইজ, এমএস রোকেয়া ইন্টারন্যাশনাল ও মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড।
জিএমই গ্রুপের জিএম আনিসুজ্জামান শাহীন দাবি করেন, বাংলাদেশে ফুজি ফিল্ম করপোরেশনের একমাত্র অনুমোদিত পরিবেশক ‘মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড’। বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসনও শুধু তাদেরই ফুজি ফিল্ম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। ফলে নিয়ম অনুসারে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এ টেন্ডারে যোগ্যই নয়।
দরপত্রের নিয়ম অনুসারে, যেকোনো দরপত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুটি প্রস্তাব জমা দিতে হয়, প্রথম ধাপ টেকনিক্যাল অফার এবং দ্বিতীয় ধাপ ফাইন্যান্সিয়াল অফার। কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেকনিক্যাল অফার অর্থাৎ প্রথম ধাপের সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হলেই দ্বিতীয় ধাপে তার ফাইন্যান্সিয়াল অফার পর্যালোচনা করা হয়।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টেকনিক্যাল অফার যাচাই-বাছাই না করেই বা যোগ্য/অযোগ্য নির্ণয় না করেই ফাইন্যান্সিয়াল অফার দেখে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে, যা টেন্ডারে অংশগ্রহণের শর্তাবলির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের পক্ষ থেকে দুবার হাসপাতালের পরিচালক বরাবরে আবেদন জমা দিয়েছেন। হাসপাতাল পরিচালক ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে উপপরিচালক ডা. মাহবুবুল আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আমরা সরকারের লাভ দেখছি, এখানে অনিয়ম, দুর্নীতি করার সুযোগ নেই।


ভেড়ামারায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে কৃষক নিহত