আহসান কবীর, যশোর ও এসএম মুজিবর রহমান, অভয়নগর
যশোর-খুলনা মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একবার ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের আদেশ দেন। আরেকবার সড়কটিকে ‘গলার কাঁটা’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন-‘এবার ঠিক না হলে খবর আছে’। পরেরবার তিনি সওজের খুলনা বিভাগীয় প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি ছাড়াও পাশের দুই জেলার দুই নির্বাহী প্রকৌশলীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন। এরপরও চলাচলের উপযোগী হয়নি রাস্তাটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ সময়েও সড়কটি সংস্কারের কাজ চলছে। একটি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, আরেকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ২০২৫ সালে এসেও কার্যত জনভোগান্তির নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে আছে এ প্রকল্পটি। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই সড়কের যশোর অংশে (যশোর শহরের চাঁচড়া থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার) প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ৩১ কোটি টাকার কাজ এখনো চলমান। কিন্তু অবস্থা এতটাই বেহাল যে, মহাসড়কটিতে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
মহাসড়কের যশোর অংশ সবচেয়ে বেশি বেহাল। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না কেনÑতা জানতে অনুসন্ধান চালানো হয়। দেখা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের হম্বিতম্বি ছিল আসলে লোক দেখানো এবং নিজের পছন্দসই ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি করানোর কৌশল। ২০১৮ সালে যে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়, তারা ছিল ফ্যাসিবাদী সরকারঘনিষ্ঠ। বিশেষ করে শেখ পরিবারের এক প্রভাবশালী সদস্য এবং স্বয়ং ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তারা সে সময় দিনকে রাত করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন।
যশোর-খুলনা মহাসড়ক (এন-৭) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর একটি। বিভাগীয় শহর খুলনার সঙ্গে এ অঞ্চলের অন্য দুই প্রধান শহর যশোর ও কুষ্টিয়া ছাড়াও মাগুরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও সংলগ্ন অঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। এ রাস্তার পাশে নৌবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-বাণিজ্য শহর নওয়াপাড়া। দেশে আমদানি করা সারের প্রায় ৬০ শতাংশ নওয়াপাড়া থেকে সারা দেশে পরিবহন করা হয়। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোলের সঙ্গে খুলনাসহ মোংলা বন্দরের যোগাযোগও মূলত এন-৭ মহাসড়কের ওপর নির্ভরশীল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদের ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহাসড়কটি পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘আমি ১০ বার এখানে এসেছি। তারপরও সড়কের কাজ শেষ হয়নি। গাফিলতির কারণে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হলো। আগামীকালই নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
ওই বছরের জুলাই মাসে ফের পরিদর্শনে এসে ওবায়দুল কাদের যশোর-খুলনা মহাসড়ককে ‘গলার কাঁটা’ আখ্যায়িত করে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সওজের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। সে সঙ্গে মহাসড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে সওজের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর পাশাপাশি তিনদিনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীকে। সে সময় সড়কটির সংস্কারকাজ করছিল দ্য বেসিক ইউআইএল জেভি (জয়েন্ট ভেঞ্চার বা যৌথ অংশীদারত্ব)।
২০১৮ সালে ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কটির ফের সংস্কারকাজ শুরু করে ‘তমা কনস্ট্রাকশন’ ও ‘মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের জুনে ওই কাজ শেষ হয়। কিন্তু এর অল্পদিনের মাথায় যশোর সদরের পদ্মবিলা থেকে অভয়নগর প্রান্ত পর্যন্ত অংশে সড়কটি ফুলে-ফেঁপে উঠে কার্যত সরু লেনে পরিণত হয়। ফলে এটিতে চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, একের পর এক দুর্ঘটনায় পড়তে থাকে যানবাহন। সওজ কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিটুমিনের কাজ করায় এমনটি হয়েছে। এরপর তারা আরো ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সড়কটির দুই পাশের অংশ উঁচু করে।
এদিকে, সড়ক সংস্কারে সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যম ছিল সোচ্চার। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কর্তৃপক্ষ বুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাকারিয়াকে কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে সড়ক সংস্কারকাজের পরীক্ষা করে। ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দাখিল করা ড. জাকারিয়ার রিপোর্টে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সড়কটিতে কম পুরুত্বের বিটুমিন ওয়্যারিং করায় তা টিকবে না। এছাড়া সরকারি গেজেট অনুযায়ী লোডযুক্ত যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ড. জাকারিয়া মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করে যানবাহনের চাপ কমানোর সুপারিশও করেন। তবে কনসালটেন্ট যে দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছিলেন, তাতে কারো কোনো শাস্তি হয়নি। আর তিনি যেসব সুপারিশ করেছিলেন, তাও আলোর মুখ দেখেনি।
দশকজুড়ে এসব ঘটনার পর ২০২২ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনার জনসভার প্রাক্কালে ওবায়দুল কাদের ফের যশোরে আসেন। এই দফায় তার বাণী ছিল ‘যশোর-খুলনা মহাসড়ক ঠিক করতে এক মাস সময় দিয়েছি। এবার রাস্তা ঠিক না হলে খবর আছে।’ কিন্তু বাস্তবে কারোই কোনো খবর হয়নি।
এ বিষয়ে জানাশোনা আছেÑএমন ঠিকাদাররা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের এসব কথাবার্তা ‘মিডিয়া শো’ আর বাকোয়াজি ছাড়া কিছুই ছিল না। তমা কনস্ট্রাকশন ও মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স ফ্যাসিবাদী জমানায় খুবই দাপুটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল। নোয়াখালীভিত্তিক তমা কনস্ট্রাকশন তখনকার সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ। আর খুলনার মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স ছিল শেখ হাসিনার প্রতাপশালী চাচাতো ভাই শেখ হেলালের আশীর্বাদপুষ্ট। এছাড়া রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ এ দুই প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদারি সেক্টরের রাঘব বোয়ালে পরিণত করে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোর্তুজা হোসেন আমার দেশকে বলেন, বহু বছর ধরে কাজ করেও সওজ কর্তৃপক্ষ যশোর-খুলনা মহাসড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি। এ কারণে সড়কটিতে যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
একই কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মামুনুর রশিদ বাচ্চু। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নওয়াপাড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ট্রাক-লরিগুলো ওই রাস্তায় চালাতেই হয়। কিন্তু যাত্রীরা কষ্ট কমাতে অনেকটা পথ ঘুরে চুকনগর হয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন; এতে যাতায়াত খরচ বেড়েছে বেশ।
এসব বিষয়ে কথা হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি যশোরে যোগদানের আগে ঘটে যাওয়া কোনো বিষয়ে মন্তব্য করেননি। চলমান সংকটের বিষয়ে তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘আসলে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে না পারলে সমস্যার সমাধান করা কঠিন। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য মহাসড়কটির নওয়াপাড়ায় একটি স্কেল বসানো হলেও স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে সেটি চালু করা যায়নি। তাছাড়া মজুমদার ট্রেডার্স, নিটল-টাটাসহ বেশকিছু বড় প্রতিষ্ঠান বিধি অমান্য করে রাস্তার ধারে গাড়ি ও বালু, ক্লিংকার, জিপসামসহ নানা পণ্য রেখে দেয়। নওয়াপাড়ায় বেসরকারি ঘাটগুলোর পণ্যবাহী যানবাহন যত্রতত্র মহাসড়কে উঠছে। এভাবে সড়ক টেকানো যায় না।’
বর্তমানে সড়কটির যশোর অংশে যে সংস্কারকাজ চলছে, সেটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জের ‘তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ’। কিন্তু বাস্তবে কাজ করছেন যশোরের বাবু পাটোয়ারী নামের এক ঠিকাদার। ফ্যাসিবাদী জমানায়ও তিনি দাপটের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি করে গেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
অবস্থাদৃষ্টে যশোরের বর্তমান জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ওখানে যত টাকা ঢালা হয়েছে, সমমূল্যের কয়েন দিয়ে নির্মাণ করা হলেও এর চেয়ে ঢের ভালো থাকত সড়কটি।
যশোর-খুলনা মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একবার ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের আদেশ দেন। আরেকবার সড়কটিকে ‘গলার কাঁটা’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন-‘এবার ঠিক না হলে খবর আছে’। পরেরবার তিনি সওজের খুলনা বিভাগীয় প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি ছাড়াও পাশের দুই জেলার দুই নির্বাহী প্রকৌশলীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন। এরপরও চলাচলের উপযোগী হয়নি রাস্তাটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ সময়েও সড়কটি সংস্কারের কাজ চলছে। একটি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, আরেকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ২০২৫ সালে এসেও কার্যত জনভোগান্তির নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে আছে এ প্রকল্পটি। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই সড়কের যশোর অংশে (যশোর শহরের চাঁচড়া থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার) প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ৩১ কোটি টাকার কাজ এখনো চলমান। কিন্তু অবস্থা এতটাই বেহাল যে, মহাসড়কটিতে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
মহাসড়কের যশোর অংশ সবচেয়ে বেশি বেহাল। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না কেনÑতা জানতে অনুসন্ধান চালানো হয়। দেখা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের হম্বিতম্বি ছিল আসলে লোক দেখানো এবং নিজের পছন্দসই ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি করানোর কৌশল। ২০১৮ সালে যে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়, তারা ছিল ফ্যাসিবাদী সরকারঘনিষ্ঠ। বিশেষ করে শেখ পরিবারের এক প্রভাবশালী সদস্য এবং স্বয়ং ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তারা সে সময় দিনকে রাত করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন।
যশোর-খুলনা মহাসড়ক (এন-৭) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর একটি। বিভাগীয় শহর খুলনার সঙ্গে এ অঞ্চলের অন্য দুই প্রধান শহর যশোর ও কুষ্টিয়া ছাড়াও মাগুরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও সংলগ্ন অঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। এ রাস্তার পাশে নৌবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-বাণিজ্য শহর নওয়াপাড়া। দেশে আমদানি করা সারের প্রায় ৬০ শতাংশ নওয়াপাড়া থেকে সারা দেশে পরিবহন করা হয়। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোলের সঙ্গে খুলনাসহ মোংলা বন্দরের যোগাযোগও মূলত এন-৭ মহাসড়কের ওপর নির্ভরশীল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদের ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহাসড়কটি পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘আমি ১০ বার এখানে এসেছি। তারপরও সড়কের কাজ শেষ হয়নি। গাফিলতির কারণে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হলো। আগামীকালই নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
ওই বছরের জুলাই মাসে ফের পরিদর্শনে এসে ওবায়দুল কাদের যশোর-খুলনা মহাসড়ককে ‘গলার কাঁটা’ আখ্যায়িত করে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সওজের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। সে সঙ্গে মহাসড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে সওজের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর পাশাপাশি তিনদিনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীকে। সে সময় সড়কটির সংস্কারকাজ করছিল দ্য বেসিক ইউআইএল জেভি (জয়েন্ট ভেঞ্চার বা যৌথ অংশীদারত্ব)।
২০১৮ সালে ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কটির ফের সংস্কারকাজ শুরু করে ‘তমা কনস্ট্রাকশন’ ও ‘মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের জুনে ওই কাজ শেষ হয়। কিন্তু এর অল্পদিনের মাথায় যশোর সদরের পদ্মবিলা থেকে অভয়নগর প্রান্ত পর্যন্ত অংশে সড়কটি ফুলে-ফেঁপে উঠে কার্যত সরু লেনে পরিণত হয়। ফলে এটিতে চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, একের পর এক দুর্ঘটনায় পড়তে থাকে যানবাহন। সওজ কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিটুমিনের কাজ করায় এমনটি হয়েছে। এরপর তারা আরো ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সড়কটির দুই পাশের অংশ উঁচু করে।
এদিকে, সড়ক সংস্কারে সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যম ছিল সোচ্চার। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কর্তৃপক্ষ বুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাকারিয়াকে কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে সড়ক সংস্কারকাজের পরীক্ষা করে। ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দাখিল করা ড. জাকারিয়ার রিপোর্টে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সড়কটিতে কম পুরুত্বের বিটুমিন ওয়্যারিং করায় তা টিকবে না। এছাড়া সরকারি গেজেট অনুযায়ী লোডযুক্ত যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ড. জাকারিয়া মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করে যানবাহনের চাপ কমানোর সুপারিশও করেন। তবে কনসালটেন্ট যে দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছিলেন, তাতে কারো কোনো শাস্তি হয়নি। আর তিনি যেসব সুপারিশ করেছিলেন, তাও আলোর মুখ দেখেনি।
দশকজুড়ে এসব ঘটনার পর ২০২২ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনার জনসভার প্রাক্কালে ওবায়দুল কাদের ফের যশোরে আসেন। এই দফায় তার বাণী ছিল ‘যশোর-খুলনা মহাসড়ক ঠিক করতে এক মাস সময় দিয়েছি। এবার রাস্তা ঠিক না হলে খবর আছে।’ কিন্তু বাস্তবে কারোই কোনো খবর হয়নি।
এ বিষয়ে জানাশোনা আছেÑএমন ঠিকাদাররা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের এসব কথাবার্তা ‘মিডিয়া শো’ আর বাকোয়াজি ছাড়া কিছুই ছিল না। তমা কনস্ট্রাকশন ও মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স ফ্যাসিবাদী জমানায় খুবই দাপুটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল। নোয়াখালীভিত্তিক তমা কনস্ট্রাকশন তখনকার সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ। আর খুলনার মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স ছিল শেখ হাসিনার প্রতাপশালী চাচাতো ভাই শেখ হেলালের আশীর্বাদপুষ্ট। এছাড়া রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ এ দুই প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদারি সেক্টরের রাঘব বোয়ালে পরিণত করে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোর্তুজা হোসেন আমার দেশকে বলেন, বহু বছর ধরে কাজ করেও সওজ কর্তৃপক্ষ যশোর-খুলনা মহাসড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি। এ কারণে সড়কটিতে যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
একই কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মামুনুর রশিদ বাচ্চু। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নওয়াপাড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ট্রাক-লরিগুলো ওই রাস্তায় চালাতেই হয়। কিন্তু যাত্রীরা কষ্ট কমাতে অনেকটা পথ ঘুরে চুকনগর হয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন; এতে যাতায়াত খরচ বেড়েছে বেশ।
এসব বিষয়ে কথা হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি যশোরে যোগদানের আগে ঘটে যাওয়া কোনো বিষয়ে মন্তব্য করেননি। চলমান সংকটের বিষয়ে তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘আসলে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে না পারলে সমস্যার সমাধান করা কঠিন। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য মহাসড়কটির নওয়াপাড়ায় একটি স্কেল বসানো হলেও স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে সেটি চালু করা যায়নি। তাছাড়া মজুমদার ট্রেডার্স, নিটল-টাটাসহ বেশকিছু বড় প্রতিষ্ঠান বিধি অমান্য করে রাস্তার ধারে গাড়ি ও বালু, ক্লিংকার, জিপসামসহ নানা পণ্য রেখে দেয়। নওয়াপাড়ায় বেসরকারি ঘাটগুলোর পণ্যবাহী যানবাহন যত্রতত্র মহাসড়কে উঠছে। এভাবে সড়ক টেকানো যায় না।’
বর্তমানে সড়কটির যশোর অংশে যে সংস্কারকাজ চলছে, সেটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জের ‘তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ’। কিন্তু বাস্তবে কাজ করছেন যশোরের বাবু পাটোয়ারী নামের এক ঠিকাদার। ফ্যাসিবাদী জমানায়ও তিনি দাপটের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি করে গেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
অবস্থাদৃষ্টে যশোরের বর্তমান জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ওখানে যত টাকা ঢালা হয়েছে, সমমূল্যের কয়েন দিয়ে নির্মাণ করা হলেও এর চেয়ে ঢের ভালো থাকত সড়কটি।
মঙ্গলবার (২১অক্টোবর) জিয়া সাইবার ফোর্সের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কে,এম হারুন অর রশিদ ও সাধারন সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি- সাধারন সম্পাদকসহ ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহি কমিটি ঘোষনা দেন। ওই কিমিটির নির্বাহি সদস্য হিসেবে নূর আলমের নাম রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেনিখোঁজ মুফতি মুহিবুল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ জানান, তিনি জুমার নামাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন ইসকন নিয়ে বয়ান করে ছিলেন। এরপর থেকে তাকে হুমকি দিয়ে বেশ কয়েকটি উড়ো চিঠি দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি বিষয়টি নিয়ে মসজিদ কমিটির সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে বুধবার সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
২ ঘণ্টা আগেগাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালীতে নদী শাসন ও ভাঙনরোধ প্রকল্পের কাজে বাধার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। বুধবার বিকেলে যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় নদীপাড়ের মানুষ এ মানববন্ধন করে।
২ ঘণ্টা আগেস্থানীয়রা জানান, আলমাস উপজেলার ৩ নম্বর চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে। জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) সুইরঘাট বিওপির চার বিজিবি সদস্য দুটি মোটরসাইকেলযোগে চোরাইপণ্যবাহী একটি পিকআপকে ধাওয়া করেন। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে আলমাস গুলিবিদ্ধ হন।
৩ ঘণ্টা আগে