জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে কাজ করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
অথচ যে কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে জেলায় অবরোধ চলছে, এ রকম কোনো ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। মেডিকেল রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জনের অফিস থেকে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের সরাসরি স্বীকার না করলেও কার্যালয়ের একজন তদন্ত কর্মকর্তা আমার দেশকে নিশ্চিত করেন, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, আমরা তিন সদ্যদের কমিটি ইতোমধ্যে রিপোর্ট তৈরি করে রেখেছি। এটি এসপিকে আজ জমা দেওয়া হবে। বিস্তারিত আপনারা সেখান থেকে জানতে পারবেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনা তুলে ছয়দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাহাড়িদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করছে ইউপিডিএফ। গত রোববার রাতেও রাঙামাটির গুইমারা এলাকায় ইউপিডিএফ গুলি ছুড়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ গোষ্ঠী ভারতের ত্রিপুরায় অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে খাগড়াছড়িতে গিয়ে হামলা করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সেদিকে ইঙ্গিত করেই গতকাল বলেছেন, খাগড়াছড়ির ঘটনায় প্রতিবেশী দেশ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইন্ধন রয়েছে।
বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের বড় উৎস হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সীমান্তকে চিহ্নিত করে আসছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা তথ্যমতে, ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায় নিয়মিতভাবে ছোটবড় অস্ত্রের চালান ঢুকছে। এসব অস্ত্রের বড় অংশ চলে যাচ্ছে পাহাড়ি এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে। এ গোষ্ঠী ভারতের ইন্ধনে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করছে।
ইউপিডিএফের বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন, সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা, সহসভাপতি উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, নতুন কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সচিব চাকমা। ইউপিডিএফের আবার তিনটি শাখাÑপাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল ওমেনস ফেডারেশন ও ডিমোক্রেটিক ইয়ুথ ফোরাম। এগুলোর নেতৃত্বে আছেন ইউপিডিএফের এক হাজার ২০০ সদস্য। এর মধ্যে সশস্ত্র সদস্যের সংখ্যা ৩৭০ থেকে ৪২০ জন।
নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, খাগড়াছড়িতে তাদের ১৫টি গ্রুপ রয়েছে। যারা অস্থায়ীভাবে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে থাকছেন। তবে তাদের স্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে ভারতের মিজোরামে। মিজোরামে ছয়টি ক্যাম্পের খবর পেয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ ক্যাম্পগুলো থেকেই বাংলাদেশে এসে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ।
প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ দিচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’
গত এক বছরে অভিযানে ইউপিডিএফের অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তারা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, ভারতের মিজোরামে ছয়টি ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ থেকে তরুণ পাহাড়িদের দলে ভিড়িয়ে মিজোরামে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর বাংলাদেশে পাঠানো হয় হামলার জন্য। এদের থেকে বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে বেশির ভাগই রাশিয়ান তৈরি। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছেÑএসএমজি, একে ৪৭, এলএমজি। এসব অস্ত্র সেকেন্ড হ্যান্ডের। সম্প্রতি আটক হওয়া চারজন ইউপিডিএফ সদস্যে এ কথা স্বীকার করেন। তারা জানিয়েছেন তাদের প্রশিক্ষণে হিন্দি ভাষাভাষী লোকজন আসতেন। তাদের নির্দেশনা দিতে খাগড়াছড়িতে অভিযানে যান।
কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুট : গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তের ছোট বাজার যেমনÑআশুগঞ্জ ও কসবা হয়ে ঢুকছে দেশি মোড়কের বন্দুক ও পিস্তল। স্থানীয় সিন্ডিকেটগুলো এখানকার ব্যবসায়ীদের আড়ালে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে ভারতীয় কারিগর ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে। কাগজকলমে ‘স্থানীয় কোনো ঘটনা’ দেখালেই এ রুট কৌশলগতভাবে কাজে নামায়। চালান ছোট করে, বাজার বিস্তারে ছড়িয়ে দিয়ে নজর এড়ায়।
ফেনী-চট্টগ্রাম রুট : এখানে কেবল দেশি নয়, আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র প্রবাহের ইঙ্গিত মেলে। গোয়েন্দা সূত্র বলে ত্রিপুরার পথ পেরিয়ে এলে একে ৪৭, এম ১৬ ধরনের রাইফেলও পাওয়া গেছে। এ রুটের পেছনে পেশাদার চেইন কাজ করেÑট্রান্সপোর্টার, ব্রোকার এবং সীমান্তপাড়ের হাত ও লোকজন জড়িত।
বান্দরবান-কক্সবাজার রুট : পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য নির্মিত সরবরাহের প্রধান নালিÑভারত থেকে মিজোরাম হয়ে মিয়ানমারের পাহাড় ঘুরে এসব অস্ত্র পৌঁছে। এখানে আসা চালানগুলো প্রায়ই পাহাড়ি গোষ্ঠীর চাহিদাভিত্তিক; প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম ও লাইট ওয়েট রাইফেলগুলো পাহাড়ে পৌঁছে। এলাকাভিত্তিক লোকাল নেটওয়ার্ক ও দূরবর্তী কনভয় ব্যবস্থার কারণে এ রুটটি নজর এড়াতে সবচেয়ে কার্যকর। প্রত্যেক রুটের পেছনে শক্তহাতে কাজ করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তারা কেবল চালান পার করাচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন ও বাজার ব্যবস্থাকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে কৌশলও জানে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্রের ৬৩ শতাংশ ভারত থেকে আসা। সীমান্ত দিয়ে ঢোকার পর অস্ত্র প্রথমে লুকানো হয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীর গ্রামীণ এলাকায়। এরপর স্থানীয় দালালরা ট্রাক বা মাইক্রোবাসের ভেতরে মালামালের নিচে রেখে পাঠায় পার্বত্য অঞ্চলে। অনেক সময় সরাসরি মিজোরাম থেকে ইউপিডিএফ সদস্যরা নিয়ে আসেন সীমান্তে। ২০০৯ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত ইউপিডিএফের ৬১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করা মেজর পর্যায়ে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে ইউপিডিএফ দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে ভারত। অস্ত্র সরবরাহ, প্রশিক্ষণ সবই তারা দিচ্ছে। আমাদের হাতে এরকম পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করছি না। তবে নজরদারি রয়েছে। বড় কিছু করতে পারবে না।
এক বছরে ৩৫২ কোটি টাকা চাঁদা
পাহাড়ের সন্ত্রাসীগ্রুপগুলো গত এক বছরে ৩৩২ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এর মধ্যে ইউপিডিএফ তুলেছে ১০৪ কোটি টাকা। চাঁদা নেওয়ার তালিকা রয়েছে, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, কৃষি, যানবাহন, ঠিকাদার, কাঠ, বাঁশ ও অপহরণ। এর মধ্যে সশস্ত্র গ্রুপগুলো রাঙামাটি জেলা থেকে ২৪৪ কোটি, খাগড়াছড়ি থেকে ৮৬ কোটি ও বান্দরবান ২০ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি থেকে ইউপিডিএফ চাঁদা তুলেছে ১০৪ কোটি টাকা।
৩৩২ জন অপহরণ, ৮৯ জনকে হত্যা ইউপিডিএফের
শুধু চাঁদা নয়, অপহরণ ও হত্যার সঙ্গেও জড়িত ইউপিডিএফ। ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৩৩২ জনকে অপহরণ করেছে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। এর মধ্যে পাহাড়িও আছে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে অপহরণ করার ঘটনা ঘটে। তাদের হাতে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮৯ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে উপজাতি ও সেনা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন ১৬ জন।
সার্বিক বিষয়ে আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, ধর্ষণসহ যে কোনো ধরনের অপরাধের প্রচলিত আইনে বিচার হবে। যে কোনো ঘটনার সত্যাসত্য নিরূপণ করা পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী হঠাও স্লোগান তোলা এবং এ নিয়ে আন্দোলন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে কাজ করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
অথচ যে কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে জেলায় অবরোধ চলছে, এ রকম কোনো ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। মেডিকেল রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জনের অফিস থেকে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের সরাসরি স্বীকার না করলেও কার্যালয়ের একজন তদন্ত কর্মকর্তা আমার দেশকে নিশ্চিত করেন, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, আমরা তিন সদ্যদের কমিটি ইতোমধ্যে রিপোর্ট তৈরি করে রেখেছি। এটি এসপিকে আজ জমা দেওয়া হবে। বিস্তারিত আপনারা সেখান থেকে জানতে পারবেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনা তুলে ছয়দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাহাড়িদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করছে ইউপিডিএফ। গত রোববার রাতেও রাঙামাটির গুইমারা এলাকায় ইউপিডিএফ গুলি ছুড়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ গোষ্ঠী ভারতের ত্রিপুরায় অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে খাগড়াছড়িতে গিয়ে হামলা করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সেদিকে ইঙ্গিত করেই গতকাল বলেছেন, খাগড়াছড়ির ঘটনায় প্রতিবেশী দেশ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইন্ধন রয়েছে।
বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের বড় উৎস হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সীমান্তকে চিহ্নিত করে আসছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা তথ্যমতে, ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায় নিয়মিতভাবে ছোটবড় অস্ত্রের চালান ঢুকছে। এসব অস্ত্রের বড় অংশ চলে যাচ্ছে পাহাড়ি এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে। এ গোষ্ঠী ভারতের ইন্ধনে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করছে।
ইউপিডিএফের বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন, সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা, সহসভাপতি উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, নতুন কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সচিব চাকমা। ইউপিডিএফের আবার তিনটি শাখাÑপাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল ওমেনস ফেডারেশন ও ডিমোক্রেটিক ইয়ুথ ফোরাম। এগুলোর নেতৃত্বে আছেন ইউপিডিএফের এক হাজার ২০০ সদস্য। এর মধ্যে সশস্ত্র সদস্যের সংখ্যা ৩৭০ থেকে ৪২০ জন।
নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, খাগড়াছড়িতে তাদের ১৫টি গ্রুপ রয়েছে। যারা অস্থায়ীভাবে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে থাকছেন। তবে তাদের স্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে ভারতের মিজোরামে। মিজোরামে ছয়টি ক্যাম্পের খবর পেয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ ক্যাম্পগুলো থেকেই বাংলাদেশে এসে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ।
প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ দিচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’
গত এক বছরে অভিযানে ইউপিডিএফের অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তারা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, ভারতের মিজোরামে ছয়টি ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ থেকে তরুণ পাহাড়িদের দলে ভিড়িয়ে মিজোরামে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর বাংলাদেশে পাঠানো হয় হামলার জন্য। এদের থেকে বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে বেশির ভাগই রাশিয়ান তৈরি। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছেÑএসএমজি, একে ৪৭, এলএমজি। এসব অস্ত্র সেকেন্ড হ্যান্ডের। সম্প্রতি আটক হওয়া চারজন ইউপিডিএফ সদস্যে এ কথা স্বীকার করেন। তারা জানিয়েছেন তাদের প্রশিক্ষণে হিন্দি ভাষাভাষী লোকজন আসতেন। তাদের নির্দেশনা দিতে খাগড়াছড়িতে অভিযানে যান।
কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুট : গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তের ছোট বাজার যেমনÑআশুগঞ্জ ও কসবা হয়ে ঢুকছে দেশি মোড়কের বন্দুক ও পিস্তল। স্থানীয় সিন্ডিকেটগুলো এখানকার ব্যবসায়ীদের আড়ালে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে ভারতীয় কারিগর ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে। কাগজকলমে ‘স্থানীয় কোনো ঘটনা’ দেখালেই এ রুট কৌশলগতভাবে কাজে নামায়। চালান ছোট করে, বাজার বিস্তারে ছড়িয়ে দিয়ে নজর এড়ায়।
ফেনী-চট্টগ্রাম রুট : এখানে কেবল দেশি নয়, আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র প্রবাহের ইঙ্গিত মেলে। গোয়েন্দা সূত্র বলে ত্রিপুরার পথ পেরিয়ে এলে একে ৪৭, এম ১৬ ধরনের রাইফেলও পাওয়া গেছে। এ রুটের পেছনে পেশাদার চেইন কাজ করেÑট্রান্সপোর্টার, ব্রোকার এবং সীমান্তপাড়ের হাত ও লোকজন জড়িত।
বান্দরবান-কক্সবাজার রুট : পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য নির্মিত সরবরাহের প্রধান নালিÑভারত থেকে মিজোরাম হয়ে মিয়ানমারের পাহাড় ঘুরে এসব অস্ত্র পৌঁছে। এখানে আসা চালানগুলো প্রায়ই পাহাড়ি গোষ্ঠীর চাহিদাভিত্তিক; প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম ও লাইট ওয়েট রাইফেলগুলো পাহাড়ে পৌঁছে। এলাকাভিত্তিক লোকাল নেটওয়ার্ক ও দূরবর্তী কনভয় ব্যবস্থার কারণে এ রুটটি নজর এড়াতে সবচেয়ে কার্যকর। প্রত্যেক রুটের পেছনে শক্তহাতে কাজ করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তারা কেবল চালান পার করাচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন ও বাজার ব্যবস্থাকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে কৌশলও জানে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্রের ৬৩ শতাংশ ভারত থেকে আসা। সীমান্ত দিয়ে ঢোকার পর অস্ত্র প্রথমে লুকানো হয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীর গ্রামীণ এলাকায়। এরপর স্থানীয় দালালরা ট্রাক বা মাইক্রোবাসের ভেতরে মালামালের নিচে রেখে পাঠায় পার্বত্য অঞ্চলে। অনেক সময় সরাসরি মিজোরাম থেকে ইউপিডিএফ সদস্যরা নিয়ে আসেন সীমান্তে। ২০০৯ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত ইউপিডিএফের ৬১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করা মেজর পর্যায়ে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে ইউপিডিএফ দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে ভারত। অস্ত্র সরবরাহ, প্রশিক্ষণ সবই তারা দিচ্ছে। আমাদের হাতে এরকম পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করছি না। তবে নজরদারি রয়েছে। বড় কিছু করতে পারবে না।
এক বছরে ৩৫২ কোটি টাকা চাঁদা
পাহাড়ের সন্ত্রাসীগ্রুপগুলো গত এক বছরে ৩৩২ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এর মধ্যে ইউপিডিএফ তুলেছে ১০৪ কোটি টাকা। চাঁদা নেওয়ার তালিকা রয়েছে, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, কৃষি, যানবাহন, ঠিকাদার, কাঠ, বাঁশ ও অপহরণ। এর মধ্যে সশস্ত্র গ্রুপগুলো রাঙামাটি জেলা থেকে ২৪৪ কোটি, খাগড়াছড়ি থেকে ৮৬ কোটি ও বান্দরবান ২০ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি থেকে ইউপিডিএফ চাঁদা তুলেছে ১০৪ কোটি টাকা।
৩৩২ জন অপহরণ, ৮৯ জনকে হত্যা ইউপিডিএফের
শুধু চাঁদা নয়, অপহরণ ও হত্যার সঙ্গেও জড়িত ইউপিডিএফ। ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৩৩২ জনকে অপহরণ করেছে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। এর মধ্যে পাহাড়িও আছে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে অপহরণ করার ঘটনা ঘটে। তাদের হাতে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮৯ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে উপজাতি ও সেনা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন ১৬ জন।
সার্বিক বিষয়ে আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, ধর্ষণসহ যে কোনো ধরনের অপরাধের প্রচলিত আইনে বিচার হবে। যে কোনো ঘটনার সত্যাসত্য নিরূপণ করা পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী হঠাও স্লোগান তোলা এবং এ নিয়ে আন্দোলন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নিখোঁজ মুফতি মুহিবুল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ জানান, তিনি জুমার নামাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন ইসকন নিয়ে বয়ান করে ছিলেন। এরপর থেকে তাকে হুমকি দিয়ে বেশ কয়েকটি উড়ো চিঠি দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি বিষয়টি নিয়ে মসজিদ কমিটির সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে বুধবার সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
২৫ মিনিট আগেগাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালীতে নদী শাসন ও ভাঙনরোধ প্রকল্পের কাজে বাধার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। বুধবার বিকেলে যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় নদীপাড়ের মানুষ এ মানববন্ধন করে।
৪৪ মিনিট আগেস্থানীয়রা জানান, আলমাস উপজেলার ৩ নম্বর চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে। জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) সুইরঘাট বিওপির চার বিজিবি সদস্য দুটি মোটরসাইকেলযোগে চোরাইপণ্যবাহী একটি পিকআপকে ধাওয়া করেন। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে আলমাস গুলিবিদ্ধ হন।
২ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হলে বর্তমান সরকার আর কোনো প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারবে না। সে কারণে দ্রুত পিডি নিয়োগ করে নভেম্বরেই কাজ শুরু করতে হবে। সেটি করা না হলে সারা দেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে চীন টাকা না দিলেও নিজের টাকা দিয়ে কাজ শুরুর দাবি জানান তারা।
৩ ঘণ্টা আগে