শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৩৫

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার চাঞ্চল্যকর শিশু মাহিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অভিযুক্ত মোহাম্মদ সোলেমানকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন ধারায় দুইবার যাবজ্জীবনসহ একাধিক মেয়াদের কারাদণ্ড এবং ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ওসমান গনি এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত সোলেমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. সোলেমান (২৮) টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার মৃত সৈয়দ করিমের ছেলে। মহেশখালীতে তিনি একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধারা ৭: ধর্ষণের অপরাধে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধারা ৮: হত্যার উদ্দেশে জখম করার অপরাধে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড।

পেনাল কোড, ১৮৬০-এর ধারা ২০১: মরদেহ গুম করার অপরাধে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধারা ৯ (২): ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, সব সাজা একসাথে কার্যকর হবে এবং জরিমানার সব টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে। যদি আসামির বর্তমান সম্পত্তি থেকে জরিমানা আদায় সম্ভব না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক হবেন তা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আদায় করা হবে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ছয় বছরের শিশু মাহিয়া স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সোলেমান তাকে কেক ও চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে নিজের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে নির্মমভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়। এরপরও সোলেমান ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

শিশুটির নিখোঁজের পর তার পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে পুলিশ তদন্তে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয় এবং শিশুর বাবা আয়াত উল্লাহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মীর মোশাররফ হোসেন টিটু জানান, মুক্তিপণের জন্য করা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর সোলেমানকে তার স্ত্রীসহ আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সোলেমানের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়। তিনি আরও বলেন, “এমন নৃশংস ঘটনার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই হতে পারে।” তিনি বিশ্বাস করেন, এই রায়ের ফলে সমাজে একটি বার্তা যাবে যে ভবিষ্যতে কেউ এমন নৃশংস অপরাধ করলে একই ধরনের শাস্তি হবে।

আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত শিশুটির বাবা আয়াত উল্লাহ বলেন, “নৃশংস এই ঘটনার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ।”

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত