আওয়ামী নাশকতার অন্যতম হটস্পট কুমিল্লার নাঙ্গলকোট। কার্যক্রম নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদী দলটির নেতাকর্মীরা শক্তির জানান দিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাঝে মধ্যে আয়োজন করছে মিছিলসহ সরকারবিরোধী ও ভীতি প্রদর্শনকারী বিভিন্ন কর্মসূচি। ধাওয়া দিয়ে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করলে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের। এসব অপকর্মে অর্থ ঢালছেন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশিদের নাম।
গত ১৭ নভেম্বর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে নাঙ্গলকোটের বেশ কয়েকটি স্থানে ঝটিকা মিছিল করে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। এ সময় সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। পরে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফজলুল হকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একটি মেসেজে বলা হয়েছে, ‘আপনি কখন ফ্রি থাকেন ওসি সাহেব। আমি আপনাকে চিনি। এজন্যই আপনাকে নক দেওয়ার কথা ছিল। আপনার খোঁজ করেছিল সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন সাহেব। আমাকে বলছে আপনার সঙ্গে কথা বলবে, এজন্যই আপনাকে নক দেওয়া । আপনি কখন ফ্রি থাকবেন, কল দিতাম আপনাকে ।’
এভাবেই ওসি ফজলুল হককে অব্যাহতভাবে বিরক্ত করা হচ্ছে দেশের বাইরের বিভিন্ন অপরিচিত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে। শুধু কল নয়, পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমন বেশকিছু তথ্য আমার দেশ-এর কাছে সংরক্ষিত আছে। জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, তাদের চিহ্নিত করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ হুমকিই আসছে দেশের বাইরে থেকে ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-লালমাই) আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থ এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামালের নির্দেশে কুমিল্লা-নোয়াখালী এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ঝটিকা মিছিল করছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা । স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও অর্থের লোভ দেখিয়ে রাস্তায় নামাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। অর্থায়ন করছেন নাফিসা কামাল। এমনকি মিছিলে গিয়ে কেউ গ্রেপ্তার হলে তার পরিবারের ব্যয়ভার বহন করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
নাঙ্গলকোট যেন দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ
উপজেলার ঢালুয়ার অধিকাংশ বাসিন্দা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। এখানে ফ্যাসিবাদী দলটির এমপি ছিলেন জয়নাল আবদিন। তার মাধ্যমেই এখানে আওয়ামী লীগের প্রভাব তৈরি হয়। সেই থেকে ঢালুয়ার কারণে এই নাঙ্গলকোটকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ হিসেবে ডাকা হয় । উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বাসির এবং সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়া মিলে গোপনে সংগঠিত করছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের। তাদের বাড়িও ঢালুয়ায়। তারা নাফিসা কামালের নির্দেশেই এসব করছেন।
গত ১৭ নভেম্বর ঝটিকা মিছিল করার পর সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । এর মধ্যে ইমরান হোসেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী। এই বখাটেকে গ্রেপ্তারের পর পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য । উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক মিয়ার ছেলে ইমরান । নাফিসা কামালের নির্দেশে ইসহাক তার ছেলেকে দিয়ে গত এক মাসে দুবার মিছিল করান ।
ইমরানকে ছাড়ানোর জন্য মনগড়া প্রবেশপত্র এবং প্রত্যয়নপত্র দেন রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার। তিনি নিজেই ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দিয়ে এলাকায় অরাজকতার পরিকল্পনা করছেন । পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য দিয়েছে ইমরান।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢালুয়ার কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এর মধ্যে ইমরানের বাবা ইসহাক মিয়া অন্যতম। হাসিনার সঙ্গে তার বাবা ফোনে কথা বলেছেন—এটা নিয়ে ইমরান গর্ব করে বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প করত ।
নাঙ্গলকোট পৌর ছাত্রদলের কর্মী বেলাল হোসেন আমার দেশকে বলেন, ঢালুয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাডারদের আখড়া। তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন ও দেখভাল করছেন নাফিসা কামাল । ছাত্রলীগ ক্যাডারদের আশ্রয় দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা জামায়াতের আমির জামাল হোসেন বেনিক আমার দেশকে বলেন, কুমিল্লার ক্রাইম স্পট নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া। এখানে কিছুদিন পরপর আওয়ামী ক্যাডাররা মিছিল করছে। প্রশাসনকে আরো তৎপর হতে হবে।
নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফজলুল হক বলেন, ঢালুয়া থেকে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়। অর্থ আসে নাফিসা কামালের কাছ থেকে । নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের বড় নেতারা এলাকায় না থাকলেও গোপনে তারা টাকার বিনিময়ে কাজগুলো তরুণ-যুবকদের দিয়ে করান। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছি।
কুমিল্লার বিদায়ী পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, ‘আমরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করি। এ কারণে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে । আমরা নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করি না। যেসব নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বিদেশি। তাই শনাক্ত করা কঠিন।’


মার্কিন রাজনীতিতে ইহুদি লবির প্রভাব
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শঙ্কা