পুলিশের ভয় দেখিয়ে গৃহবধূর গহনা আত্মসাৎ যুবদল নেতার

উপজেলা প্রতিনিধি, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২০

পটুয়াখালীর মহিপুরে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এক গৃহবধূর কাছ থেকে রূপার গহনা ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল নেতা আলম সন্যমতের বিরুদ্ধে। ঘটনায় মহিপুর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আইউব আকন ফিরোজের সম্পৃক্ততার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে মহিপুর বাজারের ‘মিঠুন গিনি হাউজ’নামের একটি স্বর্ণালংকার দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৩০০ ভরি রূপার গহনা চুরি হয়। পরবর্তীতে পুলিশ চোরচক্রের দুই সদস্যকে আটক করে এবং কিছু গহনা উদ্ধার করে। তবে বাকি গহনাগুলো স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয়ে যায় বলে জানা যায়।

এদিকে স্থানীয় গৃহবধূ পাখি আক্তার অজ্ঞাতসারে ওই চোরচক্রের কাছ থেকে প্রায় দুই ভরি রূপার গহনা ক্রয় করেন।

পরে মহিপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলম সন্যমত তাকে জানান, গহনাগুলো চুরি করা। এরপর আলম নিজেকে পুলিশের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গহনাগুলো নিজের কাছে নিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, ‘পুলিশকে ম্যানেজ করতে হবে’ বলে পাখি আক্তারের কাছ থেকে নগদ ২,৫০০ টাকা হাতিয়ে নেন।

এ ঘটনায় প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, আলম সন্যমত স্বীকার করছেন যে, গহনাগুলো তিনি নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আইউব আকন ফিরোজের কাছে জমা দিয়েছেন। অডিওর এক পর্যায়ে আইউব আকন ফিরোজ নিজেও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিভিন্ন কৌশলে টোপ দিয়ে জিনিসগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী পাখি আক্তার বলেন, আমি জানতাম না গহনাগুলো চুরি করা। আলম ভাই বললেন, পুলিশের ভয় আছে, গহনাগুলো আমার কাছে দিন, আমি বিষয়টি দেখি। পরে উনি গহনাগুলো নিয়ে যান এবং পুলিশকে দেওয়ার কথা বলে ২ হাজার ৫০০ টাকাও নেন। কিন্তু পুলিশকে না দিয়ে তিনি সেগুলো আত্মসাৎ করেছেন। এখন কিছুই ফেরত দিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত যুবদল নেতা আলম সন্যমতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোনে বলেন, আমি কিছুই জানি না। এতটুকু বলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আইউব আকন ফিরোজ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রথমে সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও আর সাড়া দেননি।

মহিপুর থানা যুবদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। অভিযোগ সত্য হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যুবদলে কোনো অপরাধীর ঠাঁই নেই।

মহিপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শাহজাহান পারভেজ বলেন, আমি কেবল বিষয়টি শুনলাম। কাউকে এ নিয়ে সালিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ হাসান বলেন, পুলিশ কিছু চোরাই মাল উদ্ধার করেছে, তবে কেউ পুলিশের কাছে কোনো গহনা জমা দেয়নি। পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ কিছু ‘উদ্ধার’ করলে সেটা প্রতারণা। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাদের দাবি, অপরাধী যে-ই হোক, রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়—আইন অনুযায়ী বিচার হোক।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত