শফিউল আজম টুটুল, ঝালকাঠি
ঝালকাঠিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে ভেঙে পড়েছে একটি নির্মাণাধীন সেতু। কোথাও কোথাও দিনের পর দিন কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদাররা। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এছাড়া দুর্নীতি ঢাকতে রাতের আঁধারে চলে সেতুর ঢালাইয়ের কাজ। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আবার টেন্ডার আহ্বান না করে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ ঠিকাদারসহ ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের মধ্যে।
অন্যদিকে এসব সেতুর কাজে পলাতক আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ঝালকাঠি এলজিইডির প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। এমনকি এসব আওয়ামী ঠিকাদাররা এখনো পরোক্ষভাবে বিভিন্ন টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বিএনপির কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদারকে সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নিচ্ছেন। এসব কাজে সহায়তা করছেন আওয়ামী লীগ আমলে যোগ দেওয়া প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী এবং উপসহকারী প্রকৌশলীরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ ফেলে রাখলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করে সেতু ধসে গেলেও সংশ্লিষ্ট এসও এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
ধসে গেছে কাঠালিয়ার নির্মাণাধীন সেতু
সম্প্রতি জেলার কাঠালিয়া উপজেলায় একটি নির্মাণাধীন গার্ডার সেতু ধসে পড়ায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের সোনার বাংলা বাজারের কাছের সেতুটি নির্মাণাধীন অবস্থায় ধসে যায়। ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির জন্য বরাদ্দ তিন ভাগের একভাগ বিল ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিসান এন্টারপ্রাইজ তুলে নিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার সঙ্গে তালগাছিয়া গ্রামের এই সংযোগ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে উপজেলা সদরে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। গ্রামের বিশ্বজিৎ ব্যাপারি আমার দেশকে বলেন, এখানে ১০ কড়াই বালুতে এক বস্তা সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে এবং ঢালাই দেওয়া হয়েছে সবার অগোচরে রাতের বেলায়, যার কারণে সেতুটি ধসে গেছে। একই এলাকার স্বপন খরাতি জানান, সেতুর পাইলিং সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। ইস্পাতের পাত না দিয়ে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া এলজিইডির প্রকৌশলীর তেমন কোনো তদারকি ছিল না। সোনার বাংলা স্কুলের শিক্ষক সুজন সিকদার বলেন, ‘এমনিতেই কাজ চলছিল ধীরগতিতে। এর মধ্যে আবার সেতুটি ভেঙে গেছে। এ কারণে দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেল। যেভাবে কাজ চলছে এটা কতটা ভালো হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও শৌলজালিয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, এখানে লুকোচুরি করে রাতের বেলায় ঢালাই দেওয়া হয়েছে এবং সিমেন্ট কম দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসী আমাকে জানিয়েছেন, ১০ কড়াই বালুতে মাত্র এক বস্তা সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৫ কড়াই বালুতে একটি সিমেন্ট দেওয়ার নিয়ম, যার কারণে সেতুটি ধসে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সেতুর কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে কাঠালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী বিপুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় স্রোতের কারণে সেতুটি ধসে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার জন্য বলা হয়েছে।’
এক বছর ধরে বন্ধ আছে ফয়রা মাদরাসা সেতুর কাজ
নলছিটি উপজেলার ফয়রা মাদরাসা খালের ওপর সেতুটির কাজ বন্ধ রয়েছে এক বছর ধরে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খালের দুই পাড়ের ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের। ৩ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা বরাদ্দে এ সেতুটি ২০২৩ সালের ২২ মে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখনো সেতুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। তবে কাজ না হলেও ইতোমধ্যে সেতুর প্রায় ১৮ শতাংশ বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আওয়ামী লীগ নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্সকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই এলজিইডি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এদিকে এ এলাকায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
এলাকাবাসী জানান, বিকল্প সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লোহার এঙ্গেলের সাঁকো ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের, যা জনদুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ফেলে রাখা নির্মাণাধীন সেতুর রডে মরিচা ধরেছে। পরে সেগুলো পরিষ্কার না করেই যদি ঢালাই দেওয়া হয়, তাতে সেতুর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
ফয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, সেতুটির কাজ ফেলে রাখার কারণে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারে না। সেতুটি না হওয়ায় মানুষ প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবীর আমার দেশকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। জেলা অফিস থেকে নিতে হবে।’ জেলা অফিসের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, ‘২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা। এখন সময় বাড়ানোর জন্য তাদের ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পুনরায় কাজের মেয়াদ বাড়াতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। তবে তা এখনো মঞ্জুর হয়নি। কাজ করার জন্য তাদেরও তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।’
আমুয়ায় কাজ শেষ না করেই অর্ধেক বিল উত্তোলন
কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াতের সড়কে নির্মাণাধীন সেতুটির কাজও ফেলে রেখেছে আওয়ামী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্তি কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কবির ব্রাদার্স। ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি হস্তান্তর করার কথা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। অথচ এখন পর্যন্ত কয়েকটি স্প্যান বসানো ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই অর্ধেক বিল তুলে নিয়ে গেছে। কবে এই সেতু হবে এখন তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এ বিষয়ে কাঠালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সুবীর সরকার বলেছেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করা হবে।’
বহাল আ.লীগ আমলের ১১ প্রকৌশলী
আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ও তাদের সময়ে যোগদান করা ১১ জন প্রকৌশলী, সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী ঝালকাঠিতে এখনো বহাল তবিয়তে। পূর্ব সম্পর্কের সূত্র ধরে পলাতক আওয়ামী ঠিকাদাররা এখনো এসব প্রকৌশলীর সহায়তায় এলজিইডির কাজ প্রভাবিত করছেন এবং বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন ঝালকাঠি জেলা অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সুবীর সরকার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনুপ কুমার সরকার ও লিটন চন্দ্র দত্ত, সদর উপজেলার এলজিইডি কার্যালয়ের উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লা হেল বাকী চৌধুরী, একই অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজওয়ান হাওলাদার, রাজাপুর অফিসের উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান খান, কাঠালিয়া এলজিইডি অফিসের উপজেলা প্রকৌশলী দিপুল কুমার বিশ্বাস, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান।
এছাড়া নলছিটি উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবির ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী রায়হান মুশফিক এবং জেলা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। এদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম সম্প্রতি একটি প্রকল্পের পিডি পদে ঢাকায় যোগদান করেছেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
উল্লিখিত কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের সময়ে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যোগদান করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে ঝালকাঠি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম সরকার আমার দেশকে বলেন, ‘কাঠালিয়ার ভেঙে যাওয়া সেতুটির ঠিকাদারকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে নতুন করে সেতু করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগে যে কাঠের পাটাতন দিয়ে কাজ করেছে সেটা বাদ দিয়ে স্টিলের পাত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নলছিটি ফয়রা মাদরাসা খালের সেতু কেন ফেলে রাখা হয়েছে, জানতে চেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আমুয়া সেতুর কাজ শুরু করার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব সেতু নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঝালকাঠিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে ভেঙে পড়েছে একটি নির্মাণাধীন সেতু। কোথাও কোথাও দিনের পর দিন কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদাররা। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এছাড়া দুর্নীতি ঢাকতে রাতের আঁধারে চলে সেতুর ঢালাইয়ের কাজ। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আবার টেন্ডার আহ্বান না করে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ ঠিকাদারসহ ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের মধ্যে।
অন্যদিকে এসব সেতুর কাজে পলাতক আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ঝালকাঠি এলজিইডির প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। এমনকি এসব আওয়ামী ঠিকাদাররা এখনো পরোক্ষভাবে বিভিন্ন টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বিএনপির কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদারকে সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নিচ্ছেন। এসব কাজে সহায়তা করছেন আওয়ামী লীগ আমলে যোগ দেওয়া প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী এবং উপসহকারী প্রকৌশলীরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ ফেলে রাখলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করে সেতু ধসে গেলেও সংশ্লিষ্ট এসও এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
ধসে গেছে কাঠালিয়ার নির্মাণাধীন সেতু
সম্প্রতি জেলার কাঠালিয়া উপজেলায় একটি নির্মাণাধীন গার্ডার সেতু ধসে পড়ায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের সোনার বাংলা বাজারের কাছের সেতুটি নির্মাণাধীন অবস্থায় ধসে যায়। ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির জন্য বরাদ্দ তিন ভাগের একভাগ বিল ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিসান এন্টারপ্রাইজ তুলে নিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার সঙ্গে তালগাছিয়া গ্রামের এই সংযোগ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে উপজেলা সদরে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। গ্রামের বিশ্বজিৎ ব্যাপারি আমার দেশকে বলেন, এখানে ১০ কড়াই বালুতে এক বস্তা সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে এবং ঢালাই দেওয়া হয়েছে সবার অগোচরে রাতের বেলায়, যার কারণে সেতুটি ধসে গেছে। একই এলাকার স্বপন খরাতি জানান, সেতুর পাইলিং সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। ইস্পাতের পাত না দিয়ে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া এলজিইডির প্রকৌশলীর তেমন কোনো তদারকি ছিল না। সোনার বাংলা স্কুলের শিক্ষক সুজন সিকদার বলেন, ‘এমনিতেই কাজ চলছিল ধীরগতিতে। এর মধ্যে আবার সেতুটি ভেঙে গেছে। এ কারণে দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেল। যেভাবে কাজ চলছে এটা কতটা ভালো হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও শৌলজালিয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, এখানে লুকোচুরি করে রাতের বেলায় ঢালাই দেওয়া হয়েছে এবং সিমেন্ট কম দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসী আমাকে জানিয়েছেন, ১০ কড়াই বালুতে মাত্র এক বস্তা সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৫ কড়াই বালুতে একটি সিমেন্ট দেওয়ার নিয়ম, যার কারণে সেতুটি ধসে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সেতুর কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে কাঠালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী বিপুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় স্রোতের কারণে সেতুটি ধসে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার জন্য বলা হয়েছে।’
এক বছর ধরে বন্ধ আছে ফয়রা মাদরাসা সেতুর কাজ
নলছিটি উপজেলার ফয়রা মাদরাসা খালের ওপর সেতুটির কাজ বন্ধ রয়েছে এক বছর ধরে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খালের দুই পাড়ের ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের। ৩ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা বরাদ্দে এ সেতুটি ২০২৩ সালের ২২ মে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখনো সেতুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। তবে কাজ না হলেও ইতোমধ্যে সেতুর প্রায় ১৮ শতাংশ বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আওয়ামী লীগ নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্সকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই এলজিইডি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এদিকে এ এলাকায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
এলাকাবাসী জানান, বিকল্প সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লোহার এঙ্গেলের সাঁকো ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের, যা জনদুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ফেলে রাখা নির্মাণাধীন সেতুর রডে মরিচা ধরেছে। পরে সেগুলো পরিষ্কার না করেই যদি ঢালাই দেওয়া হয়, তাতে সেতুর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
ফয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, সেতুটির কাজ ফেলে রাখার কারণে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারে না। সেতুটি না হওয়ায় মানুষ প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবীর আমার দেশকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। জেলা অফিস থেকে নিতে হবে।’ জেলা অফিসের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, ‘২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা। এখন সময় বাড়ানোর জন্য তাদের ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পুনরায় কাজের মেয়াদ বাড়াতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। তবে তা এখনো মঞ্জুর হয়নি। কাজ করার জন্য তাদেরও তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।’
আমুয়ায় কাজ শেষ না করেই অর্ধেক বিল উত্তোলন
কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াতের সড়কে নির্মাণাধীন সেতুটির কাজও ফেলে রেখেছে আওয়ামী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্তি কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কবির ব্রাদার্স। ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি হস্তান্তর করার কথা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। অথচ এখন পর্যন্ত কয়েকটি স্প্যান বসানো ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই অর্ধেক বিল তুলে নিয়ে গেছে। কবে এই সেতু হবে এখন তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এ বিষয়ে কাঠালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সুবীর সরকার বলেছেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করা হবে।’
বহাল আ.লীগ আমলের ১১ প্রকৌশলী
আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ও তাদের সময়ে যোগদান করা ১১ জন প্রকৌশলী, সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী ঝালকাঠিতে এখনো বহাল তবিয়তে। পূর্ব সম্পর্কের সূত্র ধরে পলাতক আওয়ামী ঠিকাদাররা এখনো এসব প্রকৌশলীর সহায়তায় এলজিইডির কাজ প্রভাবিত করছেন এবং বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন ঝালকাঠি জেলা অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সুবীর সরকার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনুপ কুমার সরকার ও লিটন চন্দ্র দত্ত, সদর উপজেলার এলজিইডি কার্যালয়ের উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লা হেল বাকী চৌধুরী, একই অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজওয়ান হাওলাদার, রাজাপুর অফিসের উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান খান, কাঠালিয়া এলজিইডি অফিসের উপজেলা প্রকৌশলী দিপুল কুমার বিশ্বাস, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান।
এছাড়া নলছিটি উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবির ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী রায়হান মুশফিক এবং জেলা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। এদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম সম্প্রতি একটি প্রকল্পের পিডি পদে ঢাকায় যোগদান করেছেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
উল্লিখিত কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের সময়ে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যোগদান করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে ঝালকাঠি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম সরকার আমার দেশকে বলেন, ‘কাঠালিয়ার ভেঙে যাওয়া সেতুটির ঠিকাদারকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে নতুন করে সেতু করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগে যে কাঠের পাটাতন দিয়ে কাজ করেছে সেটা বাদ দিয়ে স্টিলের পাত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নলছিটি ফয়রা মাদরাসা খালের সেতু কেন ফেলে রাখা হয়েছে, জানতে চেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আমুয়া সেতুর কাজ শুরু করার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব সেতু নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে জহিরুল ইসলাম মিঠু হত্যা মামলায় পলাতক দুই ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
৩২ মিনিট আগেপরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১১ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে শামসুদ্দিন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ৬৪১৪৬০। ১৯৩৯ থেকে শুরু করে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত পুরো ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে ছিলেন এ যোদ্ধা।
৩৯ মিনিট আগেচট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ভেতরে পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক সাবেক নেতা। ঘটনার পর তাকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আটক মো. রায়হান হাটহাজারি কলেজ শিবিরের সাবেক সভাপতি।
১ ঘণ্টা আগেসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেরা ইলিশ মাছ ধরতে আসে তা জানার পরই সাথে সাথে কোস্টগার্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা চাই দেশের মানুষ ইলিশ খাবে সাগরে যেন কেউ চুরি করে মাছ ধরতে না পারে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে