বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে তরুণীকে অপহরণের পর ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৯

প্রেমিক ইয়াসিন আরাফাতের বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তাহেরা ইয়াসমিন (ছদ্মনাম)। তিনি ২৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে টমটমে প্রেমিকের বাড়ির দিকে রওয়ানা করেছিলেন। মাত্র আধাঘন্টার মধ্যেই তিনি অপহরণকারি চক্রের শিকার হন।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারের সীমান্ত জনপদ টেকনাফের সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়া পাড়ার শিলবুনিয়া পাড়া জামে মসজিদের সামনে থেকেই ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারি চক্র। পরে একটি ঘরে আটকে রেখে ধর্ষণ করে।

অপহরণকারি চক্রের সদস্যরা ওই তরুণীকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শবে কদর নামের এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই রোহিঙ্গা নারী তাহেরা ইয়াসমিনকে আরেক দফা বিক্রি করে দেয়ার জন্য কক্সবাজার শহরে নিয়ে আসছিল।

অপহরণের পর ঘরে আটকে রেখে গণধর্ষণ, পরে পাচারকারি চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়ার জন্য কক্সবাজার শহরে আনার খবর পেয়ে ০২ অক্টোবর র‌্যাব সদস্যরা শহরের কলাতলী ডলফিন মোড় এলাকা থেকে অপহরণের শিকার তরুণীকে উদ্ধার করে। ওই সময় রোহিঙ্গা নারী শবে কদর পালিয়ে যায়। পরদিন ০৩ অক্টোবর অপহরণ ও গণধর্ষণে জড়িত তিনজনকে টেকনাফ পৌরসভার ঈদগাঁহ মাঠ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গণধর্ষণ ও অপহরণকারি চক্রের সদস্য ওই তিনজন হলো রেজাউল করিম (২৮), এবাদুল হক (২৯) ও মো. আব্দুল গফুর (৩৬)।

কক্সবাজারে দায়িত্বরত র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও সহকারী পুলিশ সুপার আ. ম. ফারুক মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) গভীর রাতে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, অপহরণকারি চক্রের সদস্য রেজাউল করিম, এবাদুল হক, মো. রশিদ ও মো. সাইফুল ইসলাম ভিকটিম তাহেরা ইয়াসমিনকে (ছদ্মনাম) বহনকারি টমটমটি আটকিয়ে টমটম চালক মো. আব্দুর রহিম ও টমটমের অপরযাত্রী বেলাল হোসেনকে মারধর করে তাকে টেকনাফ পৌরসভার কুলালপাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের বসতঘরে নিয়ে আটকে রাখে এবং আটক রাখা অবস্থায় ৩০ অক্টোবর রাতে রেজাউল করিম, এবাদুল হক, মো. রশিদ ও মো. সাইফুল ইসলাম সেই তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

র‌্যাবের দেয়া তথ্যমতে, অপহরণকারি চক্রটি ভিকটিম তরুণীকে বিক্রি করে দেয়ার জন্য টমটম চালক আব্দুল গফুরের নিকট বুঝিয়ে দেয়। আব্দুল গফুর তাকে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে জোরপূর্বক আটকে রাখে। পরে পহেলা নভেম্বর রাত ১০টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা ২৬ নম্বর ক্যাম্পের ডি/১ ব্লকের শবে কদর নামের রোহিঙ্গা নারীর কাছে সেই তরুণীকে বিক্রি করে দেয়। শবে কদরও ভিকটিমকে তার বসতঘরে জোরপূর্বক আটকে রাখে।

র‌্যাবের দাবি, ওই তরুণীর পরিবার তাকে খুঁজে না পেয়ে ৩০ অক্টোবর টেকনাফ সদর মডেল থানায় নিখোঁজ বিষয়ে জিডি করে এবং ওই জিডির কপিসহ র‌্যাব ক্যাম্পে এসে সহযোগিতা কামনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়ন সদর ও টেকনাফ ক্যাম্পের যৌথ আভিযানিক দল ভিক্টিমকে উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।

র‌্যাব সূত্র মতে, যৌথ আভিযানিক দল ০২ নভেম্বর গোপন সূত্রে জানতে পারে, রোহিঙ্গা নারী শবে কদর ভিকটিমকে বিক্রির জন্য কক্সবাজার নিয়ে যাচ্ছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি রাতেই অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলী ডলফিন মোড় এলাকা থেকে তাহেরা ইয়াসমিনকে (ছদ্মনাম) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

পরদিন ০৩ নভেম্বর দুপুরে টেকনাফ পৌরসভার ঈদগাঁহ মাঠ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণকারি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত