‘ভাত-পানি নিয়া খুবই কষ্টে আছি, কিস্তিওলা মানে না’

আমজাদ হোসেন আমু, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৪১
সেলিম মাঝির অপেক্ষায় পুরো পরিবার

বঙ্গোপসাগরের গভীরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবির ১৫ দিন পার হলেও খোঁজ মেলেনি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চার জেলের। তাদেরই একজন মো. মজিবুর রহমান সেলিম মাঝি। উপজেলার পাটোয়ারীর হাট ইউনিয়নের বোয়ালিয়া এলাকার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে তিনি। তার খোঁজে দিশেহারা এখন স্ত্রী শাহিনুর বেগম।

বিজ্ঞাপন

সংসারে শাহিনুর বেগমসহ ৫ ছেলে মো. রাকিব (২২), শাকিবুল ইসলাম (১৮), শিপন (১২), রাহাত(১০), শাওন (০৮) এবং ১ মেয়ে লিপি বেগম (১৬)।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁচা সড়ক ও খেতের মধ্যে টিনশেট বাড়ি। ঘরের সামনে স্যাঁতস্যাঁতে নালা ও পুকুর রয়েছে। পরিবারের লোকজন দিশেহারা এলোমেলো। কেউ সিঁড়িতে বসে রয়েছে, কেউ ঘরের চৌকিতে শুয়ে আছে।

এ সময় কথা হয় নিখোঁজ সেলিম মাঝির স্ত্রী শাহিনুর বেগমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, সেলিম মাঝি গত পনের দিন বাড়ি থেকে বের হইছে সাগরে মাছ ধরতে। হঠাৎ খবর পাই তিনি ট্রলারসহ নিখোঁজ। মাথায় আকাশ ভাইঙ্গা পড়ল। মানুষটা বুঝি আর আইবো না..! কোম্পানি টোগাইনা বিধায় পোলাপাইন পাঠাইছি। সাগরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ কইরা খুডার চর, রহিঙ্গার চরে খুঁজছি। কোথাও তারে পাই নাই। গত পনের দিন ছেলে-মেয়েদের নিয়া খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। ঘরের চুলায় আগুন দিতে পারি নাই। রান্না বন্ধ। পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছি। কিস্তি আছে ৪টা। কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। কিভাবে কিস্তি দিমু। ভাত-পানি নিয়া খুবই কষ্টে আছি। কিস্তিওলা মানে না। সোপিরেট-কোডেক-আশা এনজিওতে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং সুদের উপর ২ লাখ টাকা নিয়া নতুন বাড়ি বানছি। এখন মানুষটার দেখা পাইলে ভালো হইত।

তিনি আরও বলেন, সংসারে সবার ছোটো দুই ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। মেয়ে বিয়ে দিতে পারে নাই। বড় পোলাগো চাকুরি নাই। কেমনে সংসার চালামু। তার লাশও পাই নাই, জেতাও পাই নাই, কোন মুহূর্তে তার খবর নাই। আমি এহন পোলা-মাইয়া লইয়া বহুত কষ্টে আছি।

বড় ছেলে মো. রাকিব বলেন, সে চট্রগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় হোটেলে কাজ করে। তার বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে যেখানে ভোট ডুবেছে তার আশে-পাশে অনেক জায়গায় খোঁজ করেছে। তারে কোথাও পাননি। তার বাবা খুবই সাধাসিধে মানুষ। তিনি গত ৩বছর যাবত নদীতে মাছ ধরে। এর আগে ইটের ভাটা কাজ ও রিকসা চালাতেন। বোটে যাওয়া আগে তারে বলে গেছে। তবে আমি বাবারে নদীতে যাইতে না করেছি। নদী থেকে ওরা ১৩জন উঠেছে, আমার আব্বু ওঠে নাই। একটা লাশ পাইছিলাম। গিয়া দেখছি সেটা আমার বাবার না।

রোববার (১৯ জুলাই) গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যায় ১৭ জেলে ও মহাজন। গত ২৫ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টায় ফিরে আসার সময় মহেষখালীর পশ্চিমে গ্যাস পাম্পের দক্ষিণে সাগরের মাত্রাতিরিক্ত ঢেউ বা দমা বা লাহার কারণে কয়েক সেকেন্ডে বোট উল্টে ডুবি যায়। এসময় বিভিন্ন ভাবে ১৩ জন মাঝি ও জেলে উদ্ধার হলেও বোটসহ ৪ জন জেলে উদ্ধার হয়নি। তারা হলেন- মো. মজিবুর রহমান সেলিম মাঝি (৫০), মো.সোহেল মাঝি (২৫), মো.কামাল মাঝি (৪০), মো.দিদার মাঝি (৩৫)।

লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, জেলে নিখোঁজের বিষয়টি জানা নেই। তবে উপজেলা অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাহাত উজ জামান বলেন, জেলে নিখোঁজের তথ্য নেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদানসহ যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত