আমার দেশ

রাজশাহীতে ফল জালিয়াতি

এক দশক পর বরখাস্ত হলেন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তী

মঈন উদ্দিন, রাজশাহী
এক দশক পর বরখাস্ত হলেন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তী
রাখী চক্রবর্তী।

রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে সরকারি চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এক দশক আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ছিল। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা আলাদা একটি মামলাও বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। গত ২ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে তাকে বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। আদেশটি ৮ জুলাই তারা হাতে পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বরখাস্তের আদেশে উল্লেখ করা হয়, বিভাগীয় মামলায় রাখীর বিরুদ্ধে আনা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৪(৩)(গ) ধারা অনুযায়ী তাকে ‘চাকরি থেকে অপসারণ’ গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পূর্বের সাময়িক বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর একই বিধিমালার ৩(খ) ও ৩(ঘ) ধারায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। মামলার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ের নম্বর ফর্দ, গোপনীয় নথিপত্র ও কম্পিউটার ছিল রাখী চক্রবর্তীর নিয়ন্ত্রণে। তার অনুমতি বা অংশগ্রহণ ছাড়া নম্বর পরিবর্তন বা টেম্পারিং সম্ভব ছিল না। ওই সময় থানা এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ৪০ শিক্ষার্থীর নম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে তারা বৃত্তি পায়।

এতে আরো বলা হয়, অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম তদন্ত করে মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়।

তিনজনের মধ্যে তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখীকে চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় চাকরিতে ফিরলেও পরে আরেকটি পরীক্ষা-সংক্রান্ত অভিযোগে আবারও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধেও দুদকের মামলা চলমান। অপর কর্মচারী সোনিয়া রওশনকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং দুদকের মামলার অভিযোগপত্র থেকেও তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

ঘটনার পর ভুক্তভোগী অভিভাবকরা সংশোধিত ফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাদের দাবির মুখে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে বৃত্তি পাওয়া ৪০ শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল করা হয়। যার মধ্যে ৩০ জন ট্যালেন্টপুল এবং ১০ জন ছিল সাধারণ গ্রেডে।

সংশোধিত ফলাফলে রাজশাহী মহানগরীর শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থীর বৃত্তিও বাতিল করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ বিদ্যালয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সন্তান পড়াশোনা করত। পরে বৃত্তির অর্থ ট্রেজারির মাধ্যমে সরকারকে ফেরত দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে রাখী চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে ইচ্ছুক নই।


Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন