এক বছরে বিএনপির ৪৮ নেতাকর্মী বহিষ্কার

গোলাম রহমান, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১: ০৭
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১: ০৮

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্টমুক্ত পটুয়াখালীতে মাঠের রাজনীতিতে সরব থাকলেও গুটিকয়েক নেতাকর্মীর সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে স্বস্তিতে নেই পটুয়াখালী বিএনপি। দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে বহিষ্কার, অব্যাহতি, শোকজের মতো কঠোর অবস্থানে রয়েছে দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাট, হামলা, মাদক সেবনের ছবি ভাইরালসহ নানা অভিযোগে পটুয়াখালীতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, সংগঠনের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কারসহ ৩৮ নেতাকর্মীকে শোকজ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০২৪-এর ৫ আগস্ট-পরবর্তী জেলায় প্রথম দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয় যুবদল পটুয়াখালী জেলা শাখার সহসভাপতি ও সদর উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক রিমানুল ইসলাম রিমু, জেলা যুবদল সহসভাপতি ও পৌর যুবদল আহ্বায়ক রুহুল আমিন সিকদার আকরাম, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মৃধাকে।

বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্তে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আবদুল করিম মৃধা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আরিফ বিল্লাহ, পটুয়াখালী পলিটেকনিক কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অমি প্যাদা ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদি হাসান রাকিবকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বছরের ১২ আগস্ট চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংহতি পরিপন্থী অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আফরোজা সীমার সভাপতি পদসহ দলীয় সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাট, হামলা, মাদক সেবনের ছবি ভাইরালসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে বহিষ্কার, অব্যাহতি ও শোকজ করা হয়েছে।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা : ২০২৪-এর ৭ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর ফরাজিকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার, চাঁদাবাজির অভিযোগে মজিদবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, উপজেলা বিএনপির গ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক মো. গোলাম সারোয়ারকে বহিষ্কার করা হয়।

মির্জাগঞ্জে আমার দেশ-এর সাংবাদিক শামসুল আলমকে গালাগাল ও জীবননাশের হুমকি দেওয়ায় উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল এবং তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ বায়েজিদকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বাউফল উপজেলা : বাউফলে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের স্লোগান দেওয়ার কারণে বাউফল উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম জসিম, যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ মাহমুদকে এবং মাদক সেবনের ভিডিও ফাঁস হওয়ায় যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান পলাশকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

নাজিরপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেনকে ও কনকদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল মুন্সী টিপুকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বহিষ্কারসহ বাউফল পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবিরকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

গলাচিপা উপজেলা : দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নীতি-আদর্শবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য চারজনকে বহিষ্কারসহ ৩২ জনকে শোকজ করা হয়েছে। চরবিশ্বাস ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনকে দলীয় প্রাথমিক সদস্য ও দলীয় সব কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া পৌর মৎস্যজীবী দলের সভাপতি জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ খোকন, পৌর ছাত্রদল সভাপতি এমদাদুল হকসহ ৩২ নেতাকর্মীকে শোকজ করা হয়।

দশমিনা উপজেলা : মারামারি, চরের জমি দখলসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে চারজনকে বহিষ্কার ও পাঁচজনকে শোকজ করা হয়। এরা হলেন দশমিনা উপজেলা বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, উপজেলা বিএনপি সদস্য খালিদ হোসেন যুবরাজ, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি কাজী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল মোল্লা।

এছাড়া উপজেলার যেসব নেতাকর্মীকে শোকজ করা হয়েছে, তারা হলেন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল আমিন প্যাদা, যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল জোমাদ্দার, ছাত্রদল আহ্বায়ক কাজী তানজিল হাসান রিডেন, শ্রমিক দলের সদস্য সচিব রিকোজ খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আকবার খান।

রাঙ্গাবালী উপজেলা : দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) চাল আত্মসাতের অভিযোগে যুবদল সদস্য মুরাদ উদ্দিন বিপ্লব ও নাহিদুজ্জামান সোহাগকে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়াও বহিষ্কার করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য কাইউম শিকদার, দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল, সদর ইউনিয়নের ছাত্রদল সহসভাপতি ফয়সাল হাওলাদার, সহ-প্রচার সম্পাদক সদর ইউনিয়ন নাদিম পালোয়ান, মৌডুবী ইউনিয়নের সহ-শিক্ষা সাহিত্য সম্পাদক গোলাম মেহরাজ ও চরমোন্তাজ ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি কামাল সিকদার।

দুমকি উপজেলা : চাঁদা দাবির ভিডিও ভাইরাল ও থানায় চাঁদাবাজি মামলার আসামি হওয়ায় এবং দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য গাজী অলিউর রহমান অলি, যুবদলের সদস্য সচিব সালাহ্‌উদ্দিন রিপন শরীফ।

কলাপাড়া উপজেলা : দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকায় ছয় নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে পাঁচজনের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে কলাপাড়া উপজেলায় একজন বহিষ্কার হলেন। তিনি উপজেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র সহসভাপতি সোহেল দেওয়ান।

কুয়াকাটা : বার ভাঙচুর, পর্যটককে আটকে রেখে মারধর, সালিশবাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ছয়জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন পৌর যুবদল সদস্য ইউসুফ ঘরামি, কুয়াকাটা ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি সোহেল মিয়াজী ও একই ওয়ার্ডের সদস্য মিরাজ হাওলাদার, ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ। লতাচাপলী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আল আমিন হোসেন বিপ্লবকে বহিষ্কার এবং একই ইউনিয়নের শ্রমিক দলের সভাপতি রুহুল আমিন ও কুয়াকাটা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি বেলাল হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়। ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন রিজভীর দলীয় পদ স্থগিত করা হয়।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন আমার দেশকে বলেন, জেলায় যেখানে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, সেখানেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড করলে সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কতিপয় সুবিধাভোগী দলের মধ্যে বিশৃঙ্খল সৃষ্টি করছে। দুষ্টু ও সুবিধাভোগীদের দলে কোনো জায়গা নেই। বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত