এক পাশে তীর বাঁধানো নদী, অন্য পাশে সারি সারি গাছ আর মাঝখান দিয়ে সরু পিচঢালা রাস্তা, পড়ন্ত বিকেলের আলোয় দৃশ্যটি মনে করিয়ে দেয় সাগরপাড়ের কথা। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়ায় স্থানীয়রা সড়কটিকে ডাকছেন ‘ভাইরাল সড়ক’ নামে। তবে ছোট্ট অথচ সুন্দর এ সড়কটির অবস্থান ঝালকাঠিতে হলেও সেখানে ঘুরতে আসা লোকজন পাচ্ছেন কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের অনুভূতি।
শহর থেকে মাত্র পাঁচ-ছয় কিলোমিটার উত্তরে নবগ্রাম ইউনিয়নের বেতরা গ্রাম। বাউকাঠি এলাকা পেরোলেই পাওয়া যাবে নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ নতুন পর্যটন স্পট। তিন থেকে চার কিলোমিটার জুড়ে নদীর তীর সুসজ্জিত ব্লকে বাঁধাই করা। মাঝে মাঝে দেখা মিলবে পাকা সান বাঁধানো ঘাটের।
সড়কের দুই পাশে ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন রেস্তোরাঁ ও কফি শপ। রয়েছে ভাসমান রেস্তোরাঁও। গত চার-পাঁচ মাসে নতুন রেস্তোরাঁর সংখ্যা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে চাইনিজ রেস্তোরাঁ রয়েছে। শুধু স্থানীয় বিনিয়োগকারী নয়, জেলার বাইরে থেকেও ব্যবসায়ীরা এসে রেস্তোরাঁ খুলছেন। দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও বাড়ছে।
স্থানীয়রা জানান, যতই দিন যাচ্ছে ততই এখানে দৃষ্টিনন্দন রেস্তোরাঁর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝালকাঠি শহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও দর্শনার্থীরা আসছে এখানে সময় কাটাতে। এখানকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীরা জানান, তারা শৈল্পিক অবয়বে তাদের স্থাপনাগুলো তৈরি করেছেন। যাতে এখানে দর্শনাথীরা খাবার গ্রহণের পাশাপাশি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
এ এলাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে কয়েকটি নান্দনিক চাইনিজ রেস্তোরাঁ। বিশেষ করে ‘ডুপ্লেক্স রেস্তোরাঁ’ অল্প সময়েই পর্যটকদের নজর কেড়েছে। ডুপ্লেক্স রেস্তোরাঁর মালিক জুয়েল মাঝি আমার দেশকে জানান, তার রেস্তোরাঁয় চাইনিজ নানা ধরনের খাবারের ব্যবস্থা আছে। এমনভাবে স্থাপনাগুলো তৈরি করা হয়েছে, যেন খেতে খেতে দর্শনার্থীরা নদীসহ চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
এখানকার ভাসমান রেস্তোরাঁগুলোতেও ভিড় কম নয়। বিশেষ করে চটপটি, ফুচকা খেতে এবং ছবি তুলতে এখানে আসা মানুষদের বেশ আনন্দ করতে দেখা যায়। ভাসমান রেস্তোরাঁর উদ্যোক্তা তাজুল ইসলাম সুজন আমার দেশকে বলেন, ভাইরাল সড়কের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যবসায়ও গতি এসেছে। দর্শনার্থীরা এসে খাবার গ্রহণের পাশাপাশি ছবিও তুলছে। দিনে দিনে দর্শনার্থী আরো বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। কিন্তু সড়কটি নির্জন গ্রামে হওয়ায় এখানে জরুরি ভিত্তিতে সড়ক বাতি এবং নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
সপরিবারে ঘুরতে আসা কাশেম তালুকদার আমার দেশকে বলেন, ‘ঝালকাঠি জেলায় তেমন বিনোদন কেন্দ্র নেই। এ ভাইরাল সড়ককে যদি প্রশাসন সহায়তা করে সাজিয়ে তোলা যায়, তাহলে এটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পটে রূপ নেবে।’
সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ঝালকাঠি শহর ছাড়াও পাশের বরিশাল ও অন্যান্য উপজেলা থেকে শত শত মানুষ এখানে আসছেন। কেউ রেস্তোরাঁয় বসে খাচ্ছেন, কেউ কফি শপে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউবা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। তবে সন্ধ্যার পর সড়কে আলো না থাকায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যায়। স্থানীয়রা মনে করেন, সড়কবাতি ও নিরাপত্তা বাড়ালে এটি দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় পর্যটন স্পটে পরিণত হতে পারে।
এখানকার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আমার দেশ-এর কথা হয় ঝালকাঠি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, শিগগিরই এ ভাইরাল সড়কে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ল্যাম্পপোস্টের ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে ওখানে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।


‘স্বেচ্ছাচারে’ মেতেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ