নামেই কলেজ: চার শিক্ষকের এক শিক্ষার্থী, ফলে ভরাডুবি!

উপজেলা প্রতিনিধি, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৪৭
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ২৮

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আনাইতারা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীগ্রাম চামারী ফতেপুরে অবস্থিত ময়নাল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এটি শুধু নামেই কলেজ। এর কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। একাদশ শ্রেণিতে চারজন শিক্ষকের জন্য রয়েছে মাত্র একজন শিক্ষার্থী। আর চলতি বছর এইচএসসি প্রথম ব্যাচের ১৮ জনের সবাই ফেল করেছে, যা ভরাডুবি ফলাফলের জন্ম দিয়েছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালে ফতেপুর ময়নাল হক উচ্চ বিদ্যালয় একাদশ শ্রেণিতে পাঠদানের অনুমতি পায়। ৫ হাজার টাকা করে বেতনে ৬ জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিদ্যালয় ভবনের একটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয় কলেজ শাখার পাঠদানের জন্য।

বিজ্ঞাপন

প্রথম ব্যাচে ২২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এরমধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ছিল ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা। সেখান থেকে চারজন অন্যত্র চলে গেলে ১৮ জন নিয়ে পাঠদান চলতে থাকে।

এক বছর পরে দুই শিক্ষক চাকরি ছেড়ে চলে যান। ফলে ইংরেজি শিক্ষকসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষক ছাড়াই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে পাঠদান কার্যক্রম। কলেজ শাখায় উল্লেখযোগ্য আয় না থাকায় শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয় স্কুল শাখার আয় থেকে। বর্তমানে কলেজ শাখার শিক্ষকদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। দ্বিতীয় ব্যাচে ২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তৃতীয় ব্যাচে অর্থাৎ চলতি বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র একজন শিক্ষার্থী। একা ভালো না লাগায় মশাজান গ্রামের মেয়ে সুমনা আক্তার অন্যত্র চলে যেতে চাচ্ছে।

১৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হলেও ফলাফলে দেখা যায় প্রথম ব্যাচের সবাই ফেল করেছে। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষক স্বল্পতা, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতি এবং পড়ার প্রতি তাদের অনাগ্রহই ফলাফলের এই অবস্থার কারণ।

কলেজ শাখার বাংলা বিভাগের প্রভাষক সুমনা আক্তার বলেন, “শুধু পাঠদানের অনুমতি পেয়ে ২০২৩ সাল থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। শিক্ষক স্বল্পতা এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিতে আসার প্রতি অনাগ্রহ নিয়ে পাঠদান চলতে থাকে। বেতন কম হওয়ায় এক বছরের মধ্যে দুই শিক্ষক চাকরি ছেড়ে চলে যান। তারপর থেকে কলেজ শাখার শ্রেণি কার্যক্রম আরও ঝিমিয়ে পড়ে। এরই মধ্যে নানা প্রতিকূলতার মাঝে প্রথম ব্যাচের ১৮ জন শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করা হয় এইচএসসি পরীক্ষার জন্য। কিন্তু দুঃখজনক হলো, সবাই ফেল করেছে।”

কলেজ শাখার ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ক্ষিতিষ চন্দ্র দাস বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় কলেজ শাখার অনুমতি পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নতির জন্য আমরা স্থানীয় হিসেবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন, তাও আবার পাঁচ মাস ধরে বকেয়া রয়েছে। স্কুল শাখার সহযোগিতায় চলছে কলেজ শাখা। এর উন্নয়নের জন্য সকলে মিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”

ফতেপুর ময়নাল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পরিষদের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান জানান, “আমি কিছুদিন ধরে দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক এবং স্থানীয়দের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উন্নতির জন্য অনেকগুলো বৈঠক করেছি। এখনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জুলফিকার হায়দার জানান, “প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখায় শিক্ষক স্বল্পতা আছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে আসেনি। যেসব সমস্যা রয়েছে, তা থেকে উত্তরণে পরিচালনা কমিটিকে দায়িত্ব নিতে হবে। সহযোগিতা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে তা করা হবে।”

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত