মুরগির মাংসে টাইফয়েডের জীবাণু: বাকৃবির গবেষণা

প্রতিনিধি, বাকৃবি
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫, ২১: ১৪

দেশের বেশিরভাগ স্থানীয় পোল্ট্রি বাজারে এখনো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই করা হয়। এতে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে এবং নানা রোগের বিস্তার ঘটছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক ময়মনসিংহ সদরের বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহীত মুরগির মাংসে টাইফয়েড (সালমোনেলা) ও ডায়রিয়া (ইকোলাই) জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বাকৃবি পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণাটি ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা আয়োজিত ‘১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার -২০২৫’-এ উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, স্থানীয় বাজারে বিক্রিত মুরগির মাংসে বিপজ্জনক মাত্রায় সালমোনেলা ও ইকোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এই ব্যাকটেরিয়াগুলো মাংসে থাকার কথা নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, এসব মাংসের নমুনায় সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ লগারিদম ৪.০২ থেকে ৫.৫৯ সিএফইউ/গ্রাম এবং ইকোলাই ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ লগারিদম ৪.০১ থেকে ৫.৯৪ সিএফইউ/গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। পাশাপাশি, স্থানীয় বাজারের মাংসের মোট কার্যকর ব্যাকটেরিয়া (টিভিসি) সংখ্যাও অনেক বেশি ছিল।

এ গবেষণার অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ সদর ও আশেপাশের ১২টি স্থানীয় বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে চরপাড়া বাজার, মিন্টু কলেজ বাজার, মেছুয়া বাজার, নতুন বাজার, সানকিপাড়া বাজার, কেওয়াটখালী বাজার, শেষমোড় বাজার, সুতিয়াখালী বাজার, ভাবখালী বাজার, কে আর মার্কেট, শম্ভুগঞ্জ বাজার এবং গাছতলা বাজার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় বাজারের ৮৪.৬২ শতাংশ দোকানে মুরগি রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই, ৯২ শতাংশ দোকানে ময়লা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, এবং ৪৬.১৫ শতাংশ দোকানে পর্যাপ্ত আলো নেই। এছাড়া, ৩০.৭৭ শতাংশ দোকানে মাংস কাটার স্থান অস্বাস্থ্যকর এবং পরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা অনুপস্থিত। ফলে এসব জায়গায় ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।

অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানীয় বাজারের পোল্ট্রি দোকানে অপর্যাপ্ত জায়গায় মুরগি রাখা হচ্ছে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জবাই করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। এর সমাধানে স্থানীয় বাজারগুলোতে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রসেসিং ইউনিটের মাধ্যমে জবাইকৃত মাংসে কোনও সালমোনেলা বা ইকোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এটি প্রমাণ করে যে এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত মাংস নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। এ কারণে, গবেষকরা স্থানীয় বাজারসমূহে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত মাংস সরবরাহের তাগিদ দিয়েছেন।

স্থানীয় বাজারের পোল্ট্রি দোকানীদের ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনে উৎসাহিত করতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান জরুরি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পোল্ট্রি মুরগি বিক্রি বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা প্রয়োজন। এছাড়া, বাজার থেকে মাংস কেনার সময় ক্রেতাদের সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাইকৃত মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে সচেতন করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত