গ্রামীণ সড়ক সংস্কার, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের নামে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার জন্তি গ্রাম থেকে কদমতলী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের দুপাশে থাকা প্রায় পাঁচ শতাধিক অর্জুন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ঔষধি গুণসম্পন্ন এসব অর্জুন গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দরা বলছেন, প্রত্যন্ত গ্রামীণ সড়কের দুপাশে সারি সারি ঔষধি গুণসম্পন্ন অর্জুন গাছের এমন দৃশ্য বিরল। গাছগুলোর বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। এগুলো বহু বছর ধরে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। দুপাশে লাগানো অর্জুন গাছগুলো সড়কের সৌন্দর্য যেমন বাড়িয়েছিল, তেমনি প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা আসেন এ গাছের ছাল-বাকল আর পাতা সংগ্রহ করতে। সেই গাছ কাটায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হাসান বলেন, ‘সড়ক ঠিক করার কথা বলে এত পুরোনো গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে, অথচ এই গাছগুলো ঔষধি গুণসম্পন্ন। এসব গাছ এখন দেখাই পাওয়া যায় না। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে এ গাছের ছাল-বাকল নিয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের আরো ভেবে চিন্তে গাছগুলো কাটা উচিত ছিল।’
রায়হান ইসলাম বলেন, ‘এত গাছ কাটা দেখে অবাক হয়েছি। এসব গাছের কারণে দুপাশে সড়কটি এলাকায় সবুজ বেষ্টনী ছিল। গাছগুলো কেটে ফেলায় এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া এমন গাছ ৫০ বছরেও হবে না। সড়ক সংস্কার নামে গাছ কেটে নিজেদের পকেটও ভারী করা হতে পারে বলে অভিযোগ করেন তিনি।’
বন্যপ্রাণী সংস্করণে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত ইউসুনছার রহমান হেবজুল বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন চাই, তবে এমন উন্নয়ন না হোক যেটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। সরকারি উন্নয়নের ও রাস্তা সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে যেভাবে গাছ কাটা হচ্ছে তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। একজন পরিবেশকর্মী হিসেবে ব্যর্থ, কারণ এর প্রতিকার আমাদের হাতে নেই প্রতিবাদ ছাড়া।’
পরিবেশবিদদের অভিযোগ, উন্নয়ন ও সড়ক প্রশস্তকরণের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে সড়কের গাছ কাটায় এলাকার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাদের মতে, গাছ না কেটেই সড়ক প্রশস্তকরণ সম্ভব। তাতে রক্ষা পাবে পরিবেশ।
এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সৈকত দাশ বলেন, ‘গাছগুলো রেখে সড়ক প্রশস্তকরণ ঝুঁকি ছিল। এজন্য গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত হয়।’
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন (বিএমডিএ) নওগাঁ রিজিয়ন-২ নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মাদ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। সড়কের কাজ শেষ হলে নতুন করে আবার গাছ লাগানো হবে। তবে কতগুলো গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে জানতে চাইলে মনে নেই বলে জানান তিনি।

