সবুর শাহ্ লোটাস, বগুড়া
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বর্বর শাসনের অন্যতম উদাহরণ হয়ে আছেন বগুড়ার কাউন্সিলর মাসুদ রানা। তার বিরুদ্ধে ১২৩টি মামলা দেওয়া হয়। এসব মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে তার ওপর পৈশাচিক নিপীড়ন চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। তার ওপর নিপীড়নের কাহিনি শুনলে চোখে পানি চলে আসে।
নিপীড়নের কিছু তথ্য তিনি তুলে ধরেছেন আমার দেশ-এর কাছে। শুনুন তারই ভাষায়Ñ
‘আওয়ামী লীগ আমলে আমাকে ১১ বার রিমান্ডে নেওয়া হয়। ধরে নিয়ে পায়ে গুলি করা হয়। এই অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলিয়ে রেখে গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। নির্যাতনের সময় আমার চোখে কাপড় বেঁধে দিত। এমনকি আমার পায়ের নখ প্লায়ার্স দিয়ে টেনে টেনে উপড়ে ফেলেছিল। আমার পশ্চাতদেশে ও পায়ের তালুতে এত পাশবিক নির্যাতন করা হয় যে, শরীরের মাংস এক পর্যায়ে পচে যায়। এভাবে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি মামলা হাজিরা দিতে হতো।’
মাসুদ রানা জানান, তাকে ট্রেচারে করে খালি গায়ে হাজিরা দিতে হয়েছে। তারপরও আদালত জামিন দেয়নি।
মাসুদ রানা বেঁচে থাকলেও ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে বগুড়ায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির ২০ এবং জামায়াতে ইসলামীর ২৭ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী। সাড়ে ১১ শত মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে তাদের জীবন তছনছ করে দিয়েছে হাসিনা সরকার। অনেক নেতাকর্মী ১০-১৫ বার পর্যন্ত জেল খেটেছেন। বিএনপির দুজন এবং জামায়াতের তিন নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত সাড়ে ১৫ বছরে জেলা ও শহর বিএনপির অফিসে আওয়ামী ক্যাডাররা অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে কমপক্ষে ৭ বার। এদিকে ২০১৩ সালে ৩ মার্চ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজবের পর থেকে জেলা ও শহর জামায়াত তার দলীয় কার্যালয় খুলতে পারেনি।
বিএনপির ঘাঁটি বগুড়া। জামায়াতেরও শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি রয়েছে এ জেলায়। এখানে আন্দোলন দমন করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আওয়ামী লীগের ক্যাডার টাইপের ডিসি ও এসপি জেলায় পাঠানো হতো। তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে অতি উৎসাহ দেখাতেন। এর মধ্যেও বগুড়ায় বিভিন্ন সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। অন্যদিকেও জামায়াত ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গভীর রাত ও ফজরের পর কর্মসূচি পালন করতেন। বগুড়ায় পুলিশের গুলি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন হামলায় ৫ শতাধিক আহত হয় । বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাড়ে সাতশ এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হয় ২৯২টি। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করায় কার্যত সব নেতাকর্মীই আসামি হিসেবে গণ্য হতেন। বগুড়ায় বিএনপির মাসুদ রানা কমিশনারের নামে ছিল ১২৩টি মামলা।
বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি অ্যাড. হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ৭ বার আমাদের দলীয় অফিস আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পুড়িয়ে দেয়। আবু ইউসুফ, রাজু, ইমরান, ফোরকানসহ বগুড়ায় হাসিনা আমলে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের ২০ নেতাকর্মী নিহত হয়। পঙ্গু রয়েছে ফেরদৌস ও মনা । গুলিবিদ্ধ মনা পরে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেল বলেন, তাদের নামে মামলার সংখ্যা ছিল ২৯২। তার নামে মামলা করা হয় ৬৯টি। আওয়ামীবিরোধী আন্দোলনে গোটা জেলায় তাদের ২৭ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন আব্দুল্লাহ, সেলিম রহমান, ইব্রাহিম হোসেন, আল মামুন, আবু রুহানি। এছাড়াও জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে অনেক মামলা দায়ের করা হয়।
জামায়াত নেতারা জানান, ২০১৩ সালের পরে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, কাহালুতে ১৪৪টি মামলা করা হয় । এর পর থেকে চলে পুলিশের স্টিম রোলার। তাদের রাজনৈতিক অফিস পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বগুড়ায় ১০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেতারা জানান, পুলিশের নির্যাতনে তাদের শাকিল, রবিউল এবং শহীদুল নামের ৩ জন কর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
বগুড়ার ১২টি উপজেলায়ই আওয়ামী নির্যাতন ছিল একই রকম। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা রাতে বাড়িতে শান্তিতে ঘরে ঘুমাতে পারেনি। বগুড়ার সব আসনে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রহসনের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রশাসন দিয়ে নির্যাতন চালায়। তাদের সহযোগী ছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা। আওয়ামী লীগ এতটাই সহিংস হয়ে ওঠে যে, তাদের নিজেদের সংঘাতেও অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়। এদিকে বিগত জুলাই আন্দোলনের সময় বগুড়ায় ১৯ জন শহীদ হয়েছে।
আওয়ামী দস্যুপনা
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মমতাজ উদ্দিন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে ওঠেন। বাড়তে থাকে তাদের দলীয় দস্যুপনা। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে কিছু ছিল না। প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘর ও কার্যালয়ে বোমা হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যা, মিছিল-সমাবেশে আক্রমণ, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, সড়ক ও টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ হয়ে ওঠে নিত্যনৈমিত্তিক। সরকারের মনোরঞ্জনে উদগ্রীব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিউৎসাহী সদস্যরাও রাজনৈতিক ক্যাডারদের অপকর্মে অংশ নেয়। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী রেজিমকে স্থানীয় রাজনীতিকরা অন্ধকার সময় হিসেবে আখ্যা দেন।
মামলার পাহাড়
বগুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল বাসেদ বলেন, হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে বগুড়ায় সাড়ে ৭ শতাধিক গায়েবি ও রাজনৈতিক মামলা হয়। মামলাগুলোর বেশিরভাগই কথিত নাশকতার। বাদী কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ, অথবা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এসব মামলায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার নেতাকর্মী আসামি ছিল।
আদালত সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি মামলা ছিল মাসুদ কমিশনারের নামে, ১২৩টি। তিনি জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনার নামে ৫২, যুবদলের জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ৫০, স্বেচ্ছাসেবক দলের সরকার মুকুলের নামে অর্ধ শতাধিক, যুবদলের সাবেক জেলা সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারের বিরুদ্ধে ৫৮, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম খায়রুলের নামে ১৭টি, শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরীর নামে ২৯টি, ধুনট বিএনপির সভাপতি একেএম তৌহিদুল আলম মামুনের নামে ৭০টি মামলা ছিল। ৭৯টি মামলা মাথায় নিয়ে জেলা যুবদলের মিজানুর রহমান মিজান জুলাই বিপ্লবের পরে প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন।
তবে জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের মামলা কম। তাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০ থেকে ১২টি।
জেলা বিএনপির সভাপতি বাদশা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে আমাদের ২০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। প্রশাসনের চাপে আমাদের নেতাকর্মীরা কখনো বাড়িতে থাকতে পারেনি। সে সময় পথে-ঘাটে, জঙ্গলে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকার পরও প্রতিটি কর্মসূচি তারা সফল করেছে।
জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের পরে সাড়ে ৩ শতাধিক গায়েবি ও রাজনৈতিক মামলা খারিজ হয়েছে। তবে বেশ কিছু মিথ্যা হত্যা মামলা এখনো খারিজ হয়নি।
টার্গেট কিলিং
আওয়ামী লীগের শেরপুর-ধুনটের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান এক সময় এসএসএফে শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তার ফরমায়েশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল শফিউর রহমান জ্যোতিকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। দুদিন পর তার লাশ একটি ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রচার করা হয় সে চরমপন্থি দলের অভ্যন্তরীণ গোলাগুলিতে তিনি নিহত হন। মূলত তিনি ছিলেন ধুনট উপজেলা বিএনপির নেতা। তার পুত্র রাসেল সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ধরতে না পারলে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরে নেমে আসত চরম নির্যাতন। জামায়াত নেতা শাহাবুদ্দিনকে না পেয়ে তার ছেলেকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
কমিশনার মাসুদ রানা বলেন, তাকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে তার ছেলে সনির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অথচ সে সময় তিনি ঢাকায় চাকরি করতেন। এদিকে নন্দীগ্রামের ভাটরা এলাকা থেকে নাশকতা মামলার আসামি বিএনপি কর্মী আবু রায়হানকে না পেয়ে তার ছোট ভাই রুবেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয়েছে আল্লামা সাঈদী কথিত চাঁদে দেখার গুজবের পর। এরপর জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপরে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রামে মামলার হিড়িক পড়ে। পরে জামায়াতের নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের পরিবারের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় আটকে রেখে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ছিল অহরহ।
কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা
২০১৬ সালের জুনে শিবগঞ্জের জামতলী লোহার ব্রিজ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউসার (২৫), ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাহালুতে আবু মুসা, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে মালতিনগর ভাটকান্দি সেতু পশ্চিমপাড়ে পুতু সরকার, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে উপশহরের ধুন্দাল সেতু এলাকায় কথিত দুই চরমপন্থি দলের গোলাগুলিতে রাফিদ আনাম ওরফে স্বর্গ, ২০২০ এপ্রিল মাসে শহরের ভাটকান্দি করতোয়া সেতু এলাকায় কবির হোসেন ওরফে মিনকো (৩৯) এবং ২০২০ জুলাই মাসে নিশিন্দারা চকোরপাড়া এলাকার আল-আমিন শেখ ওরফে রাব্বি (৩৭) নিহত হয়। তাদের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেও তাদেরকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাদের পরিবার।
সাউন্ডপ্রুফ টর্চার সেল
২০১৫ সাল থেকে বগুড়া পুলিশ লাইন্সের ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের হলরুমে গোপন টর্চার সেল বানিয়েছিল পুলিশ বাহিনী। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আটক করে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর এ সেল ট্রেনিং সেন্টার থেকে পুলিশ লাইন্সের রিজার্ভের দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয়। এ সময় টর্চারসেল সাউন্ডপ্রুফ করা হয়, যাতে বন্দিদের চিৎকার কেউ শুনতে না পায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই আয়নাঘরের পুরো কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন বগুড়া পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তাÑ পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি আলী আশরাফ ভূঁইয়া ও পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল। আরো জড়িত ছিলেন ওসি জুলহাস রবী ও নূরই আলম সিদ্দিকী। পাশাপাশি জেলা ডিবি পুলিশের ৪ জন এসআই, ২ জন এএসআই ও তিনজন কন্সটেবলও জড়িত ছিলেন।
গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন জানান, বগুড়া পুলিশ লাইন্সে গোপন বন্দিশালা ছিল।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে সবজি ব্যবসায়ী তুহিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে বগুড়া পুলিশ লাইন্সে গোপন বন্দিশালায় নির্যাতনের পর ১০ জুন কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা দেখায় পুলিশ।
অভিযোগ আছে, নওগাঁর মান্দার আনোয়ার-রিমা দম্পতিকে একই বছরের ১১ এপ্রিল আটকের পর পুলিশ লাইনসের বন্দিশালায় রাখা হয়। ওইদিনই স্বামী-স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় একত্রে। এর চারদিন পর ১৫ এপ্রিল অন্তঃসত্ত্বা রিমাকে বগুড়া শেরপুরের একটি বিস্ফোরণ মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। চারমাস পর ৪ আগস্ট কারাগারে হাজতি থাকা রিমা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন ও সেই সন্তান সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
এর ৩ দিন পর রাজশাহীর বাঘমারায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আনোয়ার। ৯ বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে স্বামী-সন্তানের কবরের চিহ্নও পাননি রিমা। পরিবারের কাছে একটি মরদেহও দেওয়া হয়নি।
রিমা আক্তার বলেন, ‘জীবন থেকে যা হারানোর তা হারিয়ে গেছে। তবে আমার নবজাতক সন্তান ও স্বামীর মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, তা জানতে চাই। অন্যায়ভাবে আমার স্বামীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে ও আমাদের সাজানো জীবন তছনছ করেছে তাদের বিচার করতে হবে।’ তিনি গুম কমিশনে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাদেরও নিজস্ব টর্চার সেল ছিল। পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ শহরের ৩টি স্থানে বিচারের নামে বিভিন্ন মানুষকে নিয়ে আটক রেখে অত্যাচার করে অর্থ আদায় করত। আওয়ামী লীগের মনজুরুল আলম মোহন, যুবলীগের লিটন পোদ্দার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভিপি শাহিন, ছাত্রলীগের অসীমসহ বেশকিছু নেতাকর্মী এসব টর্চার সেলের দায়িত্বে ছিল।
২০২২ সালে বগুড়া সরকারি আইএসটি হোস্টেলের টর্চার সেলে শিক্ষার্থী এবং বহিরাগত মানুষদের এনে নির্যাতনের খবর প্রকাশ হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সজল কুমার ঘোষ বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুললে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের মামলা-বাণিজ্য
২০১৩ সালের ৩ মার্চ আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে বগুড়ায় বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ১২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে রয়েছেন সাজাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের মেহেরাব আলীর স্ত্রী আজেনা বেগম, ডোমনপুকুর জায়দারপাড়া গ্রামের হজরত আলী তোতার স্ত্রী মনজিলা বেগম ও একই এলাকার মৃত মনছের আলী জায়দারের স্ত্রী আকলিমা বেগম। এ সময় নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর ও বগুড়া সদর থানা আক্রান্ত হয়। এ ঘটনায় ১০৪টি মামলা দায়ের হয়। পরে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সময়ে যানবাহনে পেট্রলবোমা হামলা, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যাসহ নাশকতার আরো ১৪২টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই ২৪৬ মামলায় জড়িয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিপীড়ন চলতে থাকে। প্রতিটি মামলায় ৫০০ থেকে ১ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর পুলিশের তৎকালীন এসপি মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করত।
বগুড়া জামায়াতে ইসলামীর মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা ইকবাল হোসেন জানান, পুলিশের নির্যাতনে তাদের শাকিল, রবিউল এবং শহীদুল নামের ৩ জন কর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।
অপরদিকে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে যুবদলের তৎকালীন সভাপতি শিপার আল বখতিয়ারের নেতৃত্বে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর যুবদল কর্মীরা বগুড়ার শহরতলী বনানীতে একটি ব্যারিকেড ও পিকেটিংয়ের সময় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা মিছিলের উপর গুলি করলে বগুড়া শহরের ২১ ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ইউসুফ নিহত হন। নিহত আবু ইউসুফের বাবা মো. মুকুল বলেন, পরিবারের উপার্জনক্ষম বড় ছেলের অকাল মৃত্যুতে তারা এখন দিশেহারা । তাদের চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ চালাতে হিমসিম অবস্থা তাদের। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বগুড়া এসে পরিবারকে এককালীন কিছু আর্থিক সহায়তা দেন। বিএনপি পরিবার থেকে ঈদে ও বিভিন্ন সময়ে সাহায্য করে আসছে। তবে তা তাদের জন্য পর্যাপ্ত না।
নিহত বিএনপি নেতা জ্যোতির ছেলে রওশন জামিল রাসেল আমার দেশকে বলেন, শুধু বিএনপি করার কারণে ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের কথায় রাজি না হওয়ায় আমার বাবাকে চরমপন্থি বানিয়ে পুলিশ হত্যা করে। হত্যার পরে আমাদের পরিবারে নেমে আসে আরো অত্যাচার। আমাদের পরিবারের কেউ বাড়িতে থাকতে পারেনি। ৬ বছর পরে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মামলা করেছি। আমি এই হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চাই।
জুলাই আন্দোলনে শহীদ ১৯ জন
মহান জুলাই বিপ্লবে বগুড়া ছিল হাসিনা পতনের আন্দোলনের দুর্গ। এখানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় হাসিনার বাহিনী।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএস) তথ্য মতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সারা দেশে ৮১৯ জন ছাত্র-জনতা শহীদ হন। এর মধ্যে শুধু বগুড়ায় শহীদ হন ১৯ জন। বগুড়ায় আন্দোলনে শহীদ ১৯ জনের নামে ‘স্মৃতিফলকে তাদের নাম রয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত বগুড়ার ১৯ জন হলেন আব্দুল মান্নান (৭০), শিমুল মণ্ডল (৪৫), মাহফুজার রহমান (৩০), জুনাইদ ইসলাম রাতুল (১২), রিপন ফকির (৩৬), শিবগঞ্জের রনি মিয়া (২৮), সেলিম হোসেন (৩৫), দুপচাঁচিয়ার আবু রায়হান (২৯), কাহালুর মনিরুল ইসলাম (২৩), গাবতলীর জিল্লুর সর্দার (৪৫), সাকিল হাসান মানিক (২৩), সাব্বির হাসান (১৪), নন্দীগ্রামের সোহেল রানা (৩০), সোনাতলার আবদুল আহাদ সৈকত (১৬), সারিয়াকান্দির রহমত মিয়া ধলা (২১) দিনাজপুরের হিলির মো. সেলিম (৪৫) এবং বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয় একজন।
স্থানীয় নেতাদের ভাষ্য
জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মাদ সিরাজ বলেন, মিথ্যা মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জাম লালু বলেন, আদালতে আমাদের হাজিরা দিতে দিতে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে আমাদের ২০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। প্রশাসনের চাপে আমরা কখনো বাড়িতে থাকতে পারিনি। সে সময় পথে-ঘাটে, জঙ্গলে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে।
জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও দৈনিক সাতমাথা পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন, গত ১৫ বছরে মামলা মাথায় নিয়ে বাড়িতে থাকতে পারেননি। তাকে না পেয়ে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে। নেতাকর্মীরা একদিকে পুলিশ অন্যদিকে আওয়ামী ক্যাডারদের ভয় উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়েই গেছে।
সুশাসনের জন্য প্রচার অভিযানের (সুপ্র) সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, এসব নির্যাতন যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ন্যায়বিচার করার দাবি জানাই। বগুড়া সুজনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, ফ্যাসিস্টের বিচার অবশ্যই হতে হবে। এই বিচার না হলে আগামীতে আবারো ফ্যাসিস্টদের জন্ম হতে পারে । যে সব সরকারি কর্মকর্তার ইঙ্গিতে বিরোধীদলের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বর্বর শাসনের অন্যতম উদাহরণ হয়ে আছেন বগুড়ার কাউন্সিলর মাসুদ রানা। তার বিরুদ্ধে ১২৩টি মামলা দেওয়া হয়। এসব মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে তার ওপর পৈশাচিক নিপীড়ন চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। তার ওপর নিপীড়নের কাহিনি শুনলে চোখে পানি চলে আসে।
নিপীড়নের কিছু তথ্য তিনি তুলে ধরেছেন আমার দেশ-এর কাছে। শুনুন তারই ভাষায়Ñ
‘আওয়ামী লীগ আমলে আমাকে ১১ বার রিমান্ডে নেওয়া হয়। ধরে নিয়ে পায়ে গুলি করা হয়। এই অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলিয়ে রেখে গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। নির্যাতনের সময় আমার চোখে কাপড় বেঁধে দিত। এমনকি আমার পায়ের নখ প্লায়ার্স দিয়ে টেনে টেনে উপড়ে ফেলেছিল। আমার পশ্চাতদেশে ও পায়ের তালুতে এত পাশবিক নির্যাতন করা হয় যে, শরীরের মাংস এক পর্যায়ে পচে যায়। এভাবে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি মামলা হাজিরা দিতে হতো।’
মাসুদ রানা জানান, তাকে ট্রেচারে করে খালি গায়ে হাজিরা দিতে হয়েছে। তারপরও আদালত জামিন দেয়নি।
মাসুদ রানা বেঁচে থাকলেও ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে বগুড়ায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির ২০ এবং জামায়াতে ইসলামীর ২৭ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী। সাড়ে ১১ শত মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে তাদের জীবন তছনছ করে দিয়েছে হাসিনা সরকার। অনেক নেতাকর্মী ১০-১৫ বার পর্যন্ত জেল খেটেছেন। বিএনপির দুজন এবং জামায়াতের তিন নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত সাড়ে ১৫ বছরে জেলা ও শহর বিএনপির অফিসে আওয়ামী ক্যাডাররা অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে কমপক্ষে ৭ বার। এদিকে ২০১৩ সালে ৩ মার্চ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজবের পর থেকে জেলা ও শহর জামায়াত তার দলীয় কার্যালয় খুলতে পারেনি।
বিএনপির ঘাঁটি বগুড়া। জামায়াতেরও শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি রয়েছে এ জেলায়। এখানে আন্দোলন দমন করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আওয়ামী লীগের ক্যাডার টাইপের ডিসি ও এসপি জেলায় পাঠানো হতো। তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে অতি উৎসাহ দেখাতেন। এর মধ্যেও বগুড়ায় বিভিন্ন সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। অন্যদিকেও জামায়াত ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গভীর রাত ও ফজরের পর কর্মসূচি পালন করতেন। বগুড়ায় পুলিশের গুলি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন হামলায় ৫ শতাধিক আহত হয় । বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাড়ে সাতশ এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হয় ২৯২টি। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করায় কার্যত সব নেতাকর্মীই আসামি হিসেবে গণ্য হতেন। বগুড়ায় বিএনপির মাসুদ রানা কমিশনারের নামে ছিল ১২৩টি মামলা।
বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি অ্যাড. হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ৭ বার আমাদের দলীয় অফিস আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পুড়িয়ে দেয়। আবু ইউসুফ, রাজু, ইমরান, ফোরকানসহ বগুড়ায় হাসিনা আমলে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের ২০ নেতাকর্মী নিহত হয়। পঙ্গু রয়েছে ফেরদৌস ও মনা । গুলিবিদ্ধ মনা পরে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেল বলেন, তাদের নামে মামলার সংখ্যা ছিল ২৯২। তার নামে মামলা করা হয় ৬৯টি। আওয়ামীবিরোধী আন্দোলনে গোটা জেলায় তাদের ২৭ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন আব্দুল্লাহ, সেলিম রহমান, ইব্রাহিম হোসেন, আল মামুন, আবু রুহানি। এছাড়াও জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে অনেক মামলা দায়ের করা হয়।
জামায়াত নেতারা জানান, ২০১৩ সালের পরে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, কাহালুতে ১৪৪টি মামলা করা হয় । এর পর থেকে চলে পুলিশের স্টিম রোলার। তাদের রাজনৈতিক অফিস পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বগুড়ায় ১০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেতারা জানান, পুলিশের নির্যাতনে তাদের শাকিল, রবিউল এবং শহীদুল নামের ৩ জন কর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
বগুড়ার ১২টি উপজেলায়ই আওয়ামী নির্যাতন ছিল একই রকম। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা রাতে বাড়িতে শান্তিতে ঘরে ঘুমাতে পারেনি। বগুড়ার সব আসনে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রহসনের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রশাসন দিয়ে নির্যাতন চালায়। তাদের সহযোগী ছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা। আওয়ামী লীগ এতটাই সহিংস হয়ে ওঠে যে, তাদের নিজেদের সংঘাতেও অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়। এদিকে বিগত জুলাই আন্দোলনের সময় বগুড়ায় ১৯ জন শহীদ হয়েছে।
আওয়ামী দস্যুপনা
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মমতাজ উদ্দিন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে ওঠেন। বাড়তে থাকে তাদের দলীয় দস্যুপনা। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে কিছু ছিল না। প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘর ও কার্যালয়ে বোমা হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যা, মিছিল-সমাবেশে আক্রমণ, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, সড়ক ও টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ হয়ে ওঠে নিত্যনৈমিত্তিক। সরকারের মনোরঞ্জনে উদগ্রীব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিউৎসাহী সদস্যরাও রাজনৈতিক ক্যাডারদের অপকর্মে অংশ নেয়। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী রেজিমকে স্থানীয় রাজনীতিকরা অন্ধকার সময় হিসেবে আখ্যা দেন।
মামলার পাহাড়
বগুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল বাসেদ বলেন, হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে বগুড়ায় সাড়ে ৭ শতাধিক গায়েবি ও রাজনৈতিক মামলা হয়। মামলাগুলোর বেশিরভাগই কথিত নাশকতার। বাদী কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ, অথবা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এসব মামলায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার নেতাকর্মী আসামি ছিল।
আদালত সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি মামলা ছিল মাসুদ কমিশনারের নামে, ১২৩টি। তিনি জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনার নামে ৫২, যুবদলের জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ৫০, স্বেচ্ছাসেবক দলের সরকার মুকুলের নামে অর্ধ শতাধিক, যুবদলের সাবেক জেলা সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারের বিরুদ্ধে ৫৮, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম খায়রুলের নামে ১৭টি, শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরীর নামে ২৯টি, ধুনট বিএনপির সভাপতি একেএম তৌহিদুল আলম মামুনের নামে ৭০টি মামলা ছিল। ৭৯টি মামলা মাথায় নিয়ে জেলা যুবদলের মিজানুর রহমান মিজান জুলাই বিপ্লবের পরে প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন।
তবে জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের মামলা কম। তাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০ থেকে ১২টি।
জেলা বিএনপির সভাপতি বাদশা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে আমাদের ২০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। প্রশাসনের চাপে আমাদের নেতাকর্মীরা কখনো বাড়িতে থাকতে পারেনি। সে সময় পথে-ঘাটে, জঙ্গলে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকার পরও প্রতিটি কর্মসূচি তারা সফল করেছে।
জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের পরে সাড়ে ৩ শতাধিক গায়েবি ও রাজনৈতিক মামলা খারিজ হয়েছে। তবে বেশ কিছু মিথ্যা হত্যা মামলা এখনো খারিজ হয়নি।
টার্গেট কিলিং
আওয়ামী লীগের শেরপুর-ধুনটের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান এক সময় এসএসএফে শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তার ফরমায়েশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল শফিউর রহমান জ্যোতিকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। দুদিন পর তার লাশ একটি ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রচার করা হয় সে চরমপন্থি দলের অভ্যন্তরীণ গোলাগুলিতে তিনি নিহত হন। মূলত তিনি ছিলেন ধুনট উপজেলা বিএনপির নেতা। তার পুত্র রাসেল সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ধরতে না পারলে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরে নেমে আসত চরম নির্যাতন। জামায়াত নেতা শাহাবুদ্দিনকে না পেয়ে তার ছেলেকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
কমিশনার মাসুদ রানা বলেন, তাকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে তার ছেলে সনির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অথচ সে সময় তিনি ঢাকায় চাকরি করতেন। এদিকে নন্দীগ্রামের ভাটরা এলাকা থেকে নাশকতা মামলার আসামি বিএনপি কর্মী আবু রায়হানকে না পেয়ে তার ছোট ভাই রুবেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয়েছে আল্লামা সাঈদী কথিত চাঁদে দেখার গুজবের পর। এরপর জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপরে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রামে মামলার হিড়িক পড়ে। পরে জামায়াতের নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের পরিবারের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় আটকে রেখে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ছিল অহরহ।
কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা
২০১৬ সালের জুনে শিবগঞ্জের জামতলী লোহার ব্রিজ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউসার (২৫), ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাহালুতে আবু মুসা, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে মালতিনগর ভাটকান্দি সেতু পশ্চিমপাড়ে পুতু সরকার, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে উপশহরের ধুন্দাল সেতু এলাকায় কথিত দুই চরমপন্থি দলের গোলাগুলিতে রাফিদ আনাম ওরফে স্বর্গ, ২০২০ এপ্রিল মাসে শহরের ভাটকান্দি করতোয়া সেতু এলাকায় কবির হোসেন ওরফে মিনকো (৩৯) এবং ২০২০ জুলাই মাসে নিশিন্দারা চকোরপাড়া এলাকার আল-আমিন শেখ ওরফে রাব্বি (৩৭) নিহত হয়। তাদের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেও তাদেরকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাদের পরিবার।
সাউন্ডপ্রুফ টর্চার সেল
২০১৫ সাল থেকে বগুড়া পুলিশ লাইন্সের ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের হলরুমে গোপন টর্চার সেল বানিয়েছিল পুলিশ বাহিনী। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আটক করে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর এ সেল ট্রেনিং সেন্টার থেকে পুলিশ লাইন্সের রিজার্ভের দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয়। এ সময় টর্চারসেল সাউন্ডপ্রুফ করা হয়, যাতে বন্দিদের চিৎকার কেউ শুনতে না পায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই আয়নাঘরের পুরো কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন বগুড়া পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তাÑ পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি আলী আশরাফ ভূঁইয়া ও পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল। আরো জড়িত ছিলেন ওসি জুলহাস রবী ও নূরই আলম সিদ্দিকী। পাশাপাশি জেলা ডিবি পুলিশের ৪ জন এসআই, ২ জন এএসআই ও তিনজন কন্সটেবলও জড়িত ছিলেন।
গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন জানান, বগুড়া পুলিশ লাইন্সে গোপন বন্দিশালা ছিল।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে সবজি ব্যবসায়ী তুহিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে বগুড়া পুলিশ লাইন্সে গোপন বন্দিশালায় নির্যাতনের পর ১০ জুন কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা দেখায় পুলিশ।
অভিযোগ আছে, নওগাঁর মান্দার আনোয়ার-রিমা দম্পতিকে একই বছরের ১১ এপ্রিল আটকের পর পুলিশ লাইনসের বন্দিশালায় রাখা হয়। ওইদিনই স্বামী-স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় একত্রে। এর চারদিন পর ১৫ এপ্রিল অন্তঃসত্ত্বা রিমাকে বগুড়া শেরপুরের একটি বিস্ফোরণ মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। চারমাস পর ৪ আগস্ট কারাগারে হাজতি থাকা রিমা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন ও সেই সন্তান সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
এর ৩ দিন পর রাজশাহীর বাঘমারায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আনোয়ার। ৯ বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে স্বামী-সন্তানের কবরের চিহ্নও পাননি রিমা। পরিবারের কাছে একটি মরদেহও দেওয়া হয়নি।
রিমা আক্তার বলেন, ‘জীবন থেকে যা হারানোর তা হারিয়ে গেছে। তবে আমার নবজাতক সন্তান ও স্বামীর মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, তা জানতে চাই। অন্যায়ভাবে আমার স্বামীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে ও আমাদের সাজানো জীবন তছনছ করেছে তাদের বিচার করতে হবে।’ তিনি গুম কমিশনে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাদেরও নিজস্ব টর্চার সেল ছিল। পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ শহরের ৩টি স্থানে বিচারের নামে বিভিন্ন মানুষকে নিয়ে আটক রেখে অত্যাচার করে অর্থ আদায় করত। আওয়ামী লীগের মনজুরুল আলম মোহন, যুবলীগের লিটন পোদ্দার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভিপি শাহিন, ছাত্রলীগের অসীমসহ বেশকিছু নেতাকর্মী এসব টর্চার সেলের দায়িত্বে ছিল।
২০২২ সালে বগুড়া সরকারি আইএসটি হোস্টেলের টর্চার সেলে শিক্ষার্থী এবং বহিরাগত মানুষদের এনে নির্যাতনের খবর প্রকাশ হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সজল কুমার ঘোষ বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুললে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের মামলা-বাণিজ্য
২০১৩ সালের ৩ মার্চ আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে বগুড়ায় বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ১২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে রয়েছেন সাজাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের মেহেরাব আলীর স্ত্রী আজেনা বেগম, ডোমনপুকুর জায়দারপাড়া গ্রামের হজরত আলী তোতার স্ত্রী মনজিলা বেগম ও একই এলাকার মৃত মনছের আলী জায়দারের স্ত্রী আকলিমা বেগম। এ সময় নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর ও বগুড়া সদর থানা আক্রান্ত হয়। এ ঘটনায় ১০৪টি মামলা দায়ের হয়। পরে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সময়ে যানবাহনে পেট্রলবোমা হামলা, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যাসহ নাশকতার আরো ১৪২টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই ২৪৬ মামলায় জড়িয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিপীড়ন চলতে থাকে। প্রতিটি মামলায় ৫০০ থেকে ১ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর পুলিশের তৎকালীন এসপি মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করত।
বগুড়া জামায়াতে ইসলামীর মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা ইকবাল হোসেন জানান, পুলিশের নির্যাতনে তাদের শাকিল, রবিউল এবং শহীদুল নামের ৩ জন কর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।
অপরদিকে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে যুবদলের তৎকালীন সভাপতি শিপার আল বখতিয়ারের নেতৃত্বে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর যুবদল কর্মীরা বগুড়ার শহরতলী বনানীতে একটি ব্যারিকেড ও পিকেটিংয়ের সময় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা মিছিলের উপর গুলি করলে বগুড়া শহরের ২১ ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ইউসুফ নিহত হন। নিহত আবু ইউসুফের বাবা মো. মুকুল বলেন, পরিবারের উপার্জনক্ষম বড় ছেলের অকাল মৃত্যুতে তারা এখন দিশেহারা । তাদের চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ চালাতে হিমসিম অবস্থা তাদের। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বগুড়া এসে পরিবারকে এককালীন কিছু আর্থিক সহায়তা দেন। বিএনপি পরিবার থেকে ঈদে ও বিভিন্ন সময়ে সাহায্য করে আসছে। তবে তা তাদের জন্য পর্যাপ্ত না।
নিহত বিএনপি নেতা জ্যোতির ছেলে রওশন জামিল রাসেল আমার দেশকে বলেন, শুধু বিএনপি করার কারণে ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের কথায় রাজি না হওয়ায় আমার বাবাকে চরমপন্থি বানিয়ে পুলিশ হত্যা করে। হত্যার পরে আমাদের পরিবারে নেমে আসে আরো অত্যাচার। আমাদের পরিবারের কেউ বাড়িতে থাকতে পারেনি। ৬ বছর পরে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মামলা করেছি। আমি এই হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চাই।
জুলাই আন্দোলনে শহীদ ১৯ জন
মহান জুলাই বিপ্লবে বগুড়া ছিল হাসিনা পতনের আন্দোলনের দুর্গ। এখানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় হাসিনার বাহিনী।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএস) তথ্য মতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সারা দেশে ৮১৯ জন ছাত্র-জনতা শহীদ হন। এর মধ্যে শুধু বগুড়ায় শহীদ হন ১৯ জন। বগুড়ায় আন্দোলনে শহীদ ১৯ জনের নামে ‘স্মৃতিফলকে তাদের নাম রয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত বগুড়ার ১৯ জন হলেন আব্দুল মান্নান (৭০), শিমুল মণ্ডল (৪৫), মাহফুজার রহমান (৩০), জুনাইদ ইসলাম রাতুল (১২), রিপন ফকির (৩৬), শিবগঞ্জের রনি মিয়া (২৮), সেলিম হোসেন (৩৫), দুপচাঁচিয়ার আবু রায়হান (২৯), কাহালুর মনিরুল ইসলাম (২৩), গাবতলীর জিল্লুর সর্দার (৪৫), সাকিল হাসান মানিক (২৩), সাব্বির হাসান (১৪), নন্দীগ্রামের সোহেল রানা (৩০), সোনাতলার আবদুল আহাদ সৈকত (১৬), সারিয়াকান্দির রহমত মিয়া ধলা (২১) দিনাজপুরের হিলির মো. সেলিম (৪৫) এবং বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয় একজন।
স্থানীয় নেতাদের ভাষ্য
জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মাদ সিরাজ বলেন, মিথ্যা মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জাম লালু বলেন, আদালতে আমাদের হাজিরা দিতে দিতে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে আমাদের ২০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। প্রশাসনের চাপে আমরা কখনো বাড়িতে থাকতে পারিনি। সে সময় পথে-ঘাটে, জঙ্গলে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে।
জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও দৈনিক সাতমাথা পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন, গত ১৫ বছরে মামলা মাথায় নিয়ে বাড়িতে থাকতে পারেননি। তাকে না পেয়ে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে। নেতাকর্মীরা একদিকে পুলিশ অন্যদিকে আওয়ামী ক্যাডারদের ভয় উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়েই গেছে।
সুশাসনের জন্য প্রচার অভিযানের (সুপ্র) সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, এসব নির্যাতন যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ন্যায়বিচার করার দাবি জানাই। বগুড়া সুজনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, ফ্যাসিস্টের বিচার অবশ্যই হতে হবে। এই বিচার না হলে আগামীতে আবারো ফ্যাসিস্টদের জন্ম হতে পারে । যে সব সরকারি কর্মকর্তার ইঙ্গিতে বিরোধীদলের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সারওয়ার আলম বলেন, শিক্ষিত নারী মানেই শক্তিশালী সমাজ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের দায়িত্ব। পরিবারে মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৩৮ মিনিট আগেখাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার বার্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর নিয়মিত উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেনার রুটিন টহল কার্যক্রমকে বিকৃত করে বলা হচ্ছে, ‘বিহারের জমিতে সেনা ক্যাম্প নির্মাণ হচ্ছে’।
২ ঘণ্টা আগেআপনারা জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়ে একটি আদর্শিক ইসলামী দলে যুক্ত হয়েছেন। তবে শুধু যোগদান করলেই চলবে না; আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। নিজেদেরকে একজন ত্যাগী ও আদর্শিক দায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
৪ ঘণ্টা আগেনেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় প্রথম উপশাখা চালু করেছে জনতা ব্যাংক পিএলসি.। সোমবার কেন্দুয়া উপশাখাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফয়েজ আলম। এ সময় কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
৬ ঘণ্টা আগে