ঈদুল ফিতরের প্রথমদিনেই পতেঙ্গায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

মুহাম্মদ আজাদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৫, ২১: ০৬

৫ আগস্টের পর বছরের প্রথম ঈদ। মনের আনন্দে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ছুটি কাটাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্যে উপভোগ করতে হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় ভরপুরে সমুদ্র সৈকত। সোমবার বিকেলে নগরের এ সৈকতে ভিড় লক্ষ্য দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে তীরঘেঁষে এ সৈকত ভ্রমণপিপাসুদের বেশ আকর্ষণীয় স্থান। কোনো বড় উৎস ছাড়াও সূর্যাস্ততে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে প্রায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড় জমে যায় সৈকতজুড়ে। বিকেল সৈকতের ওয়াকওয়েতে হাঁটাহাঁটি, সমুদ্রের বিশুদ্ধ বাতাস, সাগরের জোয়ার ভাটায় অসাধারণ দৃশ্য, পাখির কলরব, কিশোর-কিশোরীর হাতে শামুক-ঝিনুকের মালা কেনাবেচা—সব আয়োজনে মুখর এক অভিন্ন পরিবেশ।

এছাড়া, সৈকতে এসে সাগরে খুবই কম টাকায় স্পিডবোট, ঘোড়া ও ওয়াকওয়েতে শিশু ও কিশোর-কিশোরীর পর্যটকবাহী মোটরযান ‘বিচ বাইক’ এর চড়ার দৃশ্যও চোখে পড়বে। সৌন্দর্যের বড় আকর্ষণ আউটার রিং রোড সড়ক। পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কটি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে যোগ করে ভ্রমণপিপাসুদের।

নগরের বেশির ভাগ বিনোদন কেন্দ্রগুলো পরিধি ছোট পরিসরে। নেই খোলা জায়গা। এসব চিন্তা করে শহরের বেশির ভাগ দর্শনার্থীদের পছন্দনীয় স্থান হিসেবে রয়েছে এই সৈকত। সমুদ্রের পাড়ে বসে আড্ডা দেওয়া যায়। সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।

দুই ছেলে ও তার স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্রে পাড়ে বেড়াতে আসছেন ব্যাংকার আহমেদ পাবেল। চাইলে তিনি জানান, চট্টগ্রাম নগরের খুব বেশি পর্যটন কেন্দ্র নেই। পর্যাপ্ত খোলা জায়গাও নেই। ভালো মানের সবুজে ঘেরা পার্কের অভাব রয়েছে। তাই তাদের প্রথম পছনের স্থান হচ্ছে পতেঙ্গার সৈকত। সৈকতের উপভোগ অন্যরকম আনন্দ। তাই প্রতিবছর ছুটির দিনে বেড়াতে আসা হয়।

সিইপিজেডে কারখানায় কাজ করেন আশরাফুল আমিন। জানতে চাইলে তিনি আমার দেশকে বলেন, এবার ঈদের লম্বা ছুটি। তাই পরিবার নিয়ে সৈকতে বেড়াতে এসেছি। খোলা জায়গা ও আর বঙ্গোপসাগরের ঢেউ দেখতে ছুটি পেলে এখানে আসা হয়।

কর্ণফুলী ইপিজেডের কারখানায় কাজ করেন সালাম সিকদার। পরিবার নিয়ে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে এসেছেন। জানতে চাইলে তিনি জানান, তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে প্রতিবছর সৈকতে আসেন। সমুদ্রের বাতাস ও ঢেউ দেখতে মেয়ের খুবই ভাল লাগে। সৈকতে ঢুকার কোনো ফি দিতে হয় না। ইচ্ছে মত ঘোরাঘুরি করা যায়। এ কারণে এখানে আসা হয়।

ইপিজেডের বে-শপিং সেন্টারে কাপড়ের দোকানে চাকরি করছেন, মোল্লা হাসেম, রবিউল আলম ও আইয়ুব খান। তারা জানান, ঈদের ছুটিতে দুই বন্ধু ঘুরতে বেরিয়েছিলেন ঈদের নামাযের পর। প্রথমে গিয়েছিলেন ফয়’স লেকে, পরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। সেখান থেকে চলে আসেন সৈকতে আসলাম। এখানে আসলে খুবই ভাল লাগে। তাই প্রতিবছর এখানে আসা হয়।

পতেঙ্গা ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন আমার দেশকে বলেন, ঈদের প্রথমদিনে অন্তত চল্লিশ হাজারের মতো দর্শনার্থী আগমন ঘটেছে এই সৈকতে। পতেঙ্গা সুমদ্র সৈকতে দু’স্তরের নিরাপত্তা জোরদারে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা প্রস্তুতি নেয়া রয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম রিজিয়নের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক আমার দেশকে বলেন, সৈকতে ঈদের প্রথমদিনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল বেশ লক্ষনীয়। দুপরের পর থেকে তাদের চাপ বাড়তে থাকে। ঈদের আগে ও পরের পাঁচদিন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে পতেঙ্গার পুলিশের পক্ষ থেকেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা ও আনন্দ উপভোগ তার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে— যোগ করেন এই কর্মকর্তা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত