ঝালকাঠি জেলার দুটি সংসদীয় আসনে এখন ভোটের হাওয়া তুঙ্গে। প্রার্থীরা প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঝালকাঠি-২ আসনে প্রথম দফায় বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হলেও ঝালকাঠি-১ আসন স্থগিত ছিল।
ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি জোট থেকে প্রার্থী দেওয়ার গুঞ্জন থাকলেও এখানে সম্প্রতি দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তাই জেলার দুটি আসনেই এখন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করবেন বিএনপি প্রার্থীরা। তবে জেলার দুটি আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিতরা অধিকাংশই মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে মাঠে নামেননি। নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে এখন বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ মনোনয়নবঞ্চিতদের মাঠে নামানো।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ঝালকাঠি-২ আসনে অনেক আগেই দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ঝালকাঠি-১ আসনেও সম্প্রতি তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। জামায়াতের প্রচারে জনসাধারণের ব্যাপক সাড়া লক্ষ করা গেছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন দুটি আসনে, এনসিপি ও খেলাফত মজলিস ঝালকাঠি-১ আসনে এবং এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ ঝালকাঠি-২ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এ দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন প্রচার চালাচ্ছে।
রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসনে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার এবং সদর ও নলছিটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-২ আসনে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৫৯ হাজার।
ঝালকাঠি-১
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল। তিনি ২০০৯ সালে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বজলুল হক হারুনের কাছে হেরে যান। তবে সে সময় তিনি ৪০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এবার তিনি মনোনয়ন পেয়েই মাঠে নেমেছেন। তবে এই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত আট প্রার্থী কেউই এখন পর্যন্ত জামালের সঙ্গে মাঠে নামেননি।
এই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা আমার দেশকে বলেন, আমি দলের নির্দেশের বাইরে যাব না। দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করব।
মনোনয়নপ্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম আমার দেশকে বলেন, যদিও রফিকুল ইসলাম জামাল আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি, তারপরও কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলে এলাকায় গিয়ে দলের পক্ষে কাজ করব।
মনোনয়নবঞ্চিতদের মাঠে না নামা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ আসনের বিএনপি প্রার্থী রফিকুল ইসলাম জামাল আমার দেশকে বলেন, প্রতিযোগিতা শেষ হলে সবাই একত্রিত হয়ে যায়। সে হিসেবে আমি মনে করি তারা আমার সঙ্গে মাঠে থাকবেন। আর যারা ধানের শীষের পক্ষে মাঠে থাকবেন না, তাদের আমি ফ্যাসিস্ট শাহজাহান ওমরের দোসর মনে করি।
এদিকে ঝালকাঠি-১ আসনে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল হককে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করার পর দাঁড়িপাল্লার পক্ষে প্রচার ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। নির্বাচনি এলাকায় অনেক আগে থেকেই ফয়জুল হক প্রচার চালাচ্ছিলেন। তবে দলীয় মনোনয়নে তার প্রচারে আরো গতি আসে। ইতোমধ্যেই ফয়জুল হক সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলেছেন। নির্বাচনি এলাকা রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায় করেছেন বড় শোভাযাত্রা।
ফয়জুল হক আমার দেশকে বলেন, সারা দেশেই দাঁড়িপাল্লার জোয়ার এসেছে। রাজাপুর, কাঠালিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। সাধারণ মানুষ এখন শোষণমুক্ত সমাজ চায়।
এ আসনে বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও দলীয় প্রার্থী দিয়েছে এনসিপি ও খেলাফত মজলিস। এনসিপি থেকে এই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহামুদা মিতু। তবে এখনো মাঠে এনসিপির কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। মাহামুদা মিতু আমার দেশকে বলেন, নতুন বন্দোবস্তের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করব এ কারণেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। ইতোমধ্যেই আমি কাঠালিয়া উপজেলায় সড়ক সংস্কার ও ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ এনেছি। নির্বাচনি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাব।
এ আসনে ইসলামী আন্দোলন ইব্রাহীম আল হাদী এবং খেলাফত মজলিস তালগাছিয়া দরবার শরিফের পীর মুফতি নুরুল্লাহ আশরাফিকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সাধারণ ভোটার, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে আট দলের সমর্থন পাচ্ছেন জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ফয়জুল হক।
রাজাপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের ভোটার ওমর ফারুক আমার দেশকে বলেন, ঝালকাঠি-১ আসনে মূলত ধানের শীষের সঙ্গে দাঁড়িপাল্লারই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ঝালকাঠি-১ আসনে এবার বিজয় নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাবেন দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থীÑএমনটাই ধারণা এই আসনের ভোটারদের।
ঝালকাঠি-২
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এর আগেও তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে ২০০১ ও ২০০৫ সালে এমপি নির্বাচিত হন।
এ আসনেও ইলেনের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের মাঠে নামানো। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে হেভিওয়েট কেউই তার সঙ্গে মাঠে নামেননি। এমনকি ইলেনের প্রচারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবকেও দেখা যায়নি। এদের ছাড়াই তিনি নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
তবে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদেরসহ জেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামাতে না পারলে নির্বাচনি মাঠে আটদলীয় জোটকে মোকাবিলা করা তার জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটারসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে ইসরাত সুলতানা আমার দেশকে বলেন, শুধু যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন পাননিÑতারাই নির্বাচনি প্রচারে সক্রিয় হননি। ইতোমধ্যে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। আশা করি মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও আগামীতে নির্বাচনি প্রচারে শামিল হবেন।
অন্যদিকে এ আসনে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী শেখ নেয়ামুল করিম। তার দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গ্রাম-গঞ্জে প্রায় প্রতিদিনই মিছিল-মিটিং হচ্ছে। ইতোমধ্যেই তরুণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক এই এজিএস। নেয়ামুল করিম আমার দেশকে বলেন, আমি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আট দলের মনোনয়ন পেলে দুটি উপজেলাতেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।
আট দলের মনোনয়নের বিষয়ে চানতে চাইলে নেয়ামুল করিম বলেন, একটি নিরপেক্ষ জরিপ হয়েছে, সেখানে আমি আটদলীয় জোটভুক্ত অন্যান্য দলের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছি। আশা করছি আমাকেই এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে এর ব্যতিক্রম হলেও আমি ও আমার দল জোটপ্রার্থীর পক্ষে কাজ করব।
এদিকে জামায়াতের পাশাপাশি প্রচার চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সিরাজী। তিনিও হাতপাখা প্রতীকের পক্ষে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। তবে এই আসনে আট দলের প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ আসনে অন্য দলগুলোর মধ্যে ঈগল প্রতীকে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি তাদের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ জামাল উদ্দিনের নাম ঘোষণা করেছে। শেখ জামাল উদ্দিন নির্বাচনি এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। জামাল উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদের সবার বাড়িই নলছিটি উপজেলায়। তাই সদরের একক প্রার্থী হিসেবে আমি ভোটে এগিয়ে যাব।
এছাড়া ট্রাক প্রতীকের গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম সাগর সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন।
সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে আটদলীয় জোটপ্রার্থী হিসেবে শেখ নেয়ামুল করিমকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিএনপির প্রার্থী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
ঝালকাঠি শহরের স্কুলশিক্ষক মাসুম বিল্লাহ আমার দেশকে বলেন, তরুণদের মধ্যে নেয়ামুল করিমের জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাই এখন নেয়ামুলকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
একই ধরনের বক্তব্য ঝালকাঠি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার বাবুল মিয়ারও। তবে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সিরাজী দীর্ঘদিন ধরে জেলার আনাচে-কানাচে ওয়াজ মাহফিল করায় তারও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

