পুরনো ঢাকায় পাথর মেরে খুন

সোহাগ হত্যাকাণ্ডে স্তব্ধ গ্রামবাসী

এম হারুন-অর-রশিদ রিংকু, বরগুনা
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৬: ১৯

ঢাকায় পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বরগুনায় তার নিজ গ্রামে। এলাকাবাসীর মতে, সোহাগ শুধু একজন ব্যবসায়ী হিসেবেই নয়, একজন ভালো মানুষ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তার এমন নির্মম মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। সোহাগের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। সোহাগের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা আমার দেশকে জানান, ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বসবাস করলেও গ্রাম ও এলাকার মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল গভীর। ঈদ কিংবা বিশেষ উপলক্ষে গ্রামে এলেই গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতেন তিনি। অসুস্থদের চিকিৎসায় সাহায্য এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করতেন তিনি। সম্প্রতি নিজ গ্রামে নির্মাণাধীন মসজিদের জন্য এক লাখ টাকা দান করেছেন সোহাগ।

এদিকে, মামলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ সোহাগের স্বজনদের। এ ঘটনায় করা মামলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ নিহত সোহাগের স্বজনদের। তাদের দাবি, মামলার জন্য স্বজনদের একটি কপি দেখানো হলেও পরবর্তী সময়ে এজাহার হিসেবে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে অন্য আরেকটি কপিতে। তাদের দাবি, মামলা থেকে জড়িতদের নাম বাদ দিয়ে নিরীহ ব্যক্তিদের জড়ানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার সকালে বরগুনার ঢলুয়া ইউনিয়নের রায়ভোগ গ্রামে সোহাগের নানাবাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সোহাগের অকালমৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের মাতম চলছে। এমন নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে একজন মানুষের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। গ্রামে সজ্জন ও দানশীল হিসেবে পরিচিত সোহাগের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন এলাকাবাসী।

সোহাগের ছেলে সোহান আমার দেশকে বলেন, আমার বাবাকে ওরা এভাবে মেরে ফেলল, আমরা এখন কোথায় যাব? কার কাছে থাকব? কে আমাদের ভরণপোষণ দেবে? আমার বাবা মানুষজনকে সাহায্য করত, এখন আমাদের অন্যের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।

সোহাগের মেয়ে সোহানা আমার দেশকে বলেন, আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আর কারো বাবা যেন এভাবে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে প্রাণ না হারান, সেই নিশ্চয়তা রাষ্ট্রের কাছে চাই। ওরা শুধু আমার বাবাকেই হত্যা করেনি, আমাদের গোটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই দুর্ভাগ্যের জীবন সোহাগের। সোহাগের বয়স যখন মাত্র সাত মাস, তখন বজ্রপাতে মৃত্যু হয় তার বাবা আইউব আলীর। সেই থেকে শিশু সোহাগ ও অপর দুই কন্যাসন্তান নিয়ে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান অসহায় মা আলেয়া বেগম। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সোহাগ সবার ছোট।

সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মিটফোর্ডে মেসার্স সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান ছিল। স্ত্রী লাকি বেগম (৩০), মেয়ে সোহানা (১৪) ও ছেলে সোহানকে (১০) নিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনে বসবাস করতেন।

সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম আমার দেশকে জানান, অনেক দিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার সন্ত্রাসী টিটু, রনি কাইউম, ছোট মনির এবং লম্বা মনিরসহ কয়েজজন সন্ত্রাসী সোহাগের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ার কারণে বুধবার বিকালে সোহাগের দোকানে লাগিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।

তিনি জানান, বুধবার বিকালে সোহাগ তার দোকানের তালা ভেঙে দোকানে ঢুকতে চাইলে সন্ত্রাসীরা তাকে পাথর দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এ সময় মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে যায়।

উল্লেখ্য, মিটফোর্ডে চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসীদের পাথরের আঘাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের লাশ শুক্রবার সকাল ১০টায় তার নানাবাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার রায়ভোগ গ্রামে মা আলেয়া বেগমের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত