চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কাস্টমসের স্ক্যানার তিন মাস ধরে বিকল

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ১৪
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ১৯

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি শেডে কাস্টমসের স্ক্যানার তিন মাস ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। সিভিল অ্যাভিয়েশনের একটি ছোট স্ক্যানার ধার করে স্বল্পপরিসরে স্ক্যানিংয়ের কাজ চালানো হলেও সেই মেশিনও নষ্ট হয়ে গেছে এক মাস আগে।

ফলে ব্যাগেজ রুলের আওতায় কী পণ্য আসছে, তার সঠিক কোনো তথ্য থাকছে না কাস্টমসে। এতে একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে পুরো বিমানবন্দর, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে প্যাসেঞ্জার লাগেজ আর এক্সপোর্ট কার্গো স্ক্যানিং করে সিভিল অ্যাভিয়েশন। আর বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের লাগেজ ও ইমপোর্ট কার্গো স্ক্যানিং করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সরাসরি রাজস্ব আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইমপোর্ট কার্গো শাখার স্ক্যানারগুলো। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্গো শেডে মোট চারটি স্ক্যানার মেশিন রয়েছে। যার দুটি সিভিল অ্যাভিয়েশন পরিচালনা করে আর দুটি কাস্টমসের মালিকানাধীন। এর মধ্যে কাস্টমসের স্ক্যানার দুটিই বড় আর গুরুত্বপূর্ণ।

কাস্টমসের একটি স্ক্যানার গত দুবছর ধরেই নষ্ট। আর একটি দিয়ে অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছিল এতদিন। গত ২৯ মে সেই স্ক্যানারটিও অচল হয়ে যায়। এতে আমদানি কার্গো খালাস প্রক্রিয়ায় নামে স্থবিরতা। সংকট নিরসনে বিমানবন্দর কাস্টমসের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার চপল কুমার চাকমা বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠি দিয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশনের একটি স্ক্যানার এক মাসের জন্য ব্যবহারের অনুমতি নেন। কিন্তু ১৭ জুলাই পর্যন্ত টানা ৪৭ দিন এক্সপোর্টের স্ক্যানার ব্যবহার করে ইমপোর্ট কার্গো হ্যান্ডলিং করে কাস্টমস। ১৭ জুলাই ওই স্ক্যানারটিও নষ্ট হয়ে যায়।

বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, সিভিল অ্যাভিয়েশনের স্ক্যানারগুলো কাস্টমসের স্ক্যানারের মতো বড় নয়। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে সক্ষমতার বেশি কার্গো স্ক্যানিং করতে গিয়ে ওই মেশিনটিও নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে কোনো স্ক্যানিং ছাড়াই পণ্য ডেলিভারি করছে কাস্টমস। এতে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে পুরো বিমানবন্দর। কারণ, স্ক্যানার ছাড়া কী পণ্য আসছেÑতার সঠিক কোনো তথ্য থাকছে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিংবা কাস্টমসের কাছে। ফলে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিদের পাশাপাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও সুযোগ নিতে পারে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহীদ উল্লাহ চৌধুরী।

তিনি জানান, বিমানবন্দরের স্ক্যানার মেশিন দেশের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কারণ, যারা অবৈধ পণ্য আনবে, তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই আনবে। দুই পক্ষের মাঝখানে যখন একটি মেশিন থাকবে, তখন অন্তত তথ্যটা হলেও রেকর্ড থাকবে। স্ক্যানার মেশিন অচল থাকলে সেই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার সুযোগও সহজ হবে। কারণ, সাধারণত মূল্যবান পণ্যই আকাশপথে আনা হয়। একইসঙ্গে প্রতিটি প্যাকেট খুলে চেক করতে যে সময় ব্যয় হবে, তাতে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, স্ক্যানার না থাকায় কারচুপি বা জালিয়াতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এছাড়া প্যাকেট কেটে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ায় নীতিমালার বিঘ্ন না ঘটলেও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি লংঘিত হচ্ছে। একটি পণ্য আগে যেখানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শুল্কায়ন শেষে ডেলিভারি করা সম্ভব হতো, এখন সেখানে কয়েকদিন পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এগুলো সচল করার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার প্রদীপ দাশ জানান, স্ক্যানার নষ্ট হলেও সিভিল অ্যাভিয়েশনের অন্য স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যানিং কাজ চালানো হচ্ছে। সেটা সম্ভব না হলে হাতে কেটে শতভাগ কায়িক পরীক্ষার মাধ্যমে শুল্কায়ন সম্পন্ন করেই পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। তল্লাশি ছাড়া কোনো পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে না। স্ক্যানার মেশিনগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির সংকটের সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত