খুলনায় অধিকারের সেমিনারে বক্তারা বলেন, অতীতের কর্তৃত্ববাদী সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে গুম-খুন চালিয়েছে।
শনিবার সকালে খুলনার এক অভিজাত হোটেলে ‘আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সংঘটিত নির্যাতন, এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে কী বলা হয়েছে এবং বাস্তব পরিস্থিতি কী’ শীর্ষক মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এ আলোচনা সভার আয়োজনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সংগঠনটির পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানের সঞ্চালনায় সভায় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন পুলক হাসান।
গত ১৫ বছরে র্যাব-পুলিশকে ব্যবহার করে যেভাবে অপহরণ, মিথ্যা মামলায় প্রতিপক্ষকে হয়রানি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল, তা থেকে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নিতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীকে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো যাবে না। এমনটা হলে ৫ আগস্টের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য বাড়বে, এর ফলে দেশ বিপদে পড়বে।
মুহাম্মদ নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আক্তার হোসেন, জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার (সাউথ) তাজুল ইসলাম, মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট ডা. রনি কুমার। আলোচনায় অংশ নেন খুলনা প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব ও মামলার শিকার এহতেশামুল হক শাওন, এমইউজে সভাপতি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি মামলায় হয়রানির শিকার রাশিদুল ইসলাম, হয়রানিমূলক মামলায় কারা নির্যাতিত এনটিভির খুলনা ব্যুরোপ্রধান আবু তৈয়ব, ইউএনবির খুলনা ব্যুরোপ্রধান শেখ দিদারুল আলম, আইসিটি আইনে মামলায় হয়রানির শিকার সিনিয়র সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু।
বক্তব্য দেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা রেহানা আক্তার, জামায়াতে ইসলামীর মহানগর সহকারী সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফরাজি, নাগরিক ঐক্যের জেলা সভাপতি আব্দুল মজিদ, গণসংহতি আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হাসান রাজ, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী শেখ ফারুক ও শহিদুল ইসলাম।
নির্যাতনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ২০১৭ সালে পুলিশ কর্তৃক দুচোখ উপড়ে ফেলা শাহজালাল হাওলাদার, র্যাব কর্তৃক গুম হওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন, ২০২০ সালে গুমের শিকার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূর মোহাম্মদ অনিক, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল পুলিশ কর্তৃক খুলনা থানায় ঝুলিয়ে নির্যাতনের শিকার সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহমুদুল হক টিটু।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, হাসিনার পতন ঘটেছে, কিন্তু আমাদের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা ইতোমধ্যে নিজেদের ক্ষমতাধর ভাবতে শুরু করেছেন। অন্যপক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনিশ্চয়তার কারণে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করছেন। আগামী দিনে কারা ক্ষমতায় আসবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছেন তারা।
এ সুযোগে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রক্তপাত ও জীবনহানি ঘটছে। অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত করে খুঁজে বের করা হচ্ছে এবং তারা শাস্তির সম্মুখীন হলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন।

