ঋণগ্রহীতাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার, হাসপাতালে মৃত্যু

উপজেলা প্রতিনিধি, হাতিয়া (নোয়াখালী)
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ০৫

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ওছখালি এলাকায় ‘হীড বাংলাদেশ’ এনজিও অফিস থেকে শংকর সাহা (৪০) নামে এক ঋণগ্রহীতাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার পর মারা গেছেন। স্বজনদের অভিযোগ, ওই এনজিও অফিসের লোকজন শংকরকে ঋণ না দিয়ে উল্টো তাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে এনজিও কর্তৃপক্ষ বলছেন, তিনি অফিসে যাওয়ার আগেই বিষ পান করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার রাত ৮টার দিকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শংকরের লাশ উদ্ধার করে হাতিয়া থানা পুলিশ। শংকর সাহা হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শশী চন্দ্র সাহার ছেলে। তিনি দুই ছেলের জনক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিনমজুর শংকর সাহা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ৮-৯ মাস আগে ‘হীড বাংলাদেশ’ এনজিও’র ওছখালি শাখা থেকে শতকরা সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে ২ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণ গ্রহণের সময় এনজিও থেকে জানানো হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করলে পুনরায় তাকে ২ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হবে।

মৃত শংকরের স্ত্রী রিংকু সাহা অভিযোগ করে বলেন, এনজিও থেকে নেয়া ২ লাখ টাকা পরিশোধের পর সোমবার বিকাল ৪টার দিকে পুনরায় ঋণের জন্য যায় শংকর। এর আগেও দুদিন গিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছিলেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শংকর আমাকে মোবাইলে জানায় হীড অফিসাররা ঋণ দেবে না। বিষয়টি নিয়ে তারা তাকে অপমানমূলক কথা বলছে। এরপর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অফিসের একটি মোবাইল থেকে আমার ছেলে হৃদয় সাহাকে জানানো হয় শংকর বিষ পান করেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, এনজিও অফিসাররা ঋণ না দিয়ে উল্টো শংকরকে অপমান ও মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে। সবশেষ তারা অফিসে যাওয়ার পর শংকরকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন।

হীড বাংলাদেশ ওছখালি শাখার এরিয়া ম্যানেজার অলক কুমার হালদার জানান, শংকর ১১ কিস্তিতে দুই লাখ টাকা ঋণ নেয়ার পর দশ মাসের কিস্তি পরিশোধ করেছিলো। আগামী অক্টোবর মাসে ২০ হাজার টাকা কিস্তি বাকি ছিল। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে সে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারতো না। কয়েক দিন আগে তার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় পরিচয়ে এক লোক আমাদের ফিল্ড কর্মকর্তাকে জানান শংকরকে যেন নতুন করে ঋণ না দেয়া হয়। কারণ সে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। তবে ওই ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন রাখেন।

অভিযোগের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, শংকর অফিসে আসার আগে বিষ পান করে এসেছেন। অফিসে আসার আধা ঘন্টা পর সে আমার বাথরুমে গিয়ে বমি করতে শুরু করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমাদের অফিস থেকে তাকে বিষ প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওমর ফারুক বলেন, হাসপাতালে আনার পর তার পেট থেকে বিষ বের করা হয়েছিল। পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তুতিকালে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মারা যান। ইঁদুরের ওষুধ বা কীটনাশক সেবনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে বোঝা গেছে।

হাতিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে লাশ প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত