রানি ময়নামতি প্রাসাদের সীমানা ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ি

মোহাম্মদ শাহ্ আলম শফি, কুমিল্লা (দক্ষিণ)
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৫২

কুমিল্লার ঐতিহাসিক লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের সর্বোত্তরের প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ রানী ময়নামতি প্রাসাদের সীমানা প্রাচীর ভেঙে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চললেও কার্যত বাড়ি নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি।

জানা গেছে, লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের সবচেয়ে উত্তরে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নে অবস্থিত রানী ময়নামতি প্রাসাদ। এই প্রাসাদ এলাকাটি একেবারেই উন্মুক্ত। চতুর্দিক থেকে মানুষ এই স্থানটিতে প্রবেশ করতে পারে। ভ্রমণপিপাসু কিছু মানুষ ঘুরতে এলেও দিনেরবেলা গরু-ছাগল আর সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের রমরমা আড্ডা বসে এখানে। মাদকাসক্তদের ভিড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকাটি হয়ে পড়েছে অরক্ষিত। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ময়নামতি রানী প্রাসাদ এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ দক্ষিণ কোরিয়ার একটি দলের সঙ্গে খনন কাজ করেছিল। সে সময় এই স্থানটিতে অষ্টম শতাব্দির একটি গোপন সুরঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছিল। ঐতিহাসিক রানীর বাংলোর চারপাশ ঘিরে ছিল হাজার বছরের পুরোনো বৈশাখী মেলার উৎসব। প্রতি বছর বৈশাখের ৭ তারিখ এখানে মেলা বসত। ময়নামতি রানী প্রাসাদ এলাকায় সর্বমোট চার দফা খনন কাজ হয়েছিল। এর আগে ২০১৫-১৬, ১৯৮৮ ও ১৯৬৮ সালে এই স্থানে খনন কাজ হয়েছিল। আবিষ্কৃত হয়েছিল মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈষজপত্র, হাড়ি-পাতিল, কৃষানি, লাঙল, পেরেক ইত্যাদি। বর্তমানে মূল ঢিবি অরক্ষিত থাকায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীসহ স্থানীয়দের পদভারে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এই প্রাসাদ এলাকার অবস্থা তখন তিনজন অস্থায়ী কর্মচারী দিনেরবেলা পরিচর্যাসহ দেখভাল করলেও রাতে একেবারেই অরক্ষিত। আর এই প্রাসাদ সংশ্লিষ্ট এলাকার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রথম যুগের মূল সীমানা প্রাচীর ভেঙে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে।

সূত্র জানায়, আ.লীগ সরকার পতনের পর রানী প্রাসাদের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে স্থানীয় হাকিম আলী নামের এক ব্যক্তি বাড়ির ভিত্তিপ্রস্তরের কাজ শুরু করে। একসময় সেখানে মোটা সীমানা প্রাচীরের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। তখন পাহাড়ের অংশবিশেষ কেটে বাড়ি তৈরির কাজ চালিয়ে যায়। এক সময় সেটা জানাজানি হলে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার আঞ্চলিক পরিচালকসহ একটি দল সেখানে গেলেও অতিবৃষ্টির জন্য পরিদর্শন না করেই ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে ইঞ্জিনিয়ার রিফাত, ভান্ডাররক্ষক জাহাঙ্গীর বাধা দেয়। সেটাও না শোনায় বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনারে (ভূমি) সহযোগিতায় স্থানীয় দেবপুর ফাঁড়ির এসআই মঞ্জুর এসে বাড়ি নির্মাণে বাধা দেয়। এরপরও থেমে নেই বাড়ি নির্মাণকাজ। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগ ও কুমিল্লার আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, এ ব্যাপারে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়:

কুমিল্লা
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত