বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের হিসাবে গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় আগের ২৪ ঘণ্টায় ২২৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বেশি বৃষ্টি হয়েছে রাত ১০টার পর থেকে সকাল ৬টার আগ পর্যন্ত।
আবহাওয়া অফিস এই বৃষ্টিপাতকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত বলে দাবি করছে। কারণ ২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়। আজ শনিবার পর্যন্ত অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এরপর মাত্রা কমলেও অব্যাহত থাকবে আরো কয়েকদিন।
এত পরিমাণ বৃষ্টিতেও নগরীর কোথায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া যায়নি। দু-একটি বেশি নিচু এলাকায় সকালের দিকে পানি নামতে কিছুটা দেরি হলেও তা জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়নি। যা কয়েক দশকের মধ্যে নজিরবিহীন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত বছর সর্বনিম্ন মাত্র ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হওয়ার রেকর্ড রয়েছে চট্টগ্রামে। এর আগে সামান্য বৃষ্টিতেই নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তাঘাটও ডুবে যায়, পানি ঢোকে বসতবাড়িতে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টিতেও চট্টগ্রামের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাৎ হোসেন জানান, এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই সিটি করপোরেশনের অওতাধীন খাল ও নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও খননে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিডিএর চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজও সরকারের আন্তরিকতায় গতি পেয়েছে। সব পক্ষ সমম্বয় করে কাজ করার কারণে অগ্রগতি দেখা গেছে। এখনো বেশ কিছু খালে কাজের স্বার্থে বাঁধ দেওয়া রয়েছে। বাঁধগুলো সরিয়ে দিলে আরো সুফল আসবে।
নগরের প্রবর্তক, মুরাদপুর, ষোলশহর, বহদ্দারহাট, ডিসি সড়ক, বাকলিয়া, চকবাজার, ফুলতলা, কেবি আমান আলী সড়ক, চান্দগাঁও, হালিশহর, আগ্রাবাদ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, ওয়াসা মোড়সহ এলাকা সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যেত। বৃষ্টি থামলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকত পানি। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হলেও শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
সিডিএ ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সাল থেকে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চলছে। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা খরচও হয়েছে। কিন্তু গত বছর পর্যন্ত কোনো সুফল পায়নি নগরবাসী। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর গুরুত্ব দেয় জলাবদ্ধতা নিরসনে।
চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রকল্পের মান যাচাইয়ে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত আটটি সভা হয়েছে। এসব সভায় নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন না হলেও এ বছরই দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায় তারা। কাজ শেষ করতে মে মাস পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন, সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সেবা সংস্থাগুলো। সব প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে কাজ করায় প্রথম বৃষ্টিতে অগ্রগতি দেখা গেছে।

